ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নাটোরের লালপুরে খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন

উত্তরাঞ্চলের জনপদে শীতের আগমনী বার্তা আসতেই শীত মৌসুমকে সামনে রেখে নাটোরের লালপুরে খেজুর গাছ প্রস্তুত ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী গাছিরা। শীতকাল এলে বাড়ে খেজুর গাছের কদর, কারণ এই সময় গ্রামীণ জীবনে খেজুর গাছ হয়ে ওঠে জীবিকা নির্বাহের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এজন্য গাছিরা খেজুর গাছের ডাল এবং শাখা-প্রশাখা কেটে পরিষ্কার করছেন রস সংগ্রহের জন্য।

 

স্থানীয়রা জানান, লালপুরে মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ একটি অমূল্য সম্পদ। শীত মৌসুমের শুরুতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি গুড় বিক্রি হতে শুরু করে। মধুবৃক্ষ খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে লালপুর উপজেলা এখন দেশের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই অঞ্চলের খেজুর গুড়ের পাটালি রাজশাহী, ঢাকা, চাঁপাই, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুরসহ দেশের নানা জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে। ফলে অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর এখন অনেক বেশি।

 

সকাল থেকে শুরু হয় খেজুর গাছ প্রস্তুতের কাজ। কিছুদিনের মধ্যে রস সংগ্রহের কাজ শুরু হবে, আর গাছ ঝোড়া ও রস সংগ্রহকে ঘিরে এলাকায় কর্মচাঞ্চল্যও শুরু হয়ে গেছে।

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালপুর উপজেলায় প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে, যা সড়ক, রেললাইনের দুই ধারে, জমির আইলে, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে আছে। প্রতি গাছ থেকে মৌসুমে প্রায় ২৫ কেজি গুড় উৎপাদন করা হয়। এবছর লালপুর উপজেলায় গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭,২৫০ মেট্রিক টন। শীত মৌসুমে প্রায় ২ হাজার পরিবার খেজুরগাছের ওপর নির্ভরশীল।

 

খেজুর গাছের বিশেষ সুবিধা হল, এটি ফসলের কোনো ক্ষতি করে না, ফলে এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। খেজুর গাছ জঙ্গলে কিংবা ঝোপঝাড়ে যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে। শীত মৌসুমে শুধু নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় এবং রস সংগ্রহ করা হয়।

 

সরেজমিনে উপজেলার মোহরকয়া, মোমিনপুর, মহারাজপুর, পাইকপাড়া, হাসিমপুর, রায়পুর, সাধুপাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ পরিষ্কার করতে বেশ ব্যস্ত। খেজুর গাছের কাঁটাযুক্ত ডাল কেটে নতুন কাঠ সাদা অংশ বের করার কাজ চলছে, ইতিমধ্যে কিছু গাছি রস সংগ্রহও শুরু করেছেন।

 

বিলমড়ীয়ার মোহরকয়া গ্রামের গাছি মুনসুর রহমান (৪০) বলেন, “খেজুর গাছের কাঠ পরিষ্কার করে চেঁছে ১০ দিন শুকাতে হয়। তারপর বিশেষ কৌশলে কিছু অংশ বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে রস সংগ্রহে ব্যবহারের জন্য বাঁশের তৈরি কাঠি লাগানো হয়। প্রতিদিন কাঠের কিছু অংশ চেঁছে ফেলতে হয়। শুকানো কাঠ থেকে রস খেতে মিষ্টি হয়।”

 

আরেক গাছি, নাগশোষা গ্রামের সেন্টু আলী (৫২) জানান, তিনি প্রতিদিন প্রায় ৫০-৫৫টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। একজন গাছি শীত মৌসুমে প্রায় ৩ মাসে একটি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি গুড় সংগ্রহ করেন।

 

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, “নিরাপদ গুড় উৎপাদন এবং বাদুড় থেকে খেজুরের রসের মাধ্যমে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছে। গাছের পাত্র ঢেকে রেখে রস সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে যাতে গুড়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।”

 

 

এভাবে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদন গ্রামের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা শুধুমাত্র স্থানীয় জীবিকার উৎস নয়, বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায় সুস্বাদু খেজুর গুড়ের পাটালি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোরের গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন

error: Content is protected !!

