কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলায় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এ পান এখন রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিলেট, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
প্রতি সোমবার ও শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে জমজমাট হয়ে ওঠে ভেড়ামারা উপজেলার কুচিয়ামোড়া পানবাজার হাট বসে। এই পান হাটে দিনে কোটি টাকার পান বিক্রি হয় বলে জানা যায়।
বাহাদুরপুর মাধপপুর গ্রামের পানচাষি সাফাত আলী বলেন, এ এলাকায় কবে থেকে এ আবাদ শুরু হয়েছে জানি না। তবে দাদার আমল থেকে দেখে আসছি। নিজেও করেছি আমার এখন ৪টা পান বরজ। মাটি, বাঁশ, কাশিয়া (ছাউনির উপকরণ) সহ (একধরনের তার) সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কাজের লোকও পাওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, পান চাষ করে মেয়ে দুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছি। এখন আবার দারুণ সুখি মানুষ।
কুচিয়ামোড়া গ্রামের জমেলা বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে স্বামী মারা গেছে। পান বিক্রি করেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলে অনার্স ও ছোট ছেলে এবার এসএসসি দিয়েছে। বসতবাড়িসহ মোট জমি ৪০ শতাংশ। এরমধ্যে ১৭ শতাংশে পান লাগিয়েছি। সপ্তাহে এক গাদি করে পান তোলা যায়। বিক্রি হয় ৪-৫ হাজার টাকা। তবে বর্ষাকালে আরও বেশি পান তোলা যায়। পান বিক্রির অর্থ দিয়েই আমার সংসারসহ সব খরচ চলছে।
আরেক পানচাষি আমির হোসেন বলেন, পানের বরজ থেকে সারা বছরই পান সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালে তুলনামূলক কম পান উৎপাদন হয়। কারণ শীতকালে পান পাতা বাড়ে কম। এসময় উৎপাদন কম হলেও বাজারে দাম থাকে বেশি। পানচাষ টিকিয়ে রাখতে টিএসপি সারের দাম কমানোসহ পর্যাপ্ত সরবরাহের দাবি জানান তিনি।
ভেড়ামারার উৎপাদিত পান কৃষকদের কাছ থেকে থেকে কিনে এনে এ পান কুচিয়ামোড়া বাজারে নিয়ে আসেন পাইকাররা, আবার অনেক চাষি নিজেও বিক্রি করার জন্য পান বাজারে নিয়ে আসেন। আর এখান থেকে পান বিক্রির জন্য সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা নিয়ে যান খুচরা বিক্রেতারা।
পান বিক্রি হয় বিড়া হিসেবে। এক বিড়াতে পানের সংখ্যা থাকে ৮০ থেকে ২০০টি। আকারভেদে পানের পাইকারি দাম ৪০ থেকে ১৩০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, কুচিয়ামোড়া প্রতি পান হাটবাজারে ১ কোটি টাকার বেচা-কেনা হয়। ক্রেতারা পান নিয়ে চলে যান দেশের নানা প্রান্তে।
পাইকারি ক্রেতা হাসান বলেন, চাষিদের থেকে পান কিনে আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাই। এখানের এক বাজারে ১ কোটি টাকার পান বিক্রি হয়। আমাদের চাষিরা পান চাষ করে লাভবান হচ্ছে। পানের উৎপাদন আরও বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা নজর দিচ্ছি।
ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের সভাপতি ডাক্তার আমিরুল ইসলাম মান্নান বলেন, পানচাষ করেই ভেড়ামারার মানুষ অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। এখানকার পান স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে জেলার বাইরেও যাচ্ছে। পানের আবাদ ধরে রাখলেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না ভেড়ামারাবাসীকে।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, দিন দিন এ উপজেলায় পানচাষ বাড়ছে। অন্যান্য ফসল আবাদের তুলনায় পানচাষ লাভজনক।
প্রিন্ট