ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থিতা বর্জনের ঘোষণা দিলেন সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অহিদুজ্জামান Logo ফরিদপুরে প্রভু জগৎবন্ধু সুন্দরের ১৫৪ তম শুভ আবির্ভাব উৎসব শ্রীধাম শ্রী অঙ্গনে ভক্তবৃন্দের ঢল Logo নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন মৃধা Logo ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবীতে লন্ডনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত Logo মোহনপুরে অর্ধশতাধিক পয়েন্টে অবৈধ পুকুর খনন ও মাটি বানিজ্যে Logo কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর খানকে শোকজ Logo সদরপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত Logo মোঃ ইমান আলী মোল্লাকে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করল জাতীয় শ্রমিক লীগ Logo রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন Logo ফরিদপুরের চর মাধবদিয়া ইউনিয়নে বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

৯৯৯-এ কল করে উদ্ধার হলেন অবরুদ্ধ নির্যাতিত বিউটি বেগম

জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে নড়াইলের বিউটি বেগম (৩৫) নামে এক বিধবা নারী উদ্ধার পেলেন। ঘটনাটি ঘটেছে লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামে। নির্যাতিত ওই মহিলাকে লোহাগড়া থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। বিউটি বেগমকে অমানবিক নির্যাতন করে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার দেবরদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর সূত্রে জানা যায়, কাশিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত আমজাদ হোসেন খানের পুত্রবধূ বিউটি বেগম। আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামী তোফাজ্জেল হক হিট্টুর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরেও ছোট দুই ছেলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছেন বিউটি। স্বামীর রেখে যাওয়া মাঠের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগান ও জীবিকা নির্বাহ করে করেন।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকালে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করা জমিতে চাষাবাদের জন্য যান বিউটি। জমি চাষের সময়ে তার দেবর মিন্টু খান, মনির হোসেন খান সেন্টু, সাজ্জাদ হোসেন খান রিন্টু, পিনা খান, দেবরের স্ত্রী রাহেলা বেগমসহ ছয় থেকে সাতজন আগ্নেয়াস্ত্র,লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করতে বলেন। বিউটি ও তার ছেলে সাইফ খান চাষাবাদ বন্ধ না করলে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন তারা।

এ অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে ৯৯৯ -এ কল করে লোহাগড়া থানা পুলিশ অসুস্থ বিউটি বেগম ও তার ছেলেকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
গিলাতলা গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, দেবর মিন্টু খান অন্য ভাইয়েরা আগ্নেয়াস্ত্র (দুই নালা বন্দুক) হাতে লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্রসহ জমি চাষাবাদে বাধা দিচ্ছিলেন বিউটির । জমি থেকে না গেলে বিউটি ও তার ছেলে সাইফকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেন । এ সময় বিউটির ছেলে সাইফ ঘটনার
ভিডিও ধারণ করায় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ দেন।

ভুক্তভোগী বিউটি বেগম বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমার দেবররা বেশ কয়েকবার আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তারা চায় বন্দুকের ভয় দেখিয়ে সব জমি লিখে নিতে আর আমার এতিম সন্তানদের ভিটা ছাড়া করতে।

গতকাল (শুক্রবার) সকালে আমার ভাগের জমি চাষ করতে গেলে তারা বাধা দেয়। আমরা জমি থেকে না যেতে চাওয়ায় সবার সামনে আমার বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে বলে জমি সব লিখে দিয়ে চলে যা, তা না করলে তোদের সবাইকে মরতে হবে। এরপর আমাদেরকে লাঠি, হকিস্টিক, বন্দুকের বাট দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। আমাদেরকে মেরে বাড়ির মধ্যে আটকে রাখে। হাসপাতালেও যেতে দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ৯৯৯ এ কল দেই। পুলিশ এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন,প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি আপনারা ন্যায় বিচার করুন। আমার সন্তানদের অধিকারটুকু রক্ষা করার নিশ্চয়তা দিন।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক খালিদ সাইফুল্লাহ বেলাল বলেন, বিউটি বেগমের শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম রয়েছে।
চাপা আঘাতের কারণে রক্ত জমাট হয়ে আছে। আপাতত দৃষ্টিতে আঘাত গুরুতর মনে না হলেও এসব আঘাতের কারণে রোগীকে দীর্ঘ মেয়াদে ভুগতে হবে। এ বিষয়ে মিন্টু খানের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ও মাইরখেয়েছি। আমি অসুস্থ হার্টের রোগী এখন বেডে আছি, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার ভাইয়ের লাইসেন্স করা অস্ত্র। ভাইয়ের মাথা গরম উল্টাপাল্টা কিছু করে না বসে সেজন্য অস্ত্রটি আমি নিয়ে
রেখেছিলাম।

লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ -এর কলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এক নারীকে তার দেবররা ঘরে অবরুদ্ধ করে প্রাণে মারার চেষ্টা করছে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। বিউটি বেগম ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হামলায় ব্যবহারকৃত অস্ত্র লাইসেন্সকৃত হলেও বৈধ অস্ত্র প্রাপ্তির শর্ত ভঙ্গ করায় আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন বলেন, কোন নারীকে সম্পত্তি বা অন্য কোন কারনে নির্যাতন করার অধিকার কারো নেই। পুলিশ কল পেয়ে উদ্ধার করেছে। তার স্বার্বিক নিরাপত্তা ও আইনি সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থিতা বর্জনের ঘোষণা দিলেন সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অহিদুজ্জামান

error: Content is protected !!

