আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এবারই প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে।
‘জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ’ সূত্রে জানায়, চলতি ২০২৩ এবং আগামী ২০২৪ ও ২০২৫ সালে গ্যাসের বিদ্যমান চাহিদা পূরণে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় এলএনজি আমদানির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এই জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান ‘পেরিনটিস আকাল এসডিএন বিএইচডি’ থেকে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় চলতি ২০২৩ বছর থেকে এলএনজি আমদানির প্রস্তাবটি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান পেরিনটিস আকাল এসডিএন বিএইচডি থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি সরবরাহের একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলায় পাঠানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এলএনজি সরবরাহের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দাখিল করার জন্য গত ৩ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানকে ই-মেইলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ ধারাবাহিকতায় এলএনজি আমদানির স্ট্যান্ডার্ড সেল্স অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের শর্তে সম্মত হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলা বরাবর প্রস্তাব দাখিল করে মালয়েশিয়ার এই কোম্পানি।
সূত্র জানায়, পরে এলএনজি আমদানির স্ট্যান্ডার্ড সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের আলোকে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটিকে (পিপিসি) সহায়তা করার জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি পেরিনটিস আকাল এসডিএন বিএইচডি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত ৫ জুন কোম্পানিটির সাথে আলোচনা করে।
জানা গেছে, ওই বৈঠকে স্ট্যান্ডার্ড সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের সব ধারা ও শর্ত নিয়ে আলোচনা হলেও বাণিজ্যিক কোনো বিষয় বা শর্ত ( যেমন- চুক্তিমূল্য, পরিমাণ ও মেয়াদ ইত্যাদি) নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এ বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জুন কারিগরি কমিটি পিপিসির নিকট একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত পিপিসির সভায় দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার কোম্পানির প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে আবহাওয়াজনিত চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় দু’টি এফএসআরইউতে ৬.৫ এমটিপিএ (৮৫০ এমএমসিএফডির সমতুল্য) এলএনজি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে ২০২৬ সাল নাগাদ দৈনিক ৬০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে সামিট ওয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের সাথে এবং পটুয়াখালীর পায়রাতে ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন চতুর্থ ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে এক্সেলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে নেগোশিয়েশন চলমান রয়েছে।
ভাসমান টার্মিনাল দু’টির মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলা ও কাতারের রাস লাফ্যান লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (কাতার গ্যাস) মধ্যে ১৫ বছর মেয়াদে ১.৮ থেকে ২.৫ এমটিপিএ এলএনজি এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের (বর্তমান নাম ওকিউ টেড্রিং লিমিটেড-ওকিউটি) সাথে ১০ বছর মেয়াদে ১ থেকে ১.৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে এলএনজি সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এসপিএ) সই করা হয়েছে। বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ‘কাতার গ্যাস’ থেকে ২.৫ এমটিপিএ এবং ‘ওকিউটি’ থেকে ১.০ এমটিপিএ অর্থাৎ সর্বমোট ৩.৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া চাহিদার আলোকে মাস্টার সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে দর প্রস্তাব আহ্বানের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্পখাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্নে করতে এবং গ্যাসের ঊর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ইতোমধ্যে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আরো এলএনজি আমদানি করা প্রয়োজন বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ মত প্রকাশ করেছে।
প্রিন্ট