নাটোরের লালপুরে খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন

আপডেট টাইম : ০৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
মোঃ আনিসুর রহমান, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি :

উত্তরাঞ্চলের জনপদে শীতের আগমনী বার্তা আসতেই শীত মৌসুমকে সামনে রেখে নাটোরের লালপুরে খেজুর গাছ প্রস্তুত ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী গাছিরা। শীতকাল এলে বাড়ে খেজুর গাছের কদর, কারণ এই সময় গ্রামীণ জীবনে খেজুর গাছ হয়ে ওঠে জীবিকা নির্বাহের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এজন্য গাছিরা খেজুর গাছের ডাল এবং শাখা-প্রশাখা কেটে পরিষ্কার করছেন রস সংগ্রহের জন্য।

 

স্থানীয়রা জানান, লালপুরে মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ একটি অমূল্য সম্পদ। শীত মৌসুমের শুরুতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি গুড় বিক্রি হতে শুরু করে। মধুবৃক্ষ খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে লালপুর উপজেলা এখন দেশের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই অঞ্চলের খেজুর গুড়ের পাটালি রাজশাহী, ঢাকা, চাঁপাই, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুরসহ দেশের নানা জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে। ফলে অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর এখন অনেক বেশি।

 

সকাল থেকে শুরু হয় খেজুর গাছ প্রস্তুতের কাজ। কিছুদিনের মধ্যে রস সংগ্রহের কাজ শুরু হবে, আর গাছ ঝোড়া ও রস সংগ্রহকে ঘিরে এলাকায় কর্মচাঞ্চল্যও শুরু হয়ে গেছে।

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালপুর উপজেলায় প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে, যা সড়ক, রেললাইনের দুই ধারে, জমির আইলে, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে আছে। প্রতি গাছ থেকে মৌসুমে প্রায় ২৫ কেজি গুড় উৎপাদন করা হয়। এবছর লালপুর উপজেলায় গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭,২৫০ মেট্রিক টন। শীত মৌসুমে প্রায় ২ হাজার পরিবার খেজুরগাছের ওপর নির্ভরশীল।

 

খেজুর গাছের বিশেষ সুবিধা হল, এটি ফসলের কোনো ক্ষতি করে না, ফলে এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। খেজুর গাছ জঙ্গলে কিংবা ঝোপঝাড়ে যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে। শীত মৌসুমে শুধু নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় এবং রস সংগ্রহ করা হয়।

 

সরেজমিনে উপজেলার মোহরকয়া, মোমিনপুর, মহারাজপুর, পাইকপাড়া, হাসিমপুর, রায়পুর, সাধুপাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ পরিষ্কার করতে বেশ ব্যস্ত। খেজুর গাছের কাঁটাযুক্ত ডাল কেটে নতুন কাঠ সাদা অংশ বের করার কাজ চলছে, ইতিমধ্যে কিছু গাছি রস সংগ্রহও শুরু করেছেন।

 

বিলমড়ীয়ার মোহরকয়া গ্রামের গাছি মুনসুর রহমান (৪০) বলেন, “খেজুর গাছের কাঠ পরিষ্কার করে চেঁছে ১০ দিন শুকাতে হয়। তারপর বিশেষ কৌশলে কিছু অংশ বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে রস সংগ্রহে ব্যবহারের জন্য বাঁশের তৈরি কাঠি লাগানো হয়। প্রতিদিন কাঠের কিছু অংশ চেঁছে ফেলতে হয়। শুকানো কাঠ থেকে রস খেতে মিষ্টি হয়।”

 

আরেক গাছি, নাগশোষা গ্রামের সেন্টু আলী (৫২) জানান, তিনি প্রতিদিন প্রায় ৫০-৫৫টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। একজন গাছি শীত মৌসুমে প্রায় ৩ মাসে একটি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি গুড় সংগ্রহ করেন।

 

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, “নিরাপদ গুড় উৎপাদন এবং বাদুড় থেকে খেজুরের রসের মাধ্যমে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছে। গাছের পাত্র ঢেকে রেখে রস সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে যাতে গুড়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।”

 

 

এভাবে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদন গ্রামের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা শুধুমাত্র স্থানীয় জীবিকার উৎস নয়, বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায় সুস্বাদু খেজুর গুড়ের পাটালি।


প্রিন্ট