দেশের অন্যতম বৃহৎ ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সেচ পাম্প একমাত্র উৎস পদ্মা নদীর পানি। এবার শুষ্ক মওসুমের শুরুতেই পদ্মায় পানির সঙ্কট থাকায় রবি মৌসুমে শুরুতে সেচ পাম্প চালু করা সম্ভাব হয়নি। এই কারণে জিকে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ৪ জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি কৃষি বোরো আবাদ হুমকির মুখে। এমন খবর সম্প্রতি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্্র মিডিয়া প্রকাশ হলে, জিকে সেচ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তড়িঘড়ি করে বোরো মৌসুমের এক মাস পর (৩১জানুয়ারি) বুধবার রাত ৮টার সময় কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জিকে পাম্প মেশিন সুইচ টিপে চলতি মৌসুমের সেচ কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করেন।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম। কুষ্টিয়া পওর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান ও জিকে পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
বোরো মৌসুমের টানা ৩০ দিন বন্ধ থাকার পর ভেড়ামারার গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সেচ ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান ইনটেক চ্যানেলে পানির স্তর কোন রকম ঠিক হওয়ার পর গত পৌষ্য রাতে দুটি সেচ পাম্প বন্ধ রেখে, শুধু একটি পাম্প মেশিন চালুকরা হয়েছে। এতে কুষ্টিয়াসহ তিন জেলার বোরো চাষিরা কিচ্ছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তবে জিকে ইনটেক চ্যানেলের মুখে পদ্মায় জেগে উঠেছে বিশাল বালির চর।
মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করে ড্রেজিং কাজ শেষ করে প্রধান ইনটেক চ্যানেল খালে পানি নিয়ে আসার কারণে পাম্প চালু কার সম্ভব হয়েছে বলে জিকে পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান। সূত্রমতে, সেচ পাম্প চালু রাখতে হলে পদ্মা নদীর সঙ্গে যুক্ত ইনটেক চ্যানেলে ন্যূনতম পানির স্তর ৪.৫ মিটার থাকা দরকার।
তবে পদ্মা নদীতে পানি অধিক সংকট দেখা দিলে চলতি মওসুমে পদ্মার পানি যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে পাম্প হাউসে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে বলে পা উ বো কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
জি কে সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর প্রধান ইনটেক চ্যানেলে (ভেড়ামারাস্থ) প্রচুর পলি জমায় পানি সরবরাহ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ওই পলি অপসারণের জন্য ড্রেজার চালু করা হলেও দু’দুবার ড্রেজার মেশিন নষ্ট হয়ে যায়।
ফলে জানুয়ারীর ১০ তারিখ থেকে পানি সরবরাহের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে ৩১ জানুয়ারী রাতে পাম্প চালু করা হলেও ৩টি প্রধান পাম্পের মধ্যে একটি পাম্প দীর্ঘদিন অকেজো থাকায় সেচ সুবিধা ব্যাহত হচ্ছে। ২টি প্রধান চালু পাম্পের মধ্যে পর্যায়ক্রমে একটি বন্ধ করে আরেকটি চালু করা হচ্ছে। এছাড়াও সহযোগী ১২ টি পাম্প দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বিভিন্ন সময় পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া প্রতি বছর যে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যায় তা খাল খননসহ প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকুলানের জন্য একেবারেই অপ্রতুল।
১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমে কৃষিতে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। খালগুলো ভরাট হয়ে বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতা কমে এসেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম বলেন, প্রকৌশলীরা একটি পাম্প সচল করায় প্রকল্পের সক্ষমতা বেড়েছে। এবার কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা দেওয়া যাবে। এতে করে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জায়গায় সেচের পানি প্রয়োজন। তা ছাড়া আগামী ১০ থেকে ১২ দিন পুরোদমে বোরো আবাদে কৃষকদের প্রচুর সেচের পানি প্রয়োজন। এখনই যদি খালে পানি না যায়, তবে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
প্রিন্ট