ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ Logo বাইসাইকেল নিয়ে সেতুর উপরে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেলাে শুভ’র Logo রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি’র গোছানো মাঠ নষ্টের চেষ্টা Logo রাজশাহীতে আনসার ও ভিডিপি’র মতবিনিময় সভা Logo ফরিদপুরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শ্যামনগরে নারীদের এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবেদনশীল কর্মশালা Logo বাঘায় আনিসুরকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার রায়হানের Logo কালুখালীতে বিএনপি’র প্রতিবাদ সমাবেশ Logo জুলাই গণঅভুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে বাগাতিপাড়ায় স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত Logo গোয়ালন্দে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মহম্মদপুর বাজারে পাবলিক টয়লেটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষী রাণী !

প্রতিদিনই কমবেশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক চালাই আমরা। গতকালও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। “মহম্মদপুরে টয়লেটে ঘুমিয়ে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাওয়া একটি ঘর” এমন শিরোনামে একটি পোষ্ট ফেসবুকের মাধ্যমে হঠাৎ চোখে ধরা পড়ে। মুহুর্তেই হতভম্ব হয়ে যাই ! সরেজমিনে খোঁজ নিতে ১৪ জুলাই রবিবার সকালেই মোটরসাইকেলে একসহকর্মীকে সাথে নিয়ে ছুটে যাই মহম্মদপুর বাজারে। খুঁজে বের করি পাবলিক টয়লেট।
সেখানে গিয়ে দেখতে পাই ৬৫ বছর বয়সের লক্ষী রাণী টয়লেটের দরজার সামনে বসে ভাত খাচ্ছেন ! তিনি যে ভাত খাচ্ছেন, তা পচাঁ গলা ! তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আমাদের দেখে কেঁদে কেঁদে বললেন, বাবা তুমরা কারা ? আমার কেউ নাই, সারাদিন এহানে শুয়ে থাহি। রাত হলি গুচ্ছগ্রামের ওবায়দুল্লাহর ভাঙ্গা রান্নাঘরে শুয়ে থাহি। কোনরহম রান্না ওইহানে হরি।
আমার কেউ নাই, স্বামী নাই, থাহার জায়গা ও ঘর নাই। আমি পায়খানার মধ্যে থাহি, এহেনে খাই ! আমি কোনদিন খেয়ে, আবার কোনদিন না খেয়ে জীবন যাপন করছি। শান্তিতে ঘুমোতে পারি না।
এমন বেদনাদায়ক কথা গুলো কেঁদে কেঁদে দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা প্রতিনিধিকে বলছিলেন মাগুরা জেলার মহম্মদপুর বাজারে অবস্থিত আর.এস.কে.এইচ বিদ্যালয়ের পাশে একটি পাবলিক টয়লেটের পরিচ্ছন্নতাকর্মী লক্ষী রাণী।
লক্ষী রাণীর বাবার বাড়ি মাগুরা বৌ বাজার। তার বিয়ে হয় ঝিনাইদহ। স্বামী নিমাই বেশ কয় বছর আগে মারা যান। তার এক মেয়ে বিয়ে হয়েছে ফরিদপুরে। এই পৃথিবীতে আপন বলতে এখন আর কেউ নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোন রকম জিবন চালিয়েছে। তারপর বিভিন্ন জায়গায় টয়লেট পরিস্কারের কাজ করতেন লক্ষী রাণী। অনেক বছর ধরে রয়েছেন মহম্মদপুরে। তার নেই ঘর-বাড়ি, নেই জায়গা-জমি। তিনি অনেকটা অসুস্থ রয়েছেন। প্রতিদিন ঔষধ খেতে হয়।
কিছুদিন আগে থেকে মহম্মদপুর বাজারে নতুন পাবলিক টয়লেট পরিস্কারে কাজ পেয়েছেন। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত সারাদিন ৫০ থেকে ৬০ টাকা পান মাত্র। তাও আবার সারাদিন কাজ শেষে কস্ট করে ভ্যান ভাড়া চলে যায় বিশ টাকা ! এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষী রাণী। তার আকুতি থাকার একটা ঘর। এক মুঠো ভাত চাই।
লক্ষী রাণী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘শুনেছি সরকার কত মানুষ গরিবগেরে সাহায্য দেয়। কিন্তু আমারে কেউ কিছু  দেয় না। আমারে কেউ একটা ভাতা করে দেয় না।
মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল আক্তার (উজ্জল) বলেন, লক্ষী রাণীর বিষয়টা আমি জানি এবং আমার পরিষদের যে সুযোগ সুবিধা আসে তা দেয়ার চেস্টা করবো।
মহম্মদপুর উপজেলা সার্টিফিকেট পেসকার বিধান চন্দ্র মন্ডল বলেন, লক্ষী রাণীর ব্যাপারটা আমরা জেনেছি। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো এবং ঘরের বরাদ্দ আসলে তাকে ঘর করে দেবো। সেই সাথে একটি ভ্রাম্যমান দোকান করে দেওয়ারও চেস্টা করবো।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ মন্ডল’কে অফিসে গিয়ে না পেয়ে তার মোবাইল ফোনে কল করলে, রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ

error: Content is protected !!

