-শামীম আহমেদ
ঝুমু খুব সকালে ঘুম থেকে উঠল। চারপাশের নিস্তব্ধতা আর শিশির ভেজা ঠান্ডা বাতাস তাকে মুগ্ধ করল। শীতের ভোরগুলো যেন এমনই মায়াবী হয়। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখল, চারদিকে ধূসর মেঘ আর কুয়াশা ছড়িয়ে আছে। মাঠের ওপাশে সরিষার ক্ষেত, যেখানে হলুদ ফুলগুলো যেন সূর্যের কিরণের জন্য অপেক্ষা করছে।
ঝুমুর খুব ইচ্ছে হলো, সরিষা ফুলের মেঠো পথে একটু হাঁটা। অনেক দিন সে এমন নিরিবিলি মেঠো পথে হাঁটেনি। খালি পায়ে সে বেরিয়ে পড়ল। পায়ে পায়ে চলতে চলতে সে চলে এলো সরিষা ফুলের মেঠো পথে। ছোট ছোট পথগুলো সরিষা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে চলে গেছে দূর দিগন্ত পর্যন্ত। ঝুমু হাঁটতে শুরু করল, হালকা বাতাসে সরিষা ফুলগুলো দুলছে, যেন তাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
মেঠো পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ঝুমু হারিয়ে গেল স্মৃতির জগতে। ছোটবেলায় সে তার দাদার সঙ্গে এমন সরিষা ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেত। দাদার মুখে গল্প শুনত, গ্রাম্য জীবনের সরলতা আর প্রকৃতির রূপের বর্ণনা। আজ দাদা নেই কিন্তু দাদার মুখের সেই গল্পগুলো আজও ঝুমুর মনে পড়ে। আজ যেন সেই স্মৃতিগুলোই জীবন্ত হয়ে উঠল এই সরিষা ক্ষেতের মাঝে…।
ঝুমু হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পেল একটি ছোট পাখি মেঠো পথে নেমে এসেছে। পাখিটি নীচু হয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে। ঝুমু চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখল। পাখিটি কিছুক্ষণ পর উড়ে গেল, আর ঝুমু আবার হাঁটতে শুরু করল।
পথ চলতে চলতে একসময় ঝুমু ফিরে এলো সেই পুরনো দিনের সরলতায়। সরিষা ফুলের মেঠো পথে হাঁটতে হাঁটতে সে বুঝল, জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলোই প্রকৃত সুখ এনে দেয়। সরিষা ক্ষেতের এই হলুদ রঙ যেন তার মনের সব ক্লান্তি মুছে দিল।
ঝুমু যখন ঢাকায় ফিরল, তার মনে ছিল এক অদ্ভুত শান্তি। এই সরিষা ফুলের মেঠো পথে হাঁটার অভিজ্ঞতা তাকে আবার জীবনের ছোট ছোট আনন্দ খুঁজে পেতে শিখিয়েছে। সরিষা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে এই পথ যেন তার নতুন প্রেরণার উৎস হয়ে উঠল…।
লেখকঃ শামীম আহমেদ
-কবি, লেখক ও সাহিত্যিক
প্রিন্ট