মাগুরায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার ১৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে সকালে মাগুরা সদর উপজেলার গাংনালিয়া ও বরিশাট গ্রামের সংলগ্ন কুমার নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের নীচ থেকে একটি বস্তাবন্দি তোষকের পাশে মানুষের মাথার খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় উদ্ধার করে। মাগুরা থানা পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনা সংক্রান্ত এজাহার দাখিল করলে মাগুরা সদর থানায় বৃহস্পতিবার ১৬ নভেম্বর পেনাল কোড ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় মামলা হয়, মামলা নং-২০।
মাগুরা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মশিউদ্দৌলা রেজা পিপিএম (বার) ঘটনার সাথে জড়িত আসামি গ্রেফতারসহ মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল (সিসিআইসি) ও মাগুরা সদর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ কলিমুল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস) মোঃ তোফাজ্জল হোসেনের সহযোগিতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার এর নেতৃত্বে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল (সিসিআইসি) ও মাগুরা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ সেকেন্দার আলীর সমন্বয়ে একটা পুলিশের চৌকস টিম মাগুরা জেলার বিভিন্ন থানাসহ আশপাশ এলাকার থানা সমূহের মানুষ নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি পর্যালোচনা করে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করে তথ্য সংগ্রহ করে।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, গত সোমবার ১৭ অক্টোবর তারিখে বেলা ১১ টার সময় মাগুরা সদরের ৯ নং ওয়ার্ডের কলেজপাড়া এলাকা থেকে মাগুরা সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের নড়িহাটি গ্রামের মোঃ আসাদুজ্জামান ও মোছাঃ মিনারা বেগমের কন্যা মোছাঃ মারিয়া খাতুন (১৭) নিখোঁজ হয়। এ সংক্রান্তে নিখোঁজ মোছাঃ মারিয়া খাতুনের ভাই মোঃ জহিরুল ইসলাম মাগুরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করে, যার জিডি নম্বর ১১৮৬, তারিখ মঙ্গলবার ১৮ অক্টোবর ২০২৩।
সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্ণিত ঘটনার সাথে জড়িত শ্রীপুর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের পুত্র-পিতা মামলার প্রধান আসামি। তাদের পরিচয় হলো আসামি নবুয়াত মোল্লার পুত্র শশী আহম্মেদ নিশান (১৯) ও নওশের আলী মোল্লার পুত্র মোঃ নবুয়াত মোল্লা (৪৬) এই দুই জন খুনীকে শনাক্ত করে তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ঘটনার প্রায় ১ সপ্তাহ পূর্বে ভিকটিম মোছাঃ মারিয়া খাতুনের সাথে ধৃত আসামি খুনি শশী আহম্মেদ নিশানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে খুনি শশী আহম্মেদ নিশান গত সোমবার ১৭ অক্টোবর তারিখে নিখোঁজ মারিয়া খাতুনকে ফুসলিয়ে ও ভুল বুঝিয়ে স্টেডিয়াম গেটের বিপরীতে আর্দশপাড়ার আমির খসরুর ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত খুনি শশী আহম্মেদ নিশানের পিতা নবুয়াত আলী মোল্লার সহায়তায় মারিয়া খাতুন হত্যাকান্ডের ঘটনা গোপন করার লক্ষ্যে মৃতদেহ গুম ও আলামত ধ্বংস করার উদ্দেশ্য খুনী শশী আহম্মেদ নিশানের ব্যবহৃত তোষক দ্বারা মৃতদেহ পেচিয়ে এবং বস্তাবন্দি করে লাশ ভ্যানে করে মাগুরা সদর থানার গাংনালিয়া ব্রীজের নীচে কুমার নদীতে ফেলে দেয়।
উল্লেখ্য আসামীদ্বয় ও খুনি হত্যাকান্ডের ঘটনা গোপন করার উদ্দেশ্য ভিকটিম মারিয়া খাতুনের ব্যবহৃত ১ টি ছোট ভ্যানিটি ব্যাগ, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ১ টি বোরকা, জুতাসহ মোবাইল ফোনটি ভেঙ্গে ব্রীজের উপর থেকে কুমার নদীর পানিতে ফেলে দেয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামী পিতা ও পুত্রকে বিজ্ঞ মাগুরা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বর দুপুর ৩ টার সময় মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শেখ সেকেন্দার আলী প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের জানান, সদর থানা মাগুরা ও শ্রীপুর থানা সীমান্ত হতে কঙ্কালের কাপড়, ঘড়ি ও আলামতের সূত্র ধরে টেকনোলজির মাধ্যমে জানতে পারা যায় মেয়ের লাশ, তার সাথে একটা ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো মেসেনজারে কথা হয়ে ছিলো। মোবাইলের সূত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি শনাক্ত, তারা কিভাবে মেরে ছিলো, কার ভ্যানে নিয়ে গিয়ে ছিলো, তাকে স্বীকারোক্তির জন্য আদালতে প্রেরণ করেছি। কিভাবে মেরে ছিলো কারা কারা জড়িত ছিলো এটা তদন্তের স্বার্থে আপাতত বলছি না, তদন্ত সাপেক্ষে জানতে পারবেন।
মারিয়া খাতুনের ভাই জহিরুল ইসলাম সরকারের কাছে খুনিদের আইনের আওতায় বিচার, কঠিন শাস্তি ও ফাঁসি চায়। সে আরও জানায় তার বোনের জামা ও হাতের ঘড়ি দেখে কঙ্কাল লাশ শনাক্ত করতে পেরেছিলো। কারণ তার জামার আরেক অংশের অর্ধেক কাপড় তার স্ত্রীর কাছে ছিলো।
প্রিন্ট