ঢাকা , বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

রংপুরে ‘জুলাই যোদ্ধা’ ও ‘রাজবন্দীদের’ নামে অটোরিকশার লাইসেন্স: ৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ!

মোঃ নাঈম ইসলামঃ

 

অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজার। আর যন্ত্রচালিত রিকশা আছে ৬ হাজারের মতো। তবে প্রতিদিন গড়ে এই নগরীতে ৪০-৫০ হাজারের মতো অটোরিকশা ও যন্ত্রচালিত রিকশা চলাচল করে। ফলে সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই থাকে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে নতুন করে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে জানা যায় সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখার সূত্রে।

 

অথচ সম্প্রতি জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ২৫০ জন এবং জুলাই রাজবন্দী হিসেবে ৪৫১ জনের কাছ থেকে ৬০০ অটোরিকশার লাইসেন্সের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে গোপনে। গত ৮ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা আহ্বান করা দেখিয়ে এ বিষয়টি লিখিত এজেন্ডা আকারে এনে তা অনুমোদনও করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে তড়িঘড়ি করে।

 

জুলাই যোদ্ধা হিসেবে তালিকা কারা করেছে, কাদের নাম আছে, তা জানা না গেলেও জুলাই যোদ্ধাদের নামে লাইসেন্স বাণিজ্য করার পাঁয়তারা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, লাইসেন্স দেয়ার নামে ৫ কোটি টাকা বাণিজ্য হচ্ছে।

 

এদিকে, এ ঘটনা জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। বলাবলি হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কতিপয় স্বঘোষিত যোদ্ধা এবং আহ্বায়ক জুলাই রাজবন্দী সেজে এই আবেদন করেছেন।

 

এ বিষয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানেন না। জাতীয় পার্টির নেতারাও এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন।

 

এদিকে, গত ৭ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা ছিল। মাত্র ১ দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ওই সভার দ্বিতীয় এজেন্ডা হিসেবে জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দীদের অটোরিকশা প্রদান বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভা আহ্বান করেন রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা। ওই সভায় ৫০০ অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা যায়।

 

এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা তানজিলা তাসনিমকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত তালিকা প্রস্তুত করে লাইসেন্স প্রদান করতে বলেছেন বদলি হওয়া প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। প্রসঙ্গত- বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশনে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পর জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দী নাম দিয়ে সস্তা সেন্টিমেন্ট তৈরী করে গোপনে তাদের নামে নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বলছেন অনেকে।

 

তিনি আরও বলেন, লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে রাজবন্দী হিসেবে লাইসেন্স নেয়ার আবেদন সম্পর্কে বিএনপির মহানগর ও জেলার কোনো নেতাই জানেন না ফলে এ ঘটনায় বিএনপি নেতা কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

অটোরিকশার লাইসেন্স জুলাই রাজবন্দীর নামে দেয়া হচ্ছে, কই আমি তো জানি না!” বরং তিনি পুরো ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।

 

রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুও বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে রাজবন্দীর নামে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি জেলা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জানে না। আমরা কোনো আবেদন করি না’, বলেও জানান তিনি।

 

এ নিয়ে রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, ‘কিসের অটোরিকশার লাইসেন্স, কারা আবেদন করেছে, আমরা জানি না। ওই আবেদনের বিষয়ে জেলা যুবদল কিছুই জানে না’, বলেন তিনি। একই অবস্থা জুলাই যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে, কারা তাদের পক্ষে আবেদন করলো তা জানেন না তাদের অধিকাংশ।

 

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ ইমতির সঙ্গে মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, আড়াইশ’ জুলাই যোদ্ধা অটোরিকশার লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করেছেন। তারা কি লাইসেন্স নিয়ে নিজেরা চালাবে, না ভাড়া দেবে, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। তবে অটোরিকশার লাইসেন্স নেয়ার নামে জুলাই যোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে তাদের খাটো করা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আবেদন করা হয়েছে, জানি’।

 

এই বিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা আর যন্ত্রচালিত রিকশা মিলিয়ে ১১ হাজার লাইসেন্স আছে। অথচ নগরীতে চলাচল করে ৫০ হাজারেরও বেশি। কোনো অবস্থাতেই নতুন করে লাইসেন্স দেয়া মানে এর সঙ্গে দুর্নীতি আর ইল-মোটিভ (অসৎ উদ্দেশ্য) আছে বলে মনে করেন তিনি।

 

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দীদের জন্য কিছু অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে,’ তিনি আরও স্বীকার করে বলেন, ‘এটা এখন প্রক্রিয়াধীন আছে’


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

রংপুরে ‘জুলাই যোদ্ধা’ ও ‘রাজবন্দীদের’ নামে অটোরিকশার লাইসেন্স: ৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ!

