মহম্মদপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ২০২০ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ মাসে ১০ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুরু থেকে ধীরগতিতে চললেও গত তিন মাস ধরে কাজটি বন্ধই হয়ে গেছে। এতে মডেল মসজিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে মসজিদটির কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তো নেই-ই বরং বর্তমান ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অর্থ বরাদ্দের স্বল্পতার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে মসজিদটির কিছু অংশ নির্মাণের পর দীর্ঘদিন ধরে কাজটি ফেলে রাখায় রোদ ও বৃষ্টিতে প্রতিটি গ্রেড বিম ও কলামের রডে মরিচা পড়ে গেছে। এ রড দিয়ে কাজ করলে বৃহৎ ভবনটির স্থায়িত্ব কমে যাবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরের মধ্যে প্রশাসনের চোখের সামনে মডেল মসজিদের নির্মাণকাজে ঠিকাদারের গাফিলতি থাকলেও তা নিয়ে কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি না থাকায় স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে পর্যাপ্ত মসজিদ থাকলেও একই স্থান থেকে বিভিন্ন ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো মডেল মসজিদ নেই। তাই এ ধরনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে মাগুরার মহম্মদপুরে গত বছরের জুন থেকে উপজেলায় চার তলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। নির্মাণকাজের মেয়াদ প্রায় শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি শতকরা ১০ ভাগ হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। যে সময়টা প্রায় শেষ হয়ে আসছে।
অন্যদিকে তিন মাসের বেশি সময় ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে মসজিদ নির্মাণকাজ।জানা গেছে, ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে মোট ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭৩ টাকা। চার তলাবিশিষ্ট এ মসজিদে থাকবে গাড়ি পার্কিং ও লিফট, একসঙ্গে এক হাজার পুরুষ ও নারী মুসল্লির পৃথক ওজু ও নামাজের ব্যবস্থা, পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, হজ যাত্রীদের নিবন্ধন, পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা, দাওয়াতি কার্যক্রম, হিফজ মাদ্রাসা, মক্তব, মৃত ব্যক্তির গোসলের ব্যবস্থা, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের আবাসন প্রকল্পসহ বহুমুখী ইসলামী কার্যক্রম। মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে রয়েছে নানা পরিকল্পনা।
এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মসজিদের নির্মাণ শেষ হওয়ার পর গত ১০ জুন উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে শুরু হওয়া দেশের বিভিন্ন স্থানের ৫০টি মডেল মসজিদ গত ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করলেও মহম্মদপুর মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ ধীর গতিতে হওয়ায় কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। মাগুরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদারের কাজের গাফিলতির বিষয়ে তিনি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, মাগুরার জেলা প্রশাসকসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে জানিয়েছেন। কাজের গতি বাড়াতে ঠিকাদারের সঙ্গেও বারবার কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
মসজিদ নির্মাণকাজের ঠিকাদার মিজানুর রহমান লিটন বলেন, গণপূর্ত বিভাগ ঠিকমতো বিল না দেওয়ায় এবং স্থানীয় সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। কাজের সময় বর্ধিত করতে আবেদন করেছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আবদুল্লাহেল কাফী বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা মাগুরা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রসেনজিৎ পাল বলেন, অর্থ বরাদ্দের স্বল্পতার কারণে এতদিন কাজ বন্ধ আছে। নির্মাণকাজের সময় বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারের আবেদন হাতে পেয়ে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। মরিচা ধরা রড পলিশ করে ঢালাই দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
প্রিন্ট