ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তা হবে হিংসা-হানাহানি ও সন্ত্রাসমুক্ত। স্বপ্নের সেই বাংলার তরুণরা আল্লাহকে ভয় করবে, তার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে। মানুষকে ভালোবাসবে, বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাড়াবে। স্বপ্নের বাংলাদেশে মামা-খালুর তদবির চলবে না, যার যার যোগ্যতায় চাকরি পাবে প্রার্থীরা। আর নারীদের সম্ভ্রমহানি হবে না, এমন দেশের স্বপ্ন দেখে জামায়াতে ইসলামী।
তিনি আরো বলেছেন, ভারত থেকে চোখ রাঙিয়ে আর বাংলাদেশ শাসনের চিন্তা করবেন না। বাংলাদেশের মানুষ চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস সঞ্চয় করেছেন। আপনাদের প্রতিবেশী হিসেবে আমরা সম্মান করি। আপনারাও আমাদের সম্মান করুন। আগামীর দেশ গঠনে সবার সমর্থন চাইলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ক্ষমতা নয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন চান তিনি।
শনিবার (৪ জানুয়ারী) সকালে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াত আমির ডাঃ শফিকুর রহমান’র সমাবেশে এই মূহর্তে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে কলেজ মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সুজাউদ্দিন জোয়ার্দার।
এ সময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যশোর অঞ্চল পরিচালক মো: মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো: শাহাবুদ্দিন, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আল্লামা শামীম সাঈদী, অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া অ্যান্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক আ ছ ম তরিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়া কুওয়াতুল ইসলাম আলীয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন,যে তারুণ্যের বুকের রক্তের বিনিময়ে জাতি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। আমরা সেই তারুণ্যনির্ভর মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। একটা শিশু জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন নাগরিকের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে, তা হবে হিংসা-হানাহানি ও সন্ত্রাসমুক্ত। স্বপ্নের সেই বাংলার তরুণরা আল্লাহকে ভয় করবে। মানুষকে ভালোবাসবে। বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়াবে। কোনো তদবির চলবে না। যোগ্যতায় চাকরি পাবে প্রার্থীরা। নারীদের সম্ভমহানি হবে না।
জামায়াতের আমির আরো বলেন, বিতাড়িত ফ্যাসিবাদ সাড়ে ১৫ বছরে দেশের মানুষকে শুধু খুন, গুম উপহার দিয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সুযোগ নেই, কারণ এটা জনগণ চাইবে না। জনগণ শান্তি চায়। জনগণের চাওয়া পাওয়ার কিছু থাকে না। তাদের চাওয়া একটাই নাগরিকের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে।
জেলা জামায়াতের নেতারা বলেন, গত পনের বছর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছিল। ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। জামায়াতের উপর তারা অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। এ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বৈষম্যহীন স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ১০ দফা ঘোষনা করেছেন।
অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন আন্তজার্তিক খ্যাতীসম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সুযোগ্য পুত্র শামীম সাঈদী।
কুষ্টিয়া জেলা সম্মেলনে সকাল ছয়টা থেকে নেতা-কর্মীরা আসা শুরু করেন। সাড়ে আটটায় কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শুরু করেন বক্তৃতা। নয়টার মধ্যে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনস্রোত আছড়ে পড়ে আশপাশের সব রাস্তায়। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে শহর। এ কারণে শহরে সব ধরনের যান চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। বিশাল এই কর্মী সম্মেলনের শৃঙ্খলা দেখে প্রশংসা করেন শহরের মানুষ।
প্রিন্ট