লোভনীয় বিদেশি মজাদার ও সুস্বাদু ফল আমেরিকান ফ্যাসটিভ্যাল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম। এলাকায় তাকে সবাই এখন স্ট্রবেরি নজরুল বলে ডেকে থাকেন।
শখের বসে ২০১৪ সালে রাজশাহী অঞ্চলে স্ট্রবেরি বাগান দেখে নিজ এলাকায় কৃষি জমিতে গড়ে তোলেন স্ট্রবেরির বাগান। প্রথম বছর লাভের মুখ না দেখলেও এখন সে এক মৌসুমে শুধু একটি বাগান থেকেই আয় করছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পরিসর বৃদ্ধি করছেন তিনি। কৃষক নজরুলের সফলতায় এখন এলাকায় অনেক যুবক মূলধারার ফল চাষের পাশাপাশি স্ট্রবেরি চাষের দিকে ঝুকছেন।
জানা গেছে, কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা সারাদেশে বেশ পরিচিত। এই অঞ্চলের মাটি ফসল চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এখানে প্রায় সব ধরনের ফল ও সবজির আবাদ হয়ে থাকে। আম, লিচু, কাঁঠাল থেকে শুরু করে দেশি ও বিদেশি প্রায় সব ধরনের সবজির আবাদ হয়ে থাকে এখানে। এই অঞ্চলের কৃষকেরা চাষাবাদকেই প্রধান কর্ম হিসেবে বেছে নিয়ে বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন।
ধারাবাহিক ফল ও সবজির চাষের পাশাপাশি কৃষক নজরুল স্ট্রবেরি চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। স্বল্প খরচে অল্পদিনেই অধিক অর্থ আয়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে তিনি এখন প্রতি বছর স্ট্রবেরি চাষ করে আসছেন। ৫০০ চারা দিয়ে এক বিঘাতে শুরু করা ফলের বাগান এখন তিন বিঘায় পরিণত হয়েছে। মৌসুমের প্রথম দিকে স্বল্প ফলন হলেও ভরা মৌসুমে প্রতি বিঘা থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার মণ করে স্ট্রবেরি ফল উত্তোলন করেছেন তিনি।
বাজারে চাহিদা থাকায় দামও বেশ ভালো। প্রথম দিকে পাইকার প্রতি কেজি স্ট্রবেরি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। পরে মৌসুমের মাঝামাঝি ও শেষ দিকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে। বিগত বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন কৃষক নজরুল। এক বিঘা স্ট্রবেরি ফলের বাগান করতে খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। আর যা থেকে ফলন পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৫০ মণ।
স্থানীয় কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষক নজরুল ভাই আমাদের ঈশ্বরদী অঞ্চলে প্রথম স্ট্রবেরি ফলের চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে ঝুকছেন।
আমাদের এলাকার মানুষ চাকরি আর ব্যবসা যে কাজই করুক সবাই কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নজরুল ভাই আমাদের ঈশ্বরদী অঞ্চলের নাম করা একজন কৃষক। এলাকায় সে স্ট্রবেরি নজরুল নামে বেশ পরিচিত। স্ট্রবেরি চাষ করে ভালো অর্থ উপার্জন করছেন। তার এই সফলতায় এখন এলাকার অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে ঝুকছেন।
বাগানে কাজ করা শ্রমিক রানা মন্ডল বলেন, মাঠের অন্যান্য কাজের চাইতে এই কাজে করে বেশ আনন্দ লাগে। চারা লাগানো সেই চারা থেকে ফল পাওয়া। লাল রঙের ফল দেখতেও বেশ ভালো খেতে বেশ মজার। সকাল থেকে ফল তুলে সেই ফল প্যাকেট করে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিতে হয়। রং ও আকার দেখে ফল তুলতে হয়। এই খামারে দিন মজুরি হিসাবে কাজ করছি বেশ কয়েক জন। এখানে সব ধরনের ফসলের আবাদ হয়ে থাকে।
স্ট্রবেরি চাষি কৃষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ রাজশাহী ঘুরতে গিয়ে স্ট্রবেরির বাগান দেখে আমার ভালো লাগে। তখন ইচ্ছে হয় স্ট্রবেরি চাষ করবো। পরে গ্রামে নিজের জমিতে পরের বছরই চারা সংগ্রহ করে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করি। প্রথম বছর ভালো ফল পায়নি। তবে দ্বিতীয় বছর থেকে বেশ ভালো ফল আসতে শুরু করে। প্রথমে এক বিঘা জমি দিয়ে শুরু করে এখন তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছি স্ট্রবেরি। প্রতি বছর সব খরচ বাদ দিয়ে চার থেকে ৫ লাখ টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, এই বছরে কৃষি বিভাগ থেকে আমাকে এক বিঘা জমির ওপরে পলিনেট সেড করে দিয়েছে। এখন দুই সিজেন ফল করবো। বিদেশি এই ফল চাষ করে বেশ সুনাম পেয়েছি।
১২০ দিনের এই ফল দেশের বিভিন্ন জেলাসহ রাশিয়ানদের আবাসন স্থল ঈশ্বরদী গ্রিন সিটি বাজারে এই ফল ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই ফল বিক্রি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। ভালো দামে ফল বিক্রি হয়ে যায়। বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ীরা ফোন করে ফলের চাহিদা দেয় আমি সবাইকে কম বেশি দিয়ে থাকি। আমার এই ফলের বাগান দেখে এখন এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি স্ট্রবেরির ফলের বাগ করেছে এলাকার বেকার যুবকেরা। আমি তাদের চারা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ- পরিচালক শস্য মো. রোকনুজ্জামান বলেন, সারাশের মানুষ ও কৃষি বিভাগ জানেন কৃষি সমৃদ্ধ অন্যতম জেলা পাবনা। আবার এর মধ্যে ঈশ্বরদী অঞ্চল ফল ও সবজির জন্য বেশ ভালো। দেশি ফলের মধ্যে ঈশ্বরদীতে লিচুর ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে স্বল্প পরিসরে বিদেশি স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সারা ফেলেছেন কৃষক নজরুল। আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাতের এই স্ট্রবেরি চাষ করছেন তিনি। কৃষিবিভাগ সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছে। তার এই সফলতায় জেলার অন্যান্য কৃষক এই বিদেশি ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। স্ট্রবেরি ফল চাষ করে এক দিকে ফলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে কৃষকরা স্বল্প সময়ে বেশ ভালো লাভ করছেন।
প্রিন্ট