ডেঙ্গু জ্বর কি?
ডেঙ্গু হল এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। সাধারণত সংক্রমিত মশার কামড়ের মাধ্যমে এটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং সারা শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
ডেঙ্গু কি দ্বিতীয়বার হয়?
ডেঙ্গুর সাধারণত চারটি ধরন আছে। আর একজন ব্যক্তি ডেঙ্গুর দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধরন থেকে ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং একজন রোগী একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। চিকিৎসকদের তথ্যমতে চলতি বছর দেশে আক্রান্তের বেশিরভাগই দ্বিতীয়বার করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী।
ডেঙ্গুর চারটি ধরন হল, DEN – 1, DEN 2, DEN 3 এবং DEN 4.
ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে কি হয়
চিকিৎসকদের তথ্যমতে যদি কেউ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। একজন ব্যক্তি দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের পাশাপাশি ব্যাপক অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং লিভারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
একবার ডেঙ্গু হলে সেই ডেঙ্গুর ধরনের সাথে লড়াই করতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে। আজীবনের জন্য সেই ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে। তবে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু জ্বর হলে এবং ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে সেই ভাইরাসের সাথে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজ দেহেই যুদ্ধংদেহী আচরণ শুরু করে এবং মানবশরীরে শুরু হয় তীব্র বিপর্যয়।
বার বার ভাইরাসের সাথে লড়তে গিয়ে শরীরে অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণসহ লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হার্ট বিকল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। একে বলা হয় মাল্টি অর্গান ফেইলর।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলেও তার লক্ষণগুলো প্রায় একই থাকে।
তীব্র জ্বর, শরীরে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমিভাব, ডায়রিয়া, র্যাশ ইত্যাদি।
তবে ডেঙ্গু মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা হল, পেটে তীব্র ব্যথা, বার বার বমি হওয়া, মাড়ি থেকে রক্তপাত, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মলের সাথে রক্ত যাওয়া, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, চরম ক্লান্তি।
অনেক সময় এই ভাইরাসে রোগীর মস্তিষ্ক পর্যন্ত আক্রান্ত হয় ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা রোগীর খিঁচুনি শুরু হতে পারে।
তবে প্রাথমিক জ্বর কমে যাওয়ার পরে অনেক সময় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর তৈরি হয় যা অসুস্থতার আরও গুরুতর রূপ। এক্ষেত্রে ব্যাপক রক্তপাত, ডিহাইড্রেশন, যেকোন অঙ্গ বিকল হওয়ার মত গুরুত্বর সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে।
প্রতিরোধ ও সতর্কতা
সাধারণত ডেঙ্গুর নির্ধারিত কোন চিকিৎসা নেই। তাই মশা থেকে দূরে থাকাই বর্তমানে সবচেয়ে নিরাপদ প্রতিরোধ। সুতরাং বাসাবাড়িতে যেনো মশা ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেই সাথে বাড়িতে বা আশেপাশে মশার বংশবৃদ্ধি যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এ ছাড়া মশা নির্মূল করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি সচেতন থাকা আবশ্যক। জ্বর হলেই দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে হবে যে ডেঙ্গু কিনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এ ছাড়া সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরির পাশাপাশি ভিটামিস-সি যুক্ত ফল, ডালিম, ডাব, পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাবার ও শাক-সবজি খেতে হবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং পারাসহসপিটাল ডট কম।
প্রিন্ট