ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নরসিংদীতে বিয়ের নামে অভিনব প্রতারণাঃ ১১ তম স্বামীর মামলায় কারাগারে ডালিয়া

বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে শুরু হয় একটি নতুন সংসার। কিন্তু সেই বিয়েকে পুঁজি করেই এক অভিনব প্রতারণায় নেমেছেন এক নারী।নাম তার ডালিয়া। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার কুশলা গ্রামের লিয়াকত আলী শেখের মেয়ে। তার চরিত্র বাংলা সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। একে একে করেছেন ১২ টি বিয়ে। যারা তাকে বিয়ে করেছে সবাই সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
কারণ বিয়ে করে স্বামীকে নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা এবং ডিভোর্সের মাধ্যমে হাতিয়ে নিত কাবিনের টাকা। বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার পেশা।বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার স্বামীর তালিকায় রয়েছেন র‌্যাব সদস্য, পুলিশ কনস্টেবল, আনসার, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বেসরকারি চাকরিজীবী, প্রবাসী সহ আরো অনেকেই। ডালিয়া নিজের নাম পরিচয় দেন কখনো আক্তার সাথী, কখনো ডালিয়া খানম আবার কখনো মায়া।
নিজেকে অভিনেত্রী এবং মডেল দাবী করলেও মূলত সস্তা ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যেত তাকে। সেখান থেকেই বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে বিয়ের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিত টাকা। তার প্রথম স্বামী সোহেল খান বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়, দ্বিতীয় স্বামী হুমায়ুন তার বাড়িও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়, তিন নম্বরে রয়েছে টাঙ্গাইলের সোহাগ, চতুর্থ রিপন মন্ডল, পঞ্চম হবিগঞ্জের আনসার সদস্য সুনির্বল বিশ্বাস, ষষ্ঠ খুলনার আমিরুল ইসলাম (র‌্যাবের সাবেক  সার্জেন্ট), সপ্তম কনস্টেবল মোঃ রাজু আহমেদ, অষ্টম আব্দুল খালেক (সিরাজগঞ্জ মালয়েশিয়া প্রবাসী), নবম বরিশালের রেজাউল শেখ, দশম যাত্রাবাড়ীর শাহ আলম, ১১তম নরসিংদীর এনামুল সৌদি আরব প্রবাসী, ১২তম ওমান প্রবাসী সাকিব।
১২ টি বিয়ে হলেও সব সময় নিজেকে কুমারী দাবি করত, ৩২ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণী পাস এই ডালিয়া। তার নির্যাতনে কোন স্বামী পালিয়ে বিদেশ চলে গেছে কোন স্বামী চাকুরী হারিয়ে অটোরিস্কার চালক কেউবা চাকরি হারিয়ে মুদি দোকানদার হয়েছেন। তার এইসব অপকর্মের অন্যতম সহযোগি তার বাবা লিয়াকত আলী শেখ।
কথায় আছে ,পাপ কখনো বাপকে ছাড়ে না। তাই ডালিয়ারও শেষ রক্ষা হলো না। তার ১১তম স্বামী নরসিংদীর রায়পুরার বোয়ালমারা গ্রামের কাদির ভূইয়ার ছেলে এনামুল হকের দুটি মামলায় কারাগারে ঠাঁই হয়েছে এই ডালিয়ার। এনামুল হক ডালিয়ার নামসহ তার পরিবারের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতারণার মামলা দায়ের করেন ১ নভেম্বর ২০২৩ সালে। মামলা নং-রায়পুরা সি আর-৯২১/২৩।ধারা ৪০৩/৪২০/ ৫০৬ দন্ড বিধি। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে সমন জারি করেন।
পরবর্তীতে ১৯ নভেম্বর ২০২৩ সালে তিনি ডালিয়ার নামে দ্বিতীয় যৌতুক মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- রায়পুরা সি আর-৯৭২/২৩। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের তিন ধারায় এই মামলাটিতেও আদালত সমন জারি করেন। উক্ত মামলায় ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন ডালিয়া। কিন্তু বিধিবাম। নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা আহমেদ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ১১ জানুয়ারি ২০২৪ আসামি আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান আসামীর জামিন নামঞ্জুর করেন। বর্তমানে দুটি মামলাই আসামি প্রতারক ডালিয়া কারাগারে আছে।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিষয়ে কথা হয় বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো:মামুন উর রশিদ ও অ্যাডভোকেট মো :মোস্তফা সরকারের সাথে। তারা জানান, এই মহিলার কারণে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। আদালতের নির্দেশে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আশা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাব।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে আদানিকে সমন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

error: Content is protected !!

