আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ)গভীর নলকূপে অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম- দুর্নীতি, সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমানের অপসারণ ও অপারেটর নিয়োগ স্থগিত এবং আওয়ামী মতাদর্শী অপারেটরদের অব্যাহতি দিয়ে নতুন অপারেটর নিয়োগের দাবিতে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাও, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
জানা গেছে,১ জানুয়ারী বুধবার সকালে প্রায় সহস্রাধিক বিক্ষুব্ধ কৃষক বিএমডিও কার্যালয় ঘেরাও করে সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান, তার ভাই শিক্ষক রেজা ও মেকানিক মেহেদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।এসময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এদিকে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরাও যোগদেন। পরবর্তীতে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌর সদরের প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিন করে উপজেলা চত্ত্বরে গিয়ে পথসভা করেন। পথসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান,তানোর পৌর বিএনপির আহবায়ক একরাম আলী মোল্লা ও চাঁন্দুড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনপ্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন,আওয়ামী মতদর্শী সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান তার ভাই শিক্ষক রেজা ও মেকানিক মেহেদীর মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আওয়ামী মতাদর্শীদের অপারেটর নিয়োগ করেছেন। তারা বলেন, জামিনুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি,ঘুষের টাকা ফেরত, রেজা ও মেহেদীর শাস্তি,নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ও আওয়ামী মতাদর্শী অপারেটরদের অব্যাহতি দিয়ে কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগ দিতে হবে।তা না হলে আগামিতে আরো বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষণা করা হবে,প্রয়োজনে বিএমডিএর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে,উপজেলায় বিএমডিএর ৫৩৬টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬টি গভীর নলকুপ রয়েছে। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং গত ৩ নভেম্বর অপারেটর নিয়োগের আবেদন ফরম বিতরণ শুরু করা হয়। প্রতিটি ফরমের জন্য অফেরতযোগ্য এক হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।উপজেলায় গভীর নলকূপের অপারেটর পদে এক হাজার ৫৯৬টি আবেদন বিক্রি হলেও জমা পড়ে এক হাজার ৫৩০টি। চলতি মাসের ১৯ ডিসেম্বর, ২২ ডিসেম্বর ও ২৩ ডিসেম্বর গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্যদের পাশাপাশি আওয়ামী মতাদর্শীদের অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ,সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান তার ভাই রেজা ও মেহেদীর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে আওয়ামী মতাদর্শীদের অপারেটর নিয়োগ দিয়েছেন। তারা আরো বলেন, সারাদেশে যখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী মতাদর্শী দোসরদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে, তখন তানোরে আওয়ামী মতাদর্শীদের পুর্নবাসন করতেই তাদের অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের খোলসে যারা দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর গভীর নলকূপ নিয়ন্ত্রণে রেখে সাধারণ কৃষকদের শোষণ করে মোটাতাজা হয়েছে,তারাই আবার অপারেটর নিয়োগ পেয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার অপারেটর নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশের পর পরই সাধারণ কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উপজেলা জুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড় ,বইছে মুখরুচক নানা গুঞ্জন, জনমনেও দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।
এদিকে অপারেটর নিয়োগ নীতিমালায় বলা হয়েছে,যিনি অপারেটর নিয়োগ পাবেন তিনি কোনো অবস্থাতেই অন্যকোন ব্যক্তিকে দিয়ে নলকুপ পরিচালনা করতে পারবেন না এবং তাকে রাতে নরকুপের ঘরে অবস্থান করতে হবে।
এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই নলকুপ স্কীমে তার নিজস্ব ফসলি জমি থাকতে হবে ইত্যাদি শর্ত দেয়া হয়েছে।অথচ আওয়ামী মতাদর্শী পরিবারের এমন নারী-পুরুষ অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে,যারা রাতে নলকুপের ঘরে অবস্থান তো পরের কথা নলকুপে যাবেই না।বড় অঙ্কের টাকা আর্থিক সুবিধা দিয়ে অপারেটর নিয়োগ নিয়ে এখন তারা অন্যকে দিয়ে নলকুপ পরিচালনা করা উদ্যোগ নিয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন,আওয়ামী মতাদর্শী সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। তিনি বলেন, বিএমডিএ’র পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্যর যোগসাজশে সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান বিএনপির ভোটের মাঠ নষ্ট,কোন্দল সৃষ্টি ও তাদের নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে কৌশলে আওয়ামী মতাদর্শীদের অপারেটর নিয়োগ করেছে।তাদের উদ্দেশ্যে এভাবে অপারেটর নিয়োগ করা হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে নেতার ওপর অভিমান করে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়বে।আর এমন হলে আগামি সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে প্রচন্ড সমস্যায় পড়তে হবে।
তিনি বলেন, নিয়োগ পুনর্বিবেচনা করা না হলে প্রয়োজনে সাধারণ কৃষকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা বলেন,উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা এবং তাদের দোসরেরা অপারেটর নিয়োগ পেয়েছেন কি বিবেচনায়। এটা অবশ্যই অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
এবিষয়ে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিরপেক্ষ ও শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়োগ কমিটি নিয়োগ দিয়েছে এখানে তার কোনো হাত নাই।
প্রিন্ট