৯৯৯-এ কল করে উদ্ধার হলেন অবরুদ্ধ নির্যাতিত বিউটি বেগম

আপডেট টাইম : ০২:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩

জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে নড়াইলের বিউটি বেগম (৩৫) নামে এক বিধবা নারী উদ্ধার পেলেন। ঘটনাটি ঘটেছে লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামে। নির্যাতিত ওই মহিলাকে লোহাগড়া থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। বিউটি বেগমকে অমানবিক নির্যাতন করে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার দেবরদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর সূত্রে জানা যায়, কাশিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত আমজাদ হোসেন খানের পুত্রবধূ বিউটি বেগম। আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামী তোফাজ্জেল হক হিট্টুর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরেও ছোট দুই ছেলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছেন বিউটি। স্বামীর রেখে যাওয়া মাঠের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগান ও জীবিকা নির্বাহ করে করেন।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকালে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করা জমিতে চাষাবাদের জন্য যান বিউটি। জমি চাষের সময়ে তার দেবর মিন্টু খান, মনির হোসেন খান সেন্টু, সাজ্জাদ হোসেন খান রিন্টু, পিনা খান, দেবরের স্ত্রী রাহেলা বেগমসহ ছয় থেকে সাতজন আগ্নেয়াস্ত্র,লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করতে বলেন। বিউটি ও তার ছেলে সাইফ খান চাষাবাদ বন্ধ না করলে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন তারা।

এ অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে ৯৯৯ -এ কল করে লোহাগড়া থানা পুলিশ অসুস্থ বিউটি বেগম ও তার ছেলেকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
গিলাতলা গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, দেবর মিন্টু খান অন্য ভাইয়েরা আগ্নেয়াস্ত্র (দুই নালা বন্দুক) হাতে লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্রসহ জমি চাষাবাদে বাধা দিচ্ছিলেন বিউটির । জমি থেকে না গেলে বিউটি ও তার ছেলে সাইফকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেন । এ সময় বিউটির ছেলে সাইফ ঘটনার
ভিডিও ধারণ করায় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ দেন।

ভুক্তভোগী বিউটি বেগম বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমার দেবররা বেশ কয়েকবার আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তারা চায় বন্দুকের ভয় দেখিয়ে সব জমি লিখে নিতে আর আমার এতিম সন্তানদের ভিটা ছাড়া করতে।

গতকাল (শুক্রবার) সকালে আমার ভাগের জমি চাষ করতে গেলে তারা বাধা দেয়। আমরা জমি থেকে না যেতে চাওয়ায় সবার সামনে আমার বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে বলে জমি সব লিখে দিয়ে চলে যা, তা না করলে তোদের সবাইকে মরতে হবে। এরপর আমাদেরকে লাঠি, হকিস্টিক, বন্দুকের বাট দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। আমাদেরকে মেরে বাড়ির মধ্যে আটকে রাখে। হাসপাতালেও যেতে দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ৯৯৯ এ কল দেই। পুলিশ এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন,প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি আপনারা ন্যায় বিচার করুন। আমার সন্তানদের অধিকারটুকু রক্ষা করার নিশ্চয়তা দিন।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক খালিদ সাইফুল্লাহ বেলাল বলেন, বিউটি বেগমের শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম রয়েছে।
চাপা আঘাতের কারণে রক্ত জমাট হয়ে আছে। আপাতত দৃষ্টিতে আঘাত গুরুতর মনে না হলেও এসব আঘাতের কারণে রোগীকে দীর্ঘ মেয়াদে ভুগতে হবে। এ বিষয়ে মিন্টু খানের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ও মাইরখেয়েছি। আমি অসুস্থ হার্টের রোগী এখন বেডে আছি, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার ভাইয়ের লাইসেন্স করা অস্ত্র। ভাইয়ের মাথা গরম উল্টাপাল্টা কিছু করে না বসে সেজন্য অস্ত্রটি আমি নিয়ে
রেখেছিলাম।

লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ -এর কলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এক নারীকে তার দেবররা ঘরে অবরুদ্ধ করে প্রাণে মারার চেষ্টা করছে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। বিউটি বেগম ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হামলায় ব্যবহারকৃত অস্ত্র লাইসেন্সকৃত হলেও বৈধ অস্ত্র প্রাপ্তির শর্ত ভঙ্গ করায় আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন বলেন, কোন নারীকে সম্পত্তি বা অন্য কোন কারনে নির্যাতন করার অধিকার কারো নেই। পুলিশ কল পেয়ে উদ্ধার করেছে। তার স্বার্বিক নিরাপত্তা ও আইনি সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।