কুষ্টিয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নৌকা প্রতীকের কর্মী জিয়ার হোসেন (৪২) হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অর্ধশতাধিক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা।
গত কয়েকদিন ধরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেড় কালুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালুয়া গ্রামের মণ্ডল পাড়ার মৃত আফিল মণ্ডলের ছেলে আব্দুল খালেক মণ্ডল, আব্দুলের ছেলে রিপন ও শিপন, পিয়ার উদ্দিন পিলুর ছেলে লিটন হোসেন, মৃত রহমত মেম্বারের ছেলে হাবিল উদ্দিন, বলি মণ্ডলের ছেলে জাহান মণ্ডল, দুলাল হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর, ওয়াজ শেখের ছেলে সজিব শেখ, সিরাজের ছেলে হৃদয়, বদির ছেলে সাগর, জাবেদের ছেলে মানু, বাবরের ছেলে সিরাজ, বাহাদুরের ছেলে বদির, নজরুলের ছেলে মামুন, মজনুর ছেলে কাউসার এবং আবুল শেখের ছেলে সেলিম।
হত্যা মামলার প্রধান আসামি আব্দুল খালেকের স্ত্রী হালিমা ইয়াসমিনের অভিযোগ, ভোটকে কেন্দ্র করে জিয়াকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১৬ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন জামিনে বাইরে আছে। আর ১২ আসামি জেলে আছে। মামলার বাদী পক্ষের লোকজন হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে আমাদের বাড়ির ওপর তাণ্ডব চালাচ্ছে। মিলন মাস্টার, ইয়ারুল ও বাবলুর নেতৃত্বে বাদী পক্ষের লোকজন এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। প্রায় ৭০টি পরিবার পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া তাদের হামলার ভয়ে নারী ও শিশুরাও বাড়ি ছেড়েছে। তারা নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে জামাইয়ের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জেলে গ্রুপের জিয়ার ও তার ভাইদের সঙ্গে মণ্ডল গ্রুপের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক ও তার লোকজনদের বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নৌকা প্রতীকের কর্মী জিয়ার হোসেন নিহত হন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফ। এ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। জেলে গ্রুপ নৌকার সমর্থন করে ভোট করেন। আর মণ্ডল গ্রুপ স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফের পক্ষে ভোট করেন। নৌকা সমর্থন করায় প্রতিপক্ষের গুলিতে গত ১২ জানুয়ারি সকাল ৬টার দিকে গুরুতর আহত হন জিয়ার হোসেন ও তার ভাই আলতাফ হোসেন। পরে ১৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জিয়ার।
এ ঘটনায় জিয়ারের ছোট ভাই ইয়ারুল হোসেন ১৬ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার ১২ আসামি কারাগারে রয়েছে আর অপর চারজন আসামি জামিনে মুক্ত।
মামলার পর আসামি পক্ষের পুরুষ লোকজন বাড়িঘর ছেড়েছেন, এতে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে পরিবার। বাদী পক্ষের লোকজন আসামি পক্ষের প্রায় ১০ থেকে ১২টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। প্রায় ৭০টি পরিবার পুরুষ শূন্য। এছাড়া তাদের হামলার ভয়ে নারী ও শিশুরাও বাড়ি ছেড়েছে। এই সুযোগে একের পর এক বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।
আসামি পক্ষের মিতা খাতুন বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে জিয়ারের মৃত্যু হয়। আমরা আসামি পক্ষের লোক। কেউ কাউকে মেরে ফেললে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও নিরপরাধ মানুষদের হুমকি ধামকি দেওয়া খুবই অন্যায়। আমাদের গ্রুপের ৮০ পরিবার পুরুষ শূন্য। বাদী পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করছে। বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মিলন মাস্টার, ইয়ারুল ও বাবলুর নেতৃত্বে ১২টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। আমাদের জানমালের নিরাপত্তা নেই। আমরা নিরাপত্তা চাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আসামি পক্ষের প্রায় ১০ থেকে ১২টি ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। আসামি পক্ষের প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি পরিবারের মানুষ পলাতক রয়েছে। প্রতিপক্ষ যেকোনো সময় আবারও হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় বাড়িতে অবস্থানকারী নারী ও শিশুরা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের মিলন মাস্টার ও তার লোকজন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ মিথ্যা। আমরা তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করিনি।
- আরও পড়ুনঃ ভেড়ামারায় দিনে কোটি টাকার পান বিক্রি !
নিহত জিয়ার হোসেনের ভাই আলতাফ হোসেন বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ভাইকে হত্যা করেছে। হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আসামিপক্ষের লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটে অভিযোগ করছে তা মিথ্যা।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম আকিব বলেন, ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হত্যার ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ওই এলাকার মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক করতে পুলিশে কাজ করছে।
প্রিন্ট