উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর ও চৌবাড়িয়া বাজার হয়ে নবগঙ্গা নদী থেকে শুরু করে বাবুখালী ইউনিয়নের চূড়ারগাতি হয়ে মধুমতী নদীতে মিলিত হয়েছে খালটি। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে খালটি পুনর্খনন করা হয়েছিল। পাউবো গত ৮ মার্চ এই খালের খননকাজ শুরু করে। এরই মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের তলদেশ চাহিদা অনুযায়ী খনন না করে শুধু পাড়ের মাটি কেটে প্রস্থ বাড়ানো হয়েছে। ওই মাটি আবার খালের পাড়ে ফেলার কারণে বর্ষায় মাটি ধসে ফের খালে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিতে কিছু অংশের মাটি ধসেও গেছে। ফলে দুই পাড়ের বাসিন্দারা লাভের বদলে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
মাগুরা পাউবো সূত্র মতে, দেশের ৬৪টি জেলায় ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় মহম্মদপুর উপজেলার এমডি-১ খাল খননের কাজ হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খনন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ৮ মার্চ শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে কাজের ৯০ ভাগের বেশি শেষ হয়েছে। খাল খননের দায়িত্ব পাওয়া\হঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালীর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ এবং মো. মিজানুর আলম নামের ঠিকাদার খালটি খনন করছেন।
ঠিকাদারদের নিয়োগপ্রাপ্ত আরিফুর রহমান বলেন, চুক্তির মধ্যে মাটি অপসারণের কোনো শর্ত ছিল না। পাউবো মাটি রাখার জন্য যেসব জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে, সেখানেই তা ফেলা হয়েছে। এখানে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা যথাসম্ভব মানুষের ক্ষতি এড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।
সরেজমিন বুধবার খাল এলাকায় দেখা যায়, খালের খনন করা মাটি পাড়ে রাখা হয়েছে। বেশকিছু অংশের মাটি ইতোমধ্যে ধসে গেছে। স্থানীয় চৌবাড়িয়া বাজারের ৮-১০টি দোকানঘর ও কয়েকটি বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে। টানা বৃষ্টি হলে যে কোনো সময় দোকান ও বাড়ি ধসে বিপদ ঘটতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, খালটি খননের ক্ষেত্রে নিয়মের তোয়াক্কা করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাপাউবোর লোকজন খনন কাজও তদারকি করেনি। মাটি দূরে না ফেলে পাড়েই রেখে দেওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হতেই কিছু অংশের মাটি ধসে গেছে। এ ছাড়া খালের দুই পাড়ে প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগানোর কথা থাকলেও এখনও লাগানো হয়নি।
চৌবাড়িয়া গ্রামের আলী আফজাল মোল্লার স্ত্রী রওশন আরা বলেন, ‘আমরা গরিব। মাটি ফেলার সময় বাধা দিলেও তারা শোনেনি। উঠানে কয়ডা আমগাছ, জামগাছ ছিল, তাও মাটির তলে চলে গেছে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে। মাটি ধুয়ে খালে চলে যাচ্ছে। এমন হলে বাড়িঘর খালে গিয়ে পড়বে।’
বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্নিষ্টদের নির্লিপ্ততা ও খামখেয়ালির কারণে খননকাজ ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। ভাঙন বড় আকার ধারণ করলে অনেক দোকানঘর, বসতবাড়ি বিলীন হবে। সরকারের বরাদ্দের টাকার অংশ যে পানিতে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
এ বিষয়ে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, খালের মাটি রাখা হয়েছে অধিগ্রহণকৃত জায়গায়। এভাবে খালের পাড় ভাঙার কথা নয়, হয়তো মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে কিছুটা ভাঙন হচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে মাটি শক্ত হয়ে যাবে। এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।