ঠাকুরগাঁওয়ে অভাবের তাড়নায় ৮’শত টাকার বিনিময়ে নবজাতক শিশুকে বিক্রি করলেন প্রতিবন্ধী গর্ভধারিণী মা। অন্যদিকে নিজেই জানে না শিশুটির বাবা কে? এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের বাতেন মোড় গুচ্ছ গ্রামে।
ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় দৈনিক এ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে বিষয়টি সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে। পত্রিকার বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে রানা নামে লোকের সাথে বিয়ে হয় ফেরদৌসির। তবে তিন বছর আগে রানার সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে তার। তারপর থেকেই অভাবের সংসারে দুই ছেলেকে নিয়ে কঠিন দিনানিপাত শুরু করেন তিনি।
এক পর্যায়ে বাধ্য হোন খারাপ পথে পা বাড়াতে। ছেলেদের মানুষ করতে দেহ ব্যবসায় নামেন প্রতিবন্ধী ফেরদৌসি। খেয়ে-পরে বেচে থাকার জন্যই বিভিন্ন মানুষের সাথে শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হন তিনি।
এভাবেই অনাকাংকিতভাবে একটি সন্তান জন্ম নেয়। বাচ্চাটির প্রকৃত বাবা কে এটাও জানেন না ফেরদৌসি। পরবর্তীতে প্রসব ব্যথা উঠলে ঠাকুরগাঁও মাতৃসদন হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারিতে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
নিজের চিকিৎসার খরচ এবং শিশুটির খরচ বহন করার মতো কেউ না থাকায় ৮’শত টাকা নগদ নিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে নবজাতক শিশুটিকে তুলে দেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বরুনাগাঁওয়ের এক লোকের কাছে। নাম জিজ্ঞাসা করলে তার নাম জানে না বলে জানান ফেরদৌসি। এদিকে ঐ এলাকাবাসী বলেন, ফেরদৌসি দুই ছেলেকে নিয়ে এই গুচ্ছ গ্রামে আসে। তখন তার স্বামী ছিল না।
পরবর্তীতে আমরা একাধিকবার তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার স্বামী নেই বলে জানান ফেরদৌসি। কিন্তু আমরা তার ঘরে একাধিক পুরুষ ঢুকতে দেখেছি। এ ব্যাপারে তার সাথে কথা বললে আত্মিয়ের পরিচয় দিত। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে ততটা ভাবিনি। কিন্তু স্বামী না থাকা অবস্থায় তার পেটে বাচ্চা আছে এটা শুনে আমরা অবাক হই। গতকাল বাচ্চাটি দুনিয়াতে আসার পরপরই আবার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন এই মেয়েটি। সভ্য সমাজে এ ধরনের দেহ ব্যবসায়ীর বিচার চেয়ে বাচ্চাটির সঠিক সুরাহার আবেদন করেন এলাকাবাসী।
অন্যদিকে প্রতিবন্ধী মা ফেরদৌসি বলেন, আমার স্বামী রানা অন্য আরেকটা বিয়ে করে আমাকে ডিভোর্স দেয়। আমি একটা বুড়ার কাছে টাকা পেতাম, তার কাছে টাকা চাইতে গেলে তিনি আমার সাথে জোর করে খারাপ কাজ করেন। আবার অন্য একটা জায়গায় বেড়াতে গেলে সেখানেও আমাকে একটা ছেলে জোর করে আমার সাথে খারাপ কাজ করে। দুই ছেলে নিয়ে আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। ক্যামেরার সামনে বলতে অনিচ্ছুক প্রকাশ করে তিনি অনেক গোপন কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের।
তিনি আরো বলেন, অভাবের তাড়নায় আমি খারাপ কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। এভাবে আমার পেটে সন্তান আসলে বরুনাগাঁওয়ের এক দম্পত্তির সাথে কথা হয়। আমার ছেলে সন্তান হলে তিনি নেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে মাতৃসদনে আমার মেয়ে সন্তানের জন্ম হলে আমার চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ তারাই বহন করেছিল। লিখিত স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নিয়ে নগদ ৮০০ টাকা দিয়েছে আর আমার মেয়েকে আমি তাদেরকে দিয়ে দিয়েছি।
অন্যদিকে সুশীল সমাজের অনেকেই মন্তব্য করে বলেন, ফেরদৌসি সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়েছে অন্যদিকে প্রতবন্ধী ভাতাও পায়। নিজে পরিশ্রম করে উপার্জন করার চেষ্টা না করে এ ধরনের খারাপ কাজ সমাজের জন্য হুমকিস্বরুপ। তাই বিষয়টি তদন্ত করে বাচ্চাটির সুন্দর ব্যবস্থা করাসহ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার কারণে ফেরদৌসির উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন তারা।
প্রিন্ট