ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আজ গোয়ালন্দ প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গনহত্যা দিবসঃ স্বীকৃতি চান ২৪ শহীদ পরিবার

আজ ২১ এপ্রিল। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গনহত্যা দিবস।
 ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ ও গনহত্যায় শহীদ হন ২৪ জন বাঙালি। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাইনি তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল দিনটি ছিল বুধবার। ওই দিন কাকডাকা ভোরে আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি  বোঝাই করে পাকবাহিনী প্রথম এসে নামে পদ্মাপারের গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর কামারডাঙ্গি এলাকায়। সেখান থেকে বাহাদুরপুর এলাকায় আসলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনী হালকা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এ সময় হানাদারের বুলেটে প্রথম শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। এছাড়াও শহীদ হন প্রতিরোধ যোদ্ধা হাবিল মন্ডল ও ছবেদ আলী মন্ডল এবং গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন। এরপর পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙা গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন ওই গ্রামের স্বাধীনতাকামী ২৯ জন নিরীহ নারী-পুরুষ। পরবর্তিতে পাক বাহিনী গোয়ালন্দ বাজারে প্রবেশ করে আনছার ক্লাবসহ বাজারে ব্যাপক অগ্নিকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির মুখে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে একটি ছোট নামফলক নির্মাণ করা হয়। এটিই এখন তাদের কালের সাক্ষী। এখানে প্রতি বছর ২১ শে এপ্রিল শহীদ পরিবারগুলো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এছাড়া সম্মুখ যুদ্ধের স্হান বাহাদুরপুরে ইউসুফ শেখ নামের এক ব্যাক্তির দান করা দুই শতক জমিতে জেলা পরিষদের সহায়তায় কয়েক বছর আগে একটি একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানকাজ শুরু হয়।কিন্তু অর্থ সংকটে তা মাঝ পথে আটকে আছে।
এ বিষয়ে উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, অন্যান্যদের মতো আমার পিতা জিন্দার আলী মৃধাও সেদিন হানাদার বাহিনীর বুলেটে প্রান হারান। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের  ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা  শহীদ পরিবারগুলো সরকারী স্বীকৃতি পাইনি।
 বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা চিঠিতে আমরা দুই হাজার টাকা পেয়েছি এর পর আমরা আর কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।
প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়া আনছার সদস্য ইয়াজউদ্দিন শেখ বলেন, আমরা ছিলাম আনছার বাহিনীর প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সশস্ত্র সদস্য। সেদিন আমরা কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু পাক বাহিনীর ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদের সামনে প্রতিরোধ বেশি সময় স্হায়ী হয়নি। যুদ্ধে আমাদের বড় ভাই মহিউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। পরবর্তিতে পাক সেনারা গোয়ালন্দ বাজারে এসে আমাদের আনছার ক্লাবটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এই যুদ্ধে আমাদের কোন কোন আনছার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আমিসহ আরো অনেকেই স্বীকৃতি পাননি। অথচ এখানে অনেক অমুক্তিযোদ্ধাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাস্ট্রীয় সম্মান ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুস ছামাদ মোল্লা বলেন, ১৯৭১ সালের ২১ শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ সম্মুখ যুদ্ধে  আনছার সদস্য শহীদ ফকির মহিউদ্দিন নিহত হয়েছেন।  তার কোন ছেলে সন্তান নাই। সরকারের নিকট তার স্বীকৃতি দাবি করি । এছাড়া বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে যারা গনহত্যার শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারগুলোকে শহীদ পরিবারের মর্যাদা ও সরকারী সহায়তার দাবি করছি। একইসাথে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টিও সরকারীভাবে যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, পাক হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ  যুদ্ধে  যারা শহিদ হয়েছেন তারা যাতে শহীদ হিসাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।এছাড়া গনহত্যায় শহীদদের স্মৃতিস্তম্ব ৭১ তৈরির কাজ চলছে।  এই স্থানটি যাতে খ্যাতি পায় সে জন্য উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

