ঢাকা , শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo অভিভাবক সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান “২০২৫” অনুষ্ঠিত Logo পটিয়ায় চলন্ত ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে তরুণ শিক্ষকের আত্মহনন Logo যুব অধিকার পরিষদের কমিটি গঠনকল্পে হবিগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবে মতবিনিময় Logo সরকারি গাছ কাটা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেও ছেড়ে দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন Logo হিম উৎসবে কাওয়ালী গানে মুগ্ধ দর্শক Logo মাগুরা সদরে কৃষকদলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি লাশের হত্যার রহস্য উদঘাটন Logo ফরিদপুরে কবর বাসীর মাগফিরাত কামনায় যুব সংগঠনের ওয়াজ মাহফিল Logo ফরিদপুরে দুই শহীদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের খোঁজখবর নিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ Logo আরাফাত রহমানের কোকোর দশম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাবা-ছেলের দ্বন্দ্বে আদালতে ৭ মামলাঃ নিষ্পত্তি করলেন ইউএনও

সম্পত্তি নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে দ্ব›দ্ব। একাধিকবার সালিশ করেও ব্যর্থ হয়েছেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। পরে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বাবা সেলিম চৌধুরী ছেলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করেন। ছেলে কাশেম চৌধুরীও বাবার বিরুদ্ধে উল্টো তিন মামলা দায়ের করেন। এভাবে একের পর এক আদালতে চলতে থাকে মামলা। মামলায় জেলও খাটেন বাবা-ছেলে দু’জনেই।

 

অবশেষে ইউএনওর বিচক্ষণতা আর মানবিকতায় মিমাংসা হলো বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব। ছেলের কাছ থেকে ভরণ-পোষণের টাকাও পেলেন বৃদ্ধ বাবা সেলিম চৌধুরী (৮৫)। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান নিজ কার্যালয়ে ডেকে তাঁদের বাবা-ছেলের বিরোধ মিমাংসা করেন।

 

বাবা-ছেলের দীর্ঘদিন বিরোধ মিমাংসা করে নজির স্থাপন করেছেন ইউএনও। তাঁর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপজেলাবাসী। তিনি গত দেড় বছরে উপজেলার প্রায় ৫০০ বিরোধ শুনানী শেষে নিষ্পত্তি করেছেন।

 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধীরাইল গ্রামের বাসিন্দা সেলিম চৌধুরীর সাথে সম্পত্তি নিয়ে তার আপন ছেলে কাশেম চৌধুরীর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বিরোধ নিরসনে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিশ বৈঠকে বসা হয়। তাতেও নিষ্পত্তি না হওয়ায় বাবা-ছেলে আদালতের আশ্রয় নেয়। বাবা-ছেলের মামলায় উভয়ে জেল খাটেন। তবুও বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছিল না। এক সপ্তাহ আগে কাশেম চৌধুরী চাষাবাদের জন্য সেলিম চৌধুরীর জমি পরিস্কার করতে যান।

 

বাবা সেলিম চৌধুরী নিরুপায় হয়ে গত ২৮ নভেম্বর ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন এবং ইউএনওকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। পরে ইউএনও দু’পক্ষকে উপজেলা কার্যালয়ে এক সপ্তাহ পর হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেন। অবশেষে বুধবার ইউএনও তার কার্যালয়ে দীর্ঘ শুনানীর পর তাদের বাবা-ছেলের মধ্যকার সমস্যা নিরসন করে দেন। এছাড়া বাবাকে প্রতি মাসে ভরণ-পোষন বাবদ ১০ হাজার করে টাকা দেওয়ার জন্য ছেলে কাশেম চৌধুরীকে নির্দেশ দেন। এ সময় বাবা ছেলের সম্পত্তি ও ছেলে বাবার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া এবং নিজ নিজ দায়িত্বে উভয়ের মামলা তুলে নেয়ার অঙ্গিকারও করা হয়।

 

ভূক্তভোগী সেলিম চৌধুরী বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে আমার ছেলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আদালতে আমি চারটি মামলাও করেছিলাম। পরে আমি ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। এক সপ্তাহের মধ্যে ইউএনও স্যার আমাদেরকে তাঁর অফিসে ডেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিরোধ মিমাংসা করে দিয়েছেন। যার যার মামলা নিজ দায়িত্বে তুলে আনতে বলেছেন। স্যার অনেক ভালো মানুষ। আমি স্যারের জন্য দোয়া করি।’

 

কাশেম চৌধুরী বলেন, ‘আমার ও আমার বাবার মধ্যে বিরোধ মিমাংসা করে দিয়েছেন ইউএনও স্যার। নিজ নিজ মামলা তুলে নিতে বলা হয়েছে। আমরা উভয়েই সন্তোষ্ট। বাবা-ছেলের সম্প্রীতির বন্ধন ফিরিয়ে দিতে ইউএনওর এই উদ্যোগকে আমি সারা জীবন মনে রাখবো।’

 

 

