ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুমারখালীতে তৈরি হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন

এককক্ষে বসে কেউ জুট কটন লাঠির বারিতে তুলার মতো করছে, পাশেই কেউ আবার লেপ কটন ৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য – প্রস্থ আকারে কাটছে। কেউবা জুট কটন গুলো লেপ কটনের সাথে জড়িয়ে রোল তৈরি করছে। এরপর আরেক কক্ষে রোলের দুই প্রান্তে চিকন রশির মতো রাবার জড়িয়ে মেশিনে সেলাই করছেন কেউ কেউ। সেলাইয়ের পরে সেগুলো পাশের কক্ষে ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে কেউ আবার প্যাকেটিং করছেন।

এভাবেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় তৈরি হচ্ছে ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন। একটি সমবায় সমিতি গঠন করে এ কাজ করছেন নানা বয়সী প্রায় ৩০ জন নারী। প্রতিমাসে তাঁরা প্রায় দশ হাজার ন্যাপকিন তৈরি করছেন। এতে তাঁরা নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

তাঁদের ভাষ্য, বেকারত্ব কমাতে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালে প্রথমে ১৫ জন নানান বয়সী নারী জাইকা সংস্থা থেকে ৬ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে মাসিক ৫০০ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহ করে ‘ইচ্ছে মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এরপর কয়েকজন পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে কিছু টাকা ঋণ তোলেন। তাঁরা ন্যাপকিন তৈরির কাজ শুরু করেছেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইচ্ছে স্যানিটারিন্যাপকিন’।

বর্তমানে ৩০ জন নারী সেখানে ন্যাপকিন তৈরির কাজ করছেন। প্রতিমাসে তাঁরা প্রায় ১০ হাজার পিচ ন্যাপকিন তৈরি করছেন। প্রতি প্যাকেট ( ১০ পিচ) ৫০ টাকায় পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করছেন তারা।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে নানা বয়সী শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত নারীরা স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন।

এ সময় উদ্যোক্তা মাছুরা খাতুন সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, তিনি সংগঠনে ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাঁর স্বামী অন্যের দোকানে দর্জির কাজ করেন। আর তিনি এখানে ন্যাপকিন সেলাই করেন। তাঁর ভাষ্য, তিনি এখনো সংগঠন থেকে লাভ পাননি। তবে সকলের সহযোগীতা পেলে বড় ধরনের লাভবানের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

শাহানাজ পারভীন নামের আরেকজন উদ্যোক্তা সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, সংসারের আয় বৃদ্ধির জন্য তিনি ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করছেন। তিনি সেখানে প্যাকেটিংয়ের কাজ করেন। তিনি ভবিষ্যতে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান।

সুকুমার বড়ুয়া নামের একজন ক্রেতা বলেন, তিনি তাঁর পরিবারের জন্য জয়া ন্যাপকিন কিনতেন। কিন্তু সেদিন অভিহিতকরণ সভায় গিয়ে তিনি জানতে পারেন ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন কম দামে ও মানে ভাল এবং স্থানীয়ভাবেউৎপাদন হচ্ছে। তিনি ২৫০ টাকা দিয়ে পাঁচ প্যাকেট কিনেছেন।

কুমারখালী ফ্যামেলি কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সুজয়চাকী বলেন, ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন অন্যান্য গুলোর চেয়ে অধিক শোষণ ক্ষমতার এবং দাম কম। সেজন্য তাঁর প্রতিষ্ঠানের রোগীদের এটাই ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

এ বিষয়ে ইচ্ছে মহিলা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখিনা জনীন রিপা বলেন, তাঁদের ন্যাপকিনটি অন্যান্য ন্যাপকিনের তুলনায় অধিক শোষণ ক্ষমতার ও পচনশীল এবং দামে সস্তা। তাঁর ভাষ্য, সহজ শর্তে ঋণ ও সকলের সহযোগীতা পেলে তাঁদের ন্যাপকিনটি একদিন দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করবে।

সংগঠনের সভাপতি মেরিনা আক্তার মিনা সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, তাঁরা প্রতিমাসে প্রায় ১০ হাজার পিচ ন্যাপকিন তৈরি করছেন। প্রতি ১০ পিচের এক প্যাকেট ন্যাপকিন ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ব্যাপক প্রচার ও প্রসার হলে অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবণা দেখছেন তিনি।

ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল সময়ের প্রত্যাশাকে জানান, উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য উদ্যোক্তা মেলা, ম্যাপ ও অ্যাপসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সহজশর্তে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে উদ্যোক্তা তৈরি করা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হবে।কুমারখালীতে ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন নারীরা।

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে আদানিকে সমন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

error: Content is protected !!