আজ গোয়ালন্দ প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গনহত্যা দিবসঃ স্বীকৃতি চান ২৪ শহীদ পরিবার

আপডেট টাইম : ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
আবুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি :
আজ ২১ এপ্রিল। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গনহত্যা দিবস।
 ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ ও গনহত্যায় শহীদ হন ২৪ জন বাঙালি। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাইনি তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল দিনটি ছিল বুধবার। ওই দিন কাকডাকা ভোরে আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি  বোঝাই করে পাকবাহিনী প্রথম এসে নামে পদ্মাপারের গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর কামারডাঙ্গি এলাকায়। সেখান থেকে বাহাদুরপুর এলাকায় আসলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনী হালকা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এ সময় হানাদারের বুলেটে প্রথম শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। এছাড়াও শহীদ হন প্রতিরোধ যোদ্ধা হাবিল মন্ডল ও ছবেদ আলী মন্ডল এবং গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন। এরপর পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙা গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন ওই গ্রামের স্বাধীনতাকামী ২৯ জন নিরীহ নারী-পুরুষ। পরবর্তিতে পাক বাহিনী গোয়ালন্দ বাজারে প্রবেশ করে আনছার ক্লাবসহ বাজারে ব্যাপক অগ্নিকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির মুখে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে একটি ছোট নামফলক নির্মাণ করা হয়। এটিই এখন তাদের কালের সাক্ষী। এখানে প্রতি বছর ২১ শে এপ্রিল শহীদ পরিবারগুলো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এছাড়া সম্মুখ যুদ্ধের স্হান বাহাদুরপুরে ইউসুফ শেখ নামের এক ব্যাক্তির দান করা দুই শতক জমিতে জেলা পরিষদের সহায়তায় কয়েক বছর আগে একটি একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানকাজ শুরু হয়।কিন্তু অর্থ সংকটে তা মাঝ পথে আটকে আছে।
এ বিষয়ে উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, অন্যান্যদের মতো আমার পিতা জিন্দার আলী মৃধাও সেদিন হানাদার বাহিনীর বুলেটে প্রান হারান। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের  ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা  শহীদ পরিবারগুলো সরকারী স্বীকৃতি পাইনি।
 বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা চিঠিতে আমরা দুই হাজার টাকা পেয়েছি এর পর আমরা আর কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।
প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়া আনছার সদস্য ইয়াজউদ্দিন শেখ বলেন, আমরা ছিলাম আনছার বাহিনীর প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সশস্ত্র সদস্য। সেদিন আমরা কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু পাক বাহিনীর ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদের সামনে প্রতিরোধ বেশি সময় স্হায়ী হয়নি। যুদ্ধে আমাদের বড় ভাই মহিউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। পরবর্তিতে পাক সেনারা গোয়ালন্দ বাজারে এসে আমাদের আনছার ক্লাবটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এই যুদ্ধে আমাদের কোন কোন আনছার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আমিসহ আরো অনেকেই স্বীকৃতি পাননি। অথচ এখানে অনেক অমুক্তিযোদ্ধাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাস্ট্রীয় সম্মান ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুস ছামাদ মোল্লা বলেন, ১৯৭১ সালের ২১ শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ সম্মুখ যুদ্ধে  আনছার সদস্য শহীদ ফকির মহিউদ্দিন নিহত হয়েছেন।  তার কোন ছেলে সন্তান নাই। সরকারের নিকট তার স্বীকৃতি দাবি করি । এছাড়া বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে যারা গনহত্যার শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারগুলোকে শহীদ পরিবারের মর্যাদা ও সরকারী সহায়তার দাবি করছি। একইসাথে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টিও সরকারীভাবে যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, পাক হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ  যুদ্ধে  যারা শহিদ হয়েছেন তারা যাতে শহীদ হিসাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।এছাড়া গনহত্যায় শহীদদের স্মৃতিস্তম্ব ৭১ তৈরির কাজ চলছে।  এই স্থানটি যাতে খ্যাতি পায় সে জন্য উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

প্রিন্ট