উত্তরাঞ্চলের জনপদে শীতের আগমনী বার্তা আসতেই শীত মৌসুমকে সামনে রেখে নাটোরের লালপুরে খেজুর গাছ প্রস্তুত ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী গাছিরা। শীতকাল এলে বাড়ে খেজুর গাছের কদর, কারণ এই সময় গ্রামীণ জীবনে খেজুর গাছ হয়ে ওঠে জীবিকা নির্বাহের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এজন্য গাছিরা খেজুর গাছের ডাল এবং শাখা-প্রশাখা কেটে পরিষ্কার করছেন রস সংগ্রহের জন্য।
স্থানীয়রা জানান, লালপুরে মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ একটি অমূল্য সম্পদ। শীত মৌসুমের শুরুতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি গুড় বিক্রি হতে শুরু করে। মধুবৃক্ষ খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে লালপুর উপজেলা এখন দেশের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই অঞ্চলের খেজুর গুড়ের পাটালি রাজশাহী, ঢাকা, চাঁপাই, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুরসহ দেশের নানা জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে। ফলে অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর এখন অনেক বেশি।
সকাল থেকে শুরু হয় খেজুর গাছ প্রস্তুতের কাজ। কিছুদিনের মধ্যে রস সংগ্রহের কাজ শুরু হবে, আর গাছ ঝোড়া ও রস সংগ্রহকে ঘিরে এলাকায় কর্মচাঞ্চল্যও শুরু হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালপুর উপজেলায় প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে, যা সড়ক, রেললাইনের দুই ধারে, জমির আইলে, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে আছে। প্রতি গাছ থেকে মৌসুমে প্রায় ২৫ কেজি গুড় উৎপাদন করা হয়। এবছর লালপুর উপজেলায় গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭,২৫০ মেট্রিক টন। শীত মৌসুমে প্রায় ২ হাজার পরিবার খেজুরগাছের ওপর নির্ভরশীল।
খেজুর গাছের বিশেষ সুবিধা হল, এটি ফসলের কোনো ক্ষতি করে না, ফলে এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। খেজুর গাছ জঙ্গলে কিংবা ঝোপঝাড়ে যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে। শীত মৌসুমে শুধু নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় এবং রস সংগ্রহ করা হয়।
সরেজমিনে উপজেলার মোহরকয়া, মোমিনপুর, মহারাজপুর, পাইকপাড়া, হাসিমপুর, রায়পুর, সাধুপাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ পরিষ্কার করতে বেশ ব্যস্ত। খেজুর গাছের কাঁটাযুক্ত ডাল কেটে নতুন কাঠ সাদা অংশ বের করার কাজ চলছে, ইতিমধ্যে কিছু গাছি রস সংগ্রহও শুরু করেছেন।