মহম্মদপুর বাজারে পাবলিক টয়লেটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষী রাণী !

আপডেট টাইম : ০১:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
মোঃ রফিকুল ইসলাম, পৌর প্রতিনিধি বোয়ালমারী (ফরিদপুর) :
প্রতিদিনই কমবেশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক চালাই আমরা। গতকালও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। “মহম্মদপুরে টয়লেটে ঘুমিয়ে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাওয়া একটি ঘর” এমন শিরোনামে একটি পোষ্ট ফেসবুকের মাধ্যমে হঠাৎ চোখে ধরা পড়ে। মুহুর্তেই হতভম্ব হয়ে যাই ! সরেজমিনে খোঁজ নিতে ১৪ জুলাই রবিবার সকালেই মোটরসাইকেলে একসহকর্মীকে সাথে নিয়ে ছুটে যাই মহম্মদপুর বাজারে। খুঁজে বের করি পাবলিক টয়লেট।
সেখানে গিয়ে দেখতে পাই ৬৫ বছর বয়সের লক্ষী রাণী টয়লেটের দরজার সামনে বসে ভাত খাচ্ছেন ! তিনি যে ভাত খাচ্ছেন, তা পচাঁ গলা ! তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আমাদের দেখে কেঁদে কেঁদে বললেন, বাবা তুমরা কারা ? আমার কেউ নাই, সারাদিন এহানে শুয়ে থাহি। রাত হলি গুচ্ছগ্রামের ওবায়দুল্লাহর ভাঙ্গা রান্নাঘরে শুয়ে থাহি। কোনরহম রান্না ওইহানে হরি।
আমার কেউ নাই, স্বামী নাই, থাহার জায়গা ও ঘর নাই। আমি পায়খানার মধ্যে থাহি, এহেনে খাই ! আমি কোনদিন খেয়ে, আবার কোনদিন না খেয়ে জীবন যাপন করছি। শান্তিতে ঘুমোতে পারি না।
এমন বেদনাদায়ক কথা গুলো কেঁদে কেঁদে দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা প্রতিনিধিকে বলছিলেন মাগুরা জেলার মহম্মদপুর বাজারে অবস্থিত আর.এস.কে.এইচ বিদ্যালয়ের পাশে একটি পাবলিক টয়লেটের পরিচ্ছন্নতাকর্মী লক্ষী রাণী।
লক্ষী রাণীর বাবার বাড়ি মাগুরা বৌ বাজার। তার বিয়ে হয় ঝিনাইদহ। স্বামী নিমাই বেশ কয় বছর আগে মারা যান। তার এক মেয়ে বিয়ে হয়েছে ফরিদপুরে। এই পৃথিবীতে আপন বলতে এখন আর কেউ নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোন রকম জিবন চালিয়েছে। তারপর বিভিন্ন জায়গায় টয়লেট পরিস্কারের কাজ করতেন লক্ষী রাণী। অনেক বছর ধরে রয়েছেন মহম্মদপুরে। তার নেই ঘর-বাড়ি, নেই জায়গা-জমি। তিনি অনেকটা অসুস্থ রয়েছেন। প্রতিদিন ঔষধ খেতে হয়।
কিছুদিন আগে থেকে মহম্মদপুর বাজারে নতুন পাবলিক টয়লেট পরিস্কারে কাজ পেয়েছেন। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত সারাদিন ৫০ থেকে ৬০ টাকা পান মাত্র। তাও আবার সারাদিন কাজ শেষে কস্ট করে ভ্যান ভাড়া চলে যায় বিশ টাকা ! এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষী রাণী। তার আকুতি থাকার একটা ঘর। এক মুঠো ভাত চাই।
লক্ষী রাণী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘শুনেছি সরকার কত মানুষ গরিবগেরে সাহায্য দেয়। কিন্তু আমারে কেউ কিছু  দেয় না। আমারে কেউ একটা ভাতা করে দেয় না।
মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল আক্তার (উজ্জল) বলেন, লক্ষী রাণীর বিষয়টা আমি জানি এবং আমার পরিষদের যে সুযোগ সুবিধা আসে তা দেয়ার চেস্টা করবো।
মহম্মদপুর উপজেলা সার্টিফিকেট পেসকার বিধান চন্দ্র মন্ডল বলেন, লক্ষী রাণীর ব্যাপারটা আমরা জেনেছি। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো এবং ঘরের বরাদ্দ আসলে তাকে ঘর করে দেবো। সেই সাথে একটি ভ্রাম্যমান দোকান করে দেওয়ারও চেস্টা করবো।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ মন্ডল’কে অফিসে গিয়ে না পেয়ে তার মোবাইল ফোনে কল করলে, রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রিন্ট