সুস্বাদু ফল হিসেবে অনেকেই কুল পছন্দ করেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার টক-মিষ্টি সব ধরনের কুল চাষ হয়। বর্তমানে কুলের বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন এর আবাদ বাড়ছে।
ভেড়ামারা উপজেলার কয়েকটি কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার এক-একটি গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে কুল। চাষিরা বাগান থেকে কুল ছিঁড়ে ঝুড়িতে রাখছেন। পরে ওই কুল বিক্রির জন্য ভেড়ামারা বাজারে নিচ্ছেন।
জুনিয়াদহ ইউনিয়নের পরানখালী গ্রামের কুলচাষি জমির উদ্দীন বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে কুল চাষ করেন। আপেলকুলের বাগান করে প্রথমদিকে অনেক লাভবান হয়েছেন। আবহাওয়া আপেল কুল চাষের উপযোগী নয়। সে জন্য তিনি এখন বল সুন্দরী নামের নতুন জাতের কুল চাষ শুরু করেছেন। এক বছর আগে গাছগুলো রোপণ করেছেন, প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ কেজি করে কুল এসেছে। এখনো বিক্রি করা শুরু করেননি, তবে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা তাঁর।
গোলাপ নগর গ্রামের আরেক কুলচাষি আসাদুল ইসলাম বলেন, কুলগাছ লাগানোর সাত মাস পর থেকে গাছে ফুল আসতে শুরু হয়। গত বছর তিনি এক পাখি (৩৫ শতাংশ) জমিতে তাঁরা ২৫০ থেকে ৩০০ গাছ লাগান। ৩০০ গাছে বছরে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। কুল বিক্রি করতে পারেন এক লাখ টাকার। খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়।
তিনি আরও বলেন, এবারও দুই পাখি জমিতে কুলের আবাদ করছেন। তাঁর বাগানে ভালো কুল এসেছে। বিক্রি শুরু করেছেন। এ বছর লাভের আশা করছেন তিনি।
উপজেলা চন্ডিপুর গ্রামের চাষী শাহাবুদ্দিন জানান, কুল চাষ অত্যান্ত লাভজনক। স্বল্প পরিশরে ও স্বল্প খরচে অনেক লাভ করা সম্ভব তাছাড়া এ কুলে পোকা মাকড়ের আক্রমন নেই তাই কোন প্রকার কীটনাশকের ব্যবহারও হয়না । এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও নেই। গতবার লাভ হওয়ার কারণে এবার বেশি জমিতে কুল চাষ করেছেন। তিনি এ বছর আপেলকুল ও বল সুন্দরী জাতের কুল চাষ করেছেন।
ভেড়ামারার বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা চাকরীর আশা না করে বা বিদেশ না গিয়ে ঝুকে পড়েছে কুল চাষে। এতে পরিশ্রম কম আর লাভ বেশি। অনেকেই আবার সাথি ফসল হিসেবে কুলের সাথে অন্যান্য ফসল আবাদ করছেন। আবার অনেকেই আসছেন কুল চাষের পরামর্শ নিতে। কৃষি অফিসও দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, এই উপজেলা ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক কৃষির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ধরনের কুল, আম ও পেয়ারা বাগান হচ্ছে। উপজেলায় এ বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন উন্নত জাতের কুল চাষ হয়েছে। কাশ্মীরি কুল, ভারত সুন্দরী কুল, আপেল কুল, বাও কুলসহ আরও কয়েক জাতের কুল চাষ হচ্ছে। এই কুল চাষের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কৃষির দিকে এগিয়ে যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রিন্ট