আপডেট টাইম : ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মোঃ নাঈম ইসলাম, সদর উপজেলা (রংপুর) প্রতিনিধি :

মোঃ নাঈম ইসলামঃ

 

অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজার। আর যন্ত্রচালিত রিকশা আছে ৬ হাজারের মতো। তবে প্রতিদিন গড়ে এই নগরীতে ৪০-৫০ হাজারের মতো অটোরিকশা ও যন্ত্রচালিত রিকশা চলাচল করে। ফলে সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই থাকে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে নতুন করে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে জানা যায় সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখার সূত্রে।

 

অথচ সম্প্রতি জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ২৫০ জন এবং জুলাই রাজবন্দী হিসেবে ৪৫১ জনের কাছ থেকে ৬০০ অটোরিকশার লাইসেন্সের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে গোপনে। গত ৮ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা আহ্বান করা দেখিয়ে এ বিষয়টি লিখিত এজেন্ডা আকারে এনে তা অনুমোদনও করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে তড়িঘড়ি করে।

 

জুলাই যোদ্ধা হিসেবে তালিকা কারা করেছে, কাদের নাম আছে, তা জানা না গেলেও জুলাই যোদ্ধাদের নামে লাইসেন্স বাণিজ্য করার পাঁয়তারা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, লাইসেন্স দেয়ার নামে ৫ কোটি টাকা বাণিজ্য হচ্ছে।

 

এদিকে, এ ঘটনা জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। বলাবলি হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কতিপয় স্বঘোষিত যোদ্ধা এবং আহ্বায়ক জুলাই রাজবন্দী সেজে এই আবেদন করেছেন।

 

এ বিষয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানেন না। জাতীয় পার্টির নেতারাও এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন।

 

এদিকে, গত ৭ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা ছিল। মাত্র ১ দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ওই সভার দ্বিতীয় এজেন্ডা হিসেবে জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দীদের অটোরিকশা প্রদান বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভা আহ্বান করেন রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা। ওই সভায় ৫০০ অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা যায়।

 

এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা তানজিলা তাসনিমকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত তালিকা প্রস্তুত করে লাইসেন্স প্রদান করতে বলেছেন বদলি হওয়া প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। প্রসঙ্গত- বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশনে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পর জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দী নাম দিয়ে সস্তা সেন্টিমেন্ট তৈরী করে গোপনে তাদের নামে নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বলছেন অনেকে।

 

তিনি আরও বলেন, লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে রাজবন্দী হিসেবে লাইসেন্স নেয়ার আবেদন সম্পর্কে বিএনপির মহানগর ও জেলার কোনো নেতাই জানেন না ফলে এ ঘটনায় বিএনপি নেতা কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

অটোরিকশার লাইসেন্স জুলাই রাজবন্দীর নামে দেয়া হচ্ছে, কই আমি তো জানি না!” বরং তিনি পুরো ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।

 

রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুও বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে রাজবন্দীর নামে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি জেলা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জানে না। আমরা কোনো আবেদন করি না’, বলেও জানান তিনি।

 

এ নিয়ে রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, ‘কিসের অটোরিকশার লাইসেন্স, কারা আবেদন করেছে, আমরা জানি না। ওই আবেদনের বিষয়ে জেলা যুবদল কিছুই জানে না’, বলেন তিনি। একই অবস্থা জুলাই যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে, কারা তাদের পক্ষে আবেদন করলো তা জানেন না তাদের অধিকাংশ।

 

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ ইমতির সঙ্গে মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, আড়াইশ’ জুলাই যোদ্ধা অটোরিকশার লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করেছেন। তারা কি লাইসেন্স নিয়ে নিজেরা চালাবে, না ভাড়া দেবে, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। তবে অটোরিকশার লাইসেন্স নেয়ার নামে জুলাই যোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে তাদের খাটো করা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আবেদন করা হয়েছে, জানি’।

 

এই বিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা আর যন্ত্রচালিত রিকশা মিলিয়ে ১১ হাজার লাইসেন্স আছে। অথচ নগরীতে চলাচল করে ৫০ হাজারেরও বেশি। কোনো অবস্থাতেই নতুন করে লাইসেন্স দেয়া মানে এর সঙ্গে দুর্নীতি আর ইল-মোটিভ (অসৎ উদ্দেশ্য) আছে বলে মনে করেন তিনি।

 

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দীদের জন্য কিছু অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে,’ তিনি আরও স্বীকার করে বলেন, ‘এটা এখন প্রক্রিয়াধীন আছে’


প্রিন্ট