কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদীতে প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
গত শুক্রবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে শহরের ঘোড়াঘাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এতে ফাতেমা (১০) নামের এক শিশু নিখোঁজ আছে।
সে শহরতলির বারোখাদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। কুষ্টিয়া যুগিয়া ক্যানালপাড়ায় তার বাড়ি। বাবার নাম রমজান আলী। ফাতেমা এসেছিলেন নানা বাড়িতে ঘুরতে।
শুক্রবার ২সেপ্টেম্বও সন্ধ্যা রাতে তাকে উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে কুষ্টিয়ার ফায়ার সার্ভিস কর্মী ব্যর্থ হয়। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার খবর পেয়ে খুলনা থেকে আসা ডুবুরির ৪ সদস্য টিম সকাল ১০টার সময় নিখোঁজ শিশুর উদ্ধারকাজে নামে নদীতে। টানা ৭ঘন্টা পানিতে অভিযান চালিয়ে ফাতেমার লাশ খুজে পাইনি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত পানির মধ্যে থেকে ডুবুরি দল খালি হাতে ফিরে আসে। ডুবুরিদলের দায়িত্বে থাকা সাইদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুনঃ পাংশায় নজরুল স্মরণে সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত
নিখোঁজ শিশুর মা বিলিকিস খাতুন বলেন, আমার সোনা মনি কই, আমি তাকে দেখব। নৌকায় এত মানুষ না উঠলে আমার সোনা ডুবে যেত না। ডুবুরি নবী জানান, পানির তল দেশে গিয়ে অনেক খুজেছি কোন লাশ পায়নি। ঘোড়াই ঘাট থেকে ভাটিতে ডুবে যাওয়া নৌকাটি ডুবে আছে দেখতে পাই। স্থানীয় কুমারখালী স্টেশনের ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে খুলনা থেকে আসা চার সদস্যের ডুবুরিদল নৌকা করে প্রথমে ডুবে যাওয়া ওই নৌকার কাছে যায়। সেখানে তিন ডুবুরি পানিতে নামলেও ফিরে আসেন তারা খালি হাতেই।
ডুবুরি নবীর আলী বলেন, নৌকা ভালোমতো ভালো করে দেখা হয়েছে, সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। নৌকার পাটাতন কিছুটা ছুটে গেছে। সেখানেও পা ঢুকিয়ে দেখেছি। এরপর আমরা আধাকিলোমিটার ভাটি এলাকা ডুব দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে নিখোজ ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়নি।
নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় শিশুটির দেহ দূরে ভেসে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ডুবুরিদল। ডুবুরিদের উদ্ধার অভিযান দেখতে পাড়ে ভিড় করে কয়েক হাজার উৎসুক মানুষ।নৌকা ডুবির ঘটনায় গুরুতর আহত দুইজনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতরা হলেন-কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাহাদুরখালি গ্রামের করিম শেখের মেয়ে রুমা বেগম (৩৫) ও একই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের সালামত শেখের ছেলে রব্বানী (৩৬)। এ বিষয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, নিখোঁজ একজনকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালের দিকে কুষ্টিয়া শহরের ঘোড়ারইঘাট এলাকায় গড়াই নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। গড়াই নদীতে ঐ সময় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা চলছিল। এ উপলক্ষে হাজারো মানুষের ঢল নামে সেখানে। বাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীদের অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই একটি নৌকা ডুবে যায়। এসময় নৌকার যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও একজন যাত্রী শিশু ফাতেমা নিখোঁজ হয়। আহত হন আরো দুজন। গুরুতর আহত অবস্থায় দুইযাত্রী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আগুনে ভ্যান চালকের বাড়ি ও গরু পুড়ে ছাই
কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী হোসেন জানান, কয়ায় দুই দিনব্যাপী নৌকাবাইচ শুরু হয় শুক্রবার দুপুরে। প্রতিযোগিতা চলাকালে যাত্রী পারাপারের খেয়া নৌকা ডুবে গেলে নৌকাবাইচ স্থগিত করেন তিনি। এদিকে নৌকাডুবির পর থেকে কুষ্টিয়ায় ঘোড়াই ঘাটে খেয়া পারাপার বন্ধ রয়েছে। খুলনা থেকে আসা ডুবুরি শিশু ফাতেমার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি।
প্রিন্ট