ইউএনও মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করি অসহায় মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের। বাবা-ছেলের বিরোধের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে উভয়পক্ষকে ডেকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। বাবা-ছেলের বিরোধ মিমাংসা করতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। বাবা-ছেলের মাঝে এখন সম্প্রীতির বন্ধনে আনন্দ বিরাজ করছে। এটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।’


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

অভিভাবক সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান “২০২৫” অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

বাবা-ছেলের দ্বন্দ্বে আদালতে ৭ মামলাঃ নিষ্পত্তি করলেন ইউএনও

আপডেট টাইম : ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
লিয়াকত হোসেন লিংকন, স্টাফ রিপোর্টার :

সম্পত্তি নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে দ্ব›দ্ব। একাধিকবার সালিশ করেও ব্যর্থ হয়েছেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। পরে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বাবা সেলিম চৌধুরী ছেলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করেন। ছেলে কাশেম চৌধুরীও বাবার বিরুদ্ধে উল্টো তিন মামলা দায়ের করেন। এভাবে একের পর এক আদালতে চলতে থাকে মামলা। মামলায় জেলও খাটেন বাবা-ছেলে দু’জনেই।

 

অবশেষে ইউএনওর বিচক্ষণতা আর মানবিকতায় মিমাংসা হলো বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব। ছেলের কাছ থেকে ভরণ-পোষণের টাকাও পেলেন বৃদ্ধ বাবা সেলিম চৌধুরী (৮৫)। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান নিজ কার্যালয়ে ডেকে তাঁদের বাবা-ছেলের বিরোধ মিমাংসা করেন।

 

বাবা-ছেলের দীর্ঘদিন বিরোধ মিমাংসা করে নজির স্থাপন করেছেন ইউএনও। তাঁর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপজেলাবাসী। তিনি গত দেড় বছরে উপজেলার প্রায় ৫০০ বিরোধ শুনানী শেষে নিষ্পত্তি করেছেন।

 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধীরাইল গ্রামের বাসিন্দা সেলিম চৌধুরীর সাথে সম্পত্তি নিয়ে তার আপন ছেলে কাশেম চৌধুরীর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বিরোধ নিরসনে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিশ বৈঠকে বসা হয়। তাতেও নিষ্পত্তি না হওয়ায় বাবা-ছেলে আদালতের আশ্রয় নেয়। বাবা-ছেলের মামলায় উভয়ে জেল খাটেন। তবুও বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছিল না। এক সপ্তাহ আগে কাশেম চৌধুরী চাষাবাদের জন্য সেলিম চৌধুরীর জমি পরিস্কার করতে যান।

 

বাবা সেলিম চৌধুরী নিরুপায় হয়ে গত ২৮ নভেম্বর ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন এবং ইউএনওকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। পরে ইউএনও দু’পক্ষকে উপজেলা কার্যালয়ে এক সপ্তাহ পর হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেন। অবশেষে বুধবার ইউএনও তার কার্যালয়ে দীর্ঘ শুনানীর পর তাদের বাবা-ছেলের মধ্যকার সমস্যা নিরসন করে দেন। এছাড়া বাবাকে প্রতি মাসে ভরণ-পোষন বাবদ ১০ হাজার করে টাকা দেওয়ার জন্য ছেলে কাশেম চৌধুরীকে নির্দেশ দেন। এ সময় বাবা ছেলের সম্পত্তি ও ছেলে বাবার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া এবং নিজ নিজ দায়িত্বে উভয়ের মামলা তুলে নেয়ার অঙ্গিকারও করা হয়।

 

ভূক্তভোগী সেলিম চৌধুরী বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে আমার ছেলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আদালতে আমি চারটি মামলাও করেছিলাম। পরে আমি ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। এক সপ্তাহের মধ্যে ইউএনও স্যার আমাদেরকে তাঁর অফিসে ডেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিরোধ মিমাংসা করে দিয়েছেন। যার যার মামলা নিজ দায়িত্বে তুলে আনতে বলেছেন। স্যার অনেক ভালো মানুষ। আমি স্যারের জন্য দোয়া করি।’

 

কাশেম চৌধুরী বলেন, ‘আমার ও আমার বাবার মধ্যে বিরোধ মিমাংসা করে দিয়েছেন ইউএনও স্যার। নিজ নিজ মামলা তুলে নিতে বলা হয়েছে। আমরা উভয়েই সন্তোষ্ট। বাবা-ছেলের সম্প্রীতির বন্ধন ফিরিয়ে দিতে ইউএনওর এই উদ্যোগকে আমি সারা জীবন মনে রাখবো।’

 

 

ইউএনও মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করি অসহায় মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের। বাবা-ছেলের বিরোধের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে উভয়পক্ষকে ডেকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। বাবা-ছেলের বিরোধ মিমাংসা করতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। বাবা-ছেলের মাঝে এখন সম্প্রীতির বন্ধনে আনন্দ বিরাজ করছে। এটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।’


প্রিন্ট