মোঃ আলম মৃধাঃ
নরসিংদীর মাধবদীতে ১৭ বছরের এক কিশোরী অপহরণের ঘটনায় পরিবার যখন দিশেহারা, তখন মাধবদীর থানার ওসি নজরুল ইসলামের উদাসীনতা ও খারাপ ব্যবহারে ভুক্তভোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। অভিযোগ উঠেছে, ওসি শুরু থেকেই মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং বাদীর পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
.
ভুক্তভোগী কিশোরীর মা মোছা: আছমা বেগম জানান, তার মেয়ে নরসিংদী আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, গত ২৪ মার্চ কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ হয় কিশোরী। গদাইরচর ইসলাম সিএনজি পাম্পের সামনে থেকে স্থানীয় বখাটে নাসির হোসেন ও তার সহযোগীরা তাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
.
মেয়ের সন্ধান না পেয়ে আতঙ্কিত মা আছমা বেগম আত্মীয়স্বজনসহ থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের চেষ্টা করলে ওসি নজরুল ইসলাম মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু তাই নয়, থানায় উপস্থিত অ্যাডভোকেট রাসেলকে অপমানজনক ভাষায় অপদস্থ করেন তিনি। পরে অ্যাডভোকেট রাসেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফাঁসি চেয়ে একটি পোস্ট দিলে সেটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
.
ঘটনার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমনে তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার নরসিংদী জেলা পরিচালকের হস্তক্ষেপে পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নিজে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে দেখা করে ওসিকে মামলা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ওসি নজরুল ইসলাম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি মামলা নিলেও তাতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। বাস্তবে তিনিও তার কথা রেখেছেন-১৭ দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওই কিশোরীর সন্ধান মেলেনি।
.
এদিকে, পুলিশ সুপার দ্বিতীয়বার বিষয়টি নজরে নিলে তিনি ওসিকে অপরাধীর আত্মীয়-স্বজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওসি সেই নির্দেশও কার্যকর করেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “ওসি নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না।”
.
কিশোরীর ওই মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি এখন মেয়েকে জীবিত বা মৃত-যেভাবেই হোক ফেরত চাই। আমি প্রতিদিন কাঁদছি, পুলিশের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি, কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না।”
.
এ বিষয়ে মাধবদী থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গত চার মাসে আমি কোনো মামলায় টাকা নিইনি। টাকা না পাওয়ায় মামলায় গুরুত্ব দিচ্ছি না বিষয়টা সত্য নয়। মেয়েটিকে উদ্ধারে তদন্ত কর্মকর্তাকে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
.
তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। মামলা হওয়ার ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও না আছে উদ্ধার অভিযান, না আছে অপরাধীর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি। স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরাধী এখনো স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন তাকে আড়াল করছে।
.
অপহরণ হওয়া কিশোরীর পরিবার আজ প্রশাসনের কাছে একটাই আবেদন জানাচ্ছেন-“আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিন। ন্যায়বিচার চাই।”
.
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সারা বাংলাদেশে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ ও অপহরণের মতো ঘটনা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। তাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে উচ্চ পর্যায়ের পুলিশের কর্মকর্তাগণ সঠিক তদন্ত করে ওসি নজরুল ইসলামের ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই মনে করেন সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা।
প্রিন্ট