কুমারখালীতে তৈরি হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন

আপডেট টাইম : ০৭:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :

এককক্ষে বসে কেউ জুট কটন লাঠির বারিতে তুলার মতো করছে, পাশেই কেউ আবার লেপ কটন ৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য – প্রস্থ আকারে কাটছে। কেউবা জুট কটন গুলো লেপ কটনের সাথে জড়িয়ে রোল তৈরি করছে। এরপর আরেক কক্ষে রোলের দুই প্রান্তে চিকন রশির মতো রাবার জড়িয়ে মেশিনে সেলাই করছেন কেউ কেউ। সেলাইয়ের পরে সেগুলো পাশের কক্ষে ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে কেউ আবার প্যাকেটিং করছেন।

এভাবেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় তৈরি হচ্ছে ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন। একটি সমবায় সমিতি গঠন করে এ কাজ করছেন নানা বয়সী প্রায় ৩০ জন নারী। প্রতিমাসে তাঁরা প্রায় দশ হাজার ন্যাপকিন তৈরি করছেন। এতে তাঁরা নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

তাঁদের ভাষ্য, বেকারত্ব কমাতে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালে প্রথমে ১৫ জন নানান বয়সী নারী জাইকা সংস্থা থেকে ৬ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে মাসিক ৫০০ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহ করে ‘ইচ্ছে মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এরপর কয়েকজন পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে কিছু টাকা ঋণ তোলেন। তাঁরা ন্যাপকিন তৈরির কাজ শুরু করেছেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইচ্ছে স্যানিটারিন্যাপকিন’।

বর্তমানে ৩০ জন নারী সেখানে ন্যাপকিন তৈরির কাজ করছেন। প্রতিমাসে তাঁরা প্রায় ১০ হাজার পিচ ন্যাপকিন তৈরি করছেন। প্রতি প্যাকেট ( ১০ পিচ) ৫০ টাকায় পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করছেন তারা।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে নানা বয়সী শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত নারীরা স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন।

এ সময় উদ্যোক্তা মাছুরা খাতুন সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, তিনি সংগঠনে ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাঁর স্বামী অন্যের দোকানে দর্জির কাজ করেন। আর তিনি এখানে ন্যাপকিন সেলাই করেন। তাঁর ভাষ্য, তিনি এখনো সংগঠন থেকে লাভ পাননি। তবে সকলের সহযোগীতা পেলে বড় ধরনের লাভবানের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

শাহানাজ পারভীন নামের আরেকজন উদ্যোক্তা সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, সংসারের আয় বৃদ্ধির জন্য তিনি ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করছেন। তিনি সেখানে প্যাকেটিংয়ের কাজ করেন। তিনি ভবিষ্যতে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান।

সুকুমার বড়ুয়া নামের একজন ক্রেতা বলেন, তিনি তাঁর পরিবারের জন্য জয়া ন্যাপকিন কিনতেন। কিন্তু সেদিন অভিহিতকরণ সভায় গিয়ে তিনি জানতে পারেন ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন কম দামে ও মানে ভাল এবং স্থানীয়ভাবেউৎপাদন হচ্ছে। তিনি ২৫০ টাকা দিয়ে পাঁচ প্যাকেট কিনেছেন।

কুমারখালী ফ্যামেলি কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সুজয়চাকী বলেন, ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন অন্যান্য গুলোর চেয়ে অধিক শোষণ ক্ষমতার এবং দাম কম। সেজন্য তাঁর প্রতিষ্ঠানের রোগীদের এটাই ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

এ বিষয়ে ইচ্ছে মহিলা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখিনা জনীন রিপা বলেন, তাঁদের ন্যাপকিনটি অন্যান্য ন্যাপকিনের তুলনায় অধিক শোষণ ক্ষমতার ও পচনশীল এবং দামে সস্তা। তাঁর ভাষ্য, সহজ শর্তে ঋণ ও সকলের সহযোগীতা পেলে তাঁদের ন্যাপকিনটি একদিন দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করবে।

সংগঠনের সভাপতি মেরিনা আক্তার মিনা সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, তাঁরা প্রতিমাসে প্রায় ১০ হাজার পিচ ন্যাপকিন তৈরি করছেন। প্রতি ১০ পিচের এক প্যাকেট ন্যাপকিন ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ব্যাপক প্রচার ও প্রসার হলে অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবণা দেখছেন তিনি।

ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল সময়ের প্রত্যাশাকে জানান, উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য উদ্যোক্তা মেলা, ম্যাপ ও অ্যাপসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সহজশর্তে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে উদ্যোক্তা তৈরি করা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হবে।কুমারখালীতে ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন নারীরা।

 


প্রিন্ট