ঢাকা , শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ভেড়ামারায় সরকারি প্রণোদনায় বেড়েছে সরিষার আবাদ

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মাঠগুলোতে হলুদের সমারোহ। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে উপজেলায় অধিক পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষকসহ উপজেলা কৃষি বিভাগ।

এবার প্রায় ৫শ’ ৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগ ৫শ’৫৮হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। পরে সরকারি প্রণোদনা ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর ফলে তা বৃদ্ধি পেয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬শ’ ৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন ১২শ’ কৃষক।

সরিষার জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বারি সরিষা-১৪। দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়াসহ বিদেশ থেকে ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষকদের মধ্যে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে চলতি মৌসুমে ভেড়ামারা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মাঠগুলোতে শুধু হলুদের সমারোহ। শীতের সিক্ত বাতাশে কৃষকের স্বপ্ন দুলছে সরিষার মাঠে, জেগেছে আনন্দের জোয়ার। মাঠগুলোতে চোখ জুড়ানো সরিষা ফুলের অপরূপ দৃশ্য।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিস মাহমুদা সুলতানা জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫শ’৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরিষা চাষ হয়েছিল ৪শ’৩০হেক্টর জমিতে।  যা গতবারের চেয়ে ১শ’২৮ হেক্টর বেশি। প্রতিবছর সরিষা চাষ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।

চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষি প্রণোদনার আওতায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে এক কেজি করে ১২শ’ কৃষককে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। যা গত বছর ছিলো ১১শ’২০ জন।তিনি আরো বলেন,
দুই একটি চাষাবাদ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজবপণ করা হয়ে থাকে। আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক লাগে কম। কম খরচে সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মাঠগুলোতে সরিষার ফল আসতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক সরিষা কেটে বোরো ধান চাষাবাদে নেমে পড়বে। ভালো ফলন ফলাতে কৃষকদের প্রদর্শনী ও নানা পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।

মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী ৪০ বিঘা ও ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের আব্দুস সালাম ৩৫ বিঘা জমিতে এবার সরিষার আবাদ করেছেন। তারা জানান, কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিস সরিষা চাষাবাদের জন্য সার ও বীজ বিনামূল্যে সহায়তা করেছে। সরিষা চাষে অন্যান্য শস্যের তুলনায় খরচও হয় অনেক কম। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৬ থেকে ৭ মণ করে সরিষার ফলন হয়ে থাকে। এতে খরচ হয় প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ফলনও পাওয়া যায় ৭ থেকে ৮ মণ। তাই কম খরচে অধিক লাভের আশায় বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। উৎপাদন ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সামনে বছর অতিরিক্ত জমিতে সরিষা চাষ করবেন বলেও তারা জানান। তারা আরও জানান, সরিষা উঠিয়ে ইরি ধান চাষাবাদ করবেন।

 

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষা চাষ একটি লাভজনক আবাদ। এ আবাদে কৃষকের একেবারে কম খরচ হয়ে থাকে। আশা করা যাচ্ছে সরিষা চাষ করে এবার কৃষক ভালো লাভবান হবেন। আগামীতে সরিষা চাষে আরও কৃষক উৎসাহিত হবেন। সরকার তেলের ঘাটতি পূরণে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানা পদক্ষেপ নিয়ে উৎসাহিত করছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

ভেড়ামারায় সরকারি প্রণোদনায় বেড়েছে সরিষার আবাদ

আপডেট টাইম : ১১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার :

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মাঠগুলোতে হলুদের সমারোহ। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে উপজেলায় অধিক পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষকসহ উপজেলা কৃষি বিভাগ।

এবার প্রায় ৫শ’ ৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগ ৫শ’৫৮হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। পরে সরকারি প্রণোদনা ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর ফলে তা বৃদ্ধি পেয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬শ’ ৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন ১২শ’ কৃষক।

সরিষার জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বারি সরিষা-১৪। দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়াসহ বিদেশ থেকে ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষকদের মধ্যে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে চলতি মৌসুমে ভেড়ামারা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মাঠগুলোতে শুধু হলুদের সমারোহ। শীতের সিক্ত বাতাশে কৃষকের স্বপ্ন দুলছে সরিষার মাঠে, জেগেছে আনন্দের জোয়ার। মাঠগুলোতে চোখ জুড়ানো সরিষা ফুলের অপরূপ দৃশ্য।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিস মাহমুদা সুলতানা জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫শ’৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরিষা চাষ হয়েছিল ৪শ’৩০হেক্টর জমিতে।  যা গতবারের চেয়ে ১শ’২৮ হেক্টর বেশি। প্রতিবছর সরিষা চাষ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।

চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষি প্রণোদনার আওতায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে এক কেজি করে ১২শ’ কৃষককে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। যা গত বছর ছিলো ১১শ’২০ জন।তিনি আরো বলেন,
দুই একটি চাষাবাদ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজবপণ করা হয়ে থাকে। আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক লাগে কম। কম খরচে সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মাঠগুলোতে সরিষার ফল আসতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক সরিষা কেটে বোরো ধান চাষাবাদে নেমে পড়বে। ভালো ফলন ফলাতে কৃষকদের প্রদর্শনী ও নানা পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।

মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী ৪০ বিঘা ও ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের আব্দুস সালাম ৩৫ বিঘা জমিতে এবার সরিষার আবাদ করেছেন। তারা জানান, কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিস সরিষা চাষাবাদের জন্য সার ও বীজ বিনামূল্যে সহায়তা করেছে। সরিষা চাষে অন্যান্য শস্যের তুলনায় খরচও হয় অনেক কম। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৬ থেকে ৭ মণ করে সরিষার ফলন হয়ে থাকে। এতে খরচ হয় প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ফলনও পাওয়া যায় ৭ থেকে ৮ মণ। তাই কম খরচে অধিক লাভের আশায় বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। উৎপাদন ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সামনে বছর অতিরিক্ত জমিতে সরিষা চাষ করবেন বলেও তারা জানান। তারা আরও জানান, সরিষা উঠিয়ে ইরি ধান চাষাবাদ করবেন।

 

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষা চাষ একটি লাভজনক আবাদ। এ আবাদে কৃষকের একেবারে কম খরচ হয়ে থাকে। আশা করা যাচ্ছে সরিষা চাষ করে এবার কৃষক ভালো লাভবান হবেন। আগামীতে সরিষা চাষে আরও কৃষক উৎসাহিত হবেন। সরকার তেলের ঘাটতি পূরণে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানা পদক্ষেপ নিয়ে উৎসাহিত করছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।


প্রিন্ট