ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শার্শায় শিয়াল মারার ফাঁদে কৃষকের মৃত্যু    Logo তানোরে একতা যুব সংঘের নিজস্ব অর্থায়নে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন Logo ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিসে ৩ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন দালাল আটক Logo দুর্নীতিবাজ-মাফিয়াদের রাজনীতি চাই না”— ঝালকাঠিতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণা Logo কুষ্টিয়ায় পাউবোর কোটি টাকার তেল চুরির অভিযোগে দুদকের অভিযান Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছেলের বউকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর গ্রেফতার Logo ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৩ বিষয়ে ফেল Logo কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অস্ত্র-মাদকসহ আটক ১ Logo কুষ্টিয়া পৌরসভার গেটে আবর্জনা ফেলে কর্মবিরতিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে লাইনেই রোগীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখানোর জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও জনবল সংকটের অভিযোগ উঠেছে।

 

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের জোতভালুকা গ্রামের হাফিজা খাতুন (৫০) মারা যান। তার আত্মীয় রোমেসা খাতুন জানান, রোববার রাতে শাশুড়ির বুকে ব্যথা শুরু হলে, তারা চিকিৎসার জন্য সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে যান। সেখানে দীর্ঘ এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটেন এবং পরবর্তীতে আরও আধা ঘণ্টা ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করেন। বারবার অনুরোধ করেও তারা ডাক্তার দেখাতে পারেননি। শেষমেশ, দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হাফিজা খাতুন মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানান, তিনি মারা গেছেন।

 

রোমেসা খাতুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তার শাশুড়ির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।

 

হাসপাতালের চিকিৎসকরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটের কারণে হাসপাতাল সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে হাসপাতাল চালানো হচ্ছে।”

 

অধিকাংশ চিকিৎসক ও নার্সের অভাবের কারণে হাসপাতালটিতে ভোগান্তি চলছে। কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫৯টি পদে ৯৮টি শূন্য, এর মধ্যে ২০টি চিকিৎসক পদ ফাঁকা। বর্তমানে ১০ জন চিকিৎসক কাজ করছেন, যার মধ্যে তিনজন ছুটিতে আছেন।

 

উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইদুল আলম বলেন, “আমি জানি না, কক্ষে কী ঘটেছে। তবে রোগী দেখতে আসার জন্য একজন চিকিৎসক দরকার ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ চালানো হচ্ছে।”

 

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিপাশা বৈশাখী জানান, মৃত রোগীটি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৯ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, এখানে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৯০ থেকে ১২০ রোগী ভর্তি হন এবং বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০০-৫১০ রোগী সেবা নেন। এর মধ্যে জরুরি বিভাগে ১৫০ রোগী সেবা নেয়।

 

এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামীমা আক্তার জানান, রোগীর চাপ অনেক, কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল নেই। বর্তমানে উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

 

 

এ ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. মিকাইল ইসলাম বলেন, “মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করা হবে এবং জনবলের সংকট সমাধানে জেলার সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পার্বতীপুরে মাদ্রসার ৪ একর জায়গা জবরদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে লাইনেই রোগীর মৃত্যু

আপডেট টাইম : ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
ইসমাইল হােসেন বাবু, ষ্টাফ রিপােটার :

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখানোর জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও জনবল সংকটের অভিযোগ উঠেছে।

 

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের জোতভালুকা গ্রামের হাফিজা খাতুন (৫০) মারা যান। তার আত্মীয় রোমেসা খাতুন জানান, রোববার রাতে শাশুড়ির বুকে ব্যথা শুরু হলে, তারা চিকিৎসার জন্য সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে যান। সেখানে দীর্ঘ এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটেন এবং পরবর্তীতে আরও আধা ঘণ্টা ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করেন। বারবার অনুরোধ করেও তারা ডাক্তার দেখাতে পারেননি। শেষমেশ, দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হাফিজা খাতুন মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানান, তিনি মারা গেছেন।

 

রোমেসা খাতুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তার শাশুড়ির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।

 

হাসপাতালের চিকিৎসকরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটের কারণে হাসপাতাল সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে হাসপাতাল চালানো হচ্ছে।”

 

অধিকাংশ চিকিৎসক ও নার্সের অভাবের কারণে হাসপাতালটিতে ভোগান্তি চলছে। কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫৯টি পদে ৯৮টি শূন্য, এর মধ্যে ২০টি চিকিৎসক পদ ফাঁকা। বর্তমানে ১০ জন চিকিৎসক কাজ করছেন, যার মধ্যে তিনজন ছুটিতে আছেন।

 

উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইদুল আলম বলেন, “আমি জানি না, কক্ষে কী ঘটেছে। তবে রোগী দেখতে আসার জন্য একজন চিকিৎসক দরকার ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ চালানো হচ্ছে।”

 

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিপাশা বৈশাখী জানান, মৃত রোগীটি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৯ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, এখানে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৯০ থেকে ১২০ রোগী ভর্তি হন এবং বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০০-৫১০ রোগী সেবা নেন। এর মধ্যে জরুরি বিভাগে ১৫০ রোগী সেবা নেয়।

 

এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামীমা আক্তার জানান, রোগীর চাপ অনেক, কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল নেই। বর্তমানে উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

 

 

এ ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. মিকাইল ইসলাম বলেন, “মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করা হবে এবং জনবলের সংকট সমাধানে জেলার সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।”


প্রিন্ট