কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি
মানস হৃদয়ের তুমি ওগো মানসী আমার/ক্ষণেক দাঁড়াও ফিরে রেখ মিনতি আমার। বিরহের গাঁথা মালা প্রিয়া পরাব কার গলে/কেঁদেও কাঁদাবো না আর জ্বলে আঁখি জলে। আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি এভাবেই কবিতায় ব্যক্ত করেছিলেন কবি বুনো নাজমুল যশোরী। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এম এম নাজমুল হক (কবি বুনো নাজমুল যশোরী) এর ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। কবিতা ছাড়াও অসংখ্য গান, গল্প ও প্রবন্ধ লিখে গেছেন তিনি। কবি বুনো নাজমুল যশোরীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পান্ডুলিপি থেকে সাহিত্যকর্ম সমাজের কাছে তুলে ধরার জন্য চেষ্টা করছেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র কবি নাঈম নাজমুল।
কবি বুনো নাজমুল যশোরী ১৯৪৭ সালের ১ মে তৎকালীন যশোর জেলার নড়াইল মহকুমার ১২ নম্বর বিছালী ইউনিয়নের চাকই গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এম জিতু মোল্লা এবং মাতার নাম বড়ু বিবি। তিনি ১৯৬২ সালে খুলনার ফুলতলার পায়গ্রাম কসবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬৪ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে আইএসসি। ১৯৬৭ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে অভয়নগরের নওয়াপাড়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ অধ্যয়ন করেন তিনি।
বুনো নাজমুল যশোরী দেশমাতৃকার জন্য ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। তিনি অভয়নগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকে কবি বুনো নাজমুল স্থায়ীভাবে গুয়াখোলা গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি জেজে আই জুটমিলের সুপারভাইজার ছিলেন। নওয়াপাড়া এবং ফুলতলা কলেজে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। কবি বুনো নাজমুল মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৯১ সালের ২ ডিসেম্বর হতে দায়িত্ব পালন করেন।
কবি বুনো নাজমুল যশোরীর উল্লেখযোগ্য দুটি কাব্য গ্রন্থ ‘মুক্তিবীণা’ ও ‘হৃদয়লীনা’। ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় বুনো নাজমুল যশোরীর ‘নির্বাচিত কবিতা’ প্রকাশিত হয়েছে। বুনো নাজমুল যশোরী ১৯৯৪ সালের ২৫ নভেম্বর শুক্রবার বিকালে নওয়াপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে দুই স্ত্রী, চার পুত্র, দুই কন্যাসহ অনেক শুভাকাঙ্খী রেখে যান তিনি।
প্রিন্ট