নরসিংদীতে বিয়ের নামে অভিনব প্রতারণাঃ ১১ তম স্বামীর মামলায় কারাগারে ডালিয়া

আপডেট টাইম : ০৭:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৪
মোঃ আলম মৃধা, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি :
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে শুরু হয় একটি নতুন সংসার। কিন্তু সেই বিয়েকে পুঁজি করেই এক অভিনব প্রতারণায় নেমেছেন এক নারী।নাম তার ডালিয়া। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার কুশলা গ্রামের লিয়াকত আলী শেখের মেয়ে। তার চরিত্র বাংলা সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। একে একে করেছেন ১২ টি বিয়ে। যারা তাকে বিয়ে করেছে সবাই সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
কারণ বিয়ে করে স্বামীকে নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা এবং ডিভোর্সের মাধ্যমে হাতিয়ে নিত কাবিনের টাকা। বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার পেশা।বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার স্বামীর তালিকায় রয়েছেন র‌্যাব সদস্য, পুলিশ কনস্টেবল, আনসার, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বেসরকারি চাকরিজীবী, প্রবাসী সহ আরো অনেকেই। ডালিয়া নিজের নাম পরিচয় দেন কখনো আক্তার সাথী, কখনো ডালিয়া খানম আবার কখনো মায়া।
নিজেকে অভিনেত্রী এবং মডেল দাবী করলেও মূলত সস্তা ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যেত তাকে। সেখান থেকেই বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে বিয়ের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিত টাকা। তার প্রথম স্বামী সোহেল খান বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়, দ্বিতীয় স্বামী হুমায়ুন তার বাড়িও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়, তিন নম্বরে রয়েছে টাঙ্গাইলের সোহাগ, চতুর্থ রিপন মন্ডল, পঞ্চম হবিগঞ্জের আনসার সদস্য সুনির্বল বিশ্বাস, ষষ্ঠ খুলনার আমিরুল ইসলাম (র‌্যাবের সাবেক  সার্জেন্ট), সপ্তম কনস্টেবল মোঃ রাজু আহমেদ, অষ্টম আব্দুল খালেক (সিরাজগঞ্জ মালয়েশিয়া প্রবাসী), নবম বরিশালের রেজাউল শেখ, দশম যাত্রাবাড়ীর শাহ আলম, ১১তম নরসিংদীর এনামুল সৌদি আরব প্রবাসী, ১২তম ওমান প্রবাসী সাকিব।
১২ টি বিয়ে হলেও সব সময় নিজেকে কুমারী দাবি করত, ৩২ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণী পাস এই ডালিয়া। তার নির্যাতনে কোন স্বামী পালিয়ে বিদেশ চলে গেছে কোন স্বামী চাকুরী হারিয়ে অটোরিস্কার চালক কেউবা চাকরি হারিয়ে মুদি দোকানদার হয়েছেন। তার এইসব অপকর্মের অন্যতম সহযোগি তার বাবা লিয়াকত আলী শেখ।
কথায় আছে ,পাপ কখনো বাপকে ছাড়ে না। তাই ডালিয়ারও শেষ রক্ষা হলো না। তার ১১তম স্বামী নরসিংদীর রায়পুরার বোয়ালমারা গ্রামের কাদির ভূইয়ার ছেলে এনামুল হকের দুটি মামলায় কারাগারে ঠাঁই হয়েছে এই ডালিয়ার। এনামুল হক ডালিয়ার নামসহ তার পরিবারের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতারণার মামলা দায়ের করেন ১ নভেম্বর ২০২৩ সালে। মামলা নং-রায়পুরা সি আর-৯২১/২৩।ধারা ৪০৩/৪২০/ ৫০৬ দন্ড বিধি। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে সমন জারি করেন।
পরবর্তীতে ১৯ নভেম্বর ২০২৩ সালে তিনি ডালিয়ার নামে দ্বিতীয় যৌতুক মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- রায়পুরা সি আর-৯৭২/২৩। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের তিন ধারায় এই মামলাটিতেও আদালত সমন জারি করেন। উক্ত মামলায় ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন ডালিয়া। কিন্তু বিধিবাম। নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা আহমেদ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ১১ জানুয়ারি ২০২৪ আসামি আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান আসামীর জামিন নামঞ্জুর করেন। বর্তমানে দুটি মামলাই আসামি প্রতারক ডালিয়া কারাগারে আছে।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিষয়ে কথা হয় বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো:মামুন উর রশিদ ও অ্যাডভোকেট মো :মোস্তফা সরকারের সাথে। তারা জানান, এই মহিলার কারণে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। আদালতের নির্দেশে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আশা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাব।

প্রিন্ট