ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তানোরে জমিদারি শাসনে কৃষকের আর্তনাদ

রাজশাহীর তানোরে জমিদারি শাসনের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে,বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের একশ্রেণীর অপারেটর এলাকায় জমিদারের উমেদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈধ অপারেটরদের বিতাড়িত করে রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরাচোমরারা ভুয়া সমিতি করে কৃষকদের জমি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন।
তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে উপজেলার হাজার হাজার কৃষক। কিন্ত্ত স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিএমডিএ’র কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। অথচ এসব উমেদারদের অপতৎপরতার কারণে কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন চিত্র চাপা পড়ে যাচ্ছে। সরকারি দল ও স্থানীয় সাংসদের বিপক্ষে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে বলে শোনা যাচ্ছে। তাদের জমিদারি শাসনে সাধারণ কৃষকের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হলেও প্রতিকার মিলছে না। এটা যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছে। কাবুলিওয়ালা প্রথা ও জমিদারি শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে বহুকাল আগেই, জমিদারি শাসন ব্যবস্থায় কৃষক শোষণের কথা শোনা গেলেও, সেরকম চিত্রই যেনো শত বছর পর মিলল তানোরের মাঠে মাঠে। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে মামলা-হামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের (ইউপি) নিমঘুটু গ্রামে এসব উমেদারের দৌরাত্ম্যে  বোরোখেতে সেচের পানি না পেয়ে কৃষক অভিনাথ ও রবি বোরো খেতেই বিষপানে আত্মহত্যা করে প্রতিবাদ জানান। এর পরেও ঘুম ভাঙ্গেনি বরেন্দ্রর। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এখানো ডিপ অপারেটদের জুলুম-শোষণ-নির্যাতন চলছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়িত্ব পাওয়া হোমরাচোমরারা (অপারেটর) কৃষকের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর আলু মৌসুমে কৃষকের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের জমি ফড়িয়া আলুচাষিদের ইজারা দিয়ে তারা লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে। কেউ ইজারা দিতে না চাইলে তার জমিতে সেচ বন্ধ করে দেয়। এতে কৃষকেরা বাধ্য হয় অপারেটরের কাছে জমি দিতে। কিন্ত্ত অপারেটরেরা প্রতি বিঘা জমি ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় ইজারা দেন। আর জমির মালিককে ১০-১২ হাজার টাকা দেন। এটা অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে কৃষকের কাছে আর্শিবাদের গভীর নলকুপ  এখন অভিশাপ বা শাঁখের করাঁতে পরিণত হয়েছে।
কারণ একদিকে গভীর নলকুপ স্কীমে জমি চাষ করলে অপারেটরেরা শোষণ করে, অন্যদিকে জমি চাষ না করলে খাবারসহ আর্থিক সংকটে পড়ে।এদিকে এসব অপারেটরদের কারণে কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সচেতন মহল এসব অপারেটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ রয়েছে ৫৩৬টি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন রয়েছে ১৬টি, মোট ৫৫২টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমি। অগভীর বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্র রয়েছে ৪১১টি।
সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়। অন্যদিকে একটি গভীর নলকুপ স্কীমে দেড়শ’ থেকে আড়াইশ” বিঘা জমিতে আলুচাষ হয়। প্রতি মৌসুমে সেই হিসেবে একজন অপারেটর কৃষকের জমি ইজারা দিয়ে প্রায় ৬-৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
উপজেলার কামারগাঁ ইউপির ধানুরা, মাদারীপুর,মালশিরা, হাতিশাইল, ছাঐড়,হরিপুর, তালন্দ ইউপির নারায়নপুর,আড়াদীঘি, মোহর,লালপুর, সরনজাই ইউপির শুকদেবপুর, কাচারিপাড়া, সরনজাই, পাঁচন্দর ইউপির ইলামদহী, দুবইল, কৃষ্ণপুর, চিমনা, কুন্দাইন ও প্রাণপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক বলেন, একটি গভীর নলকূপ স্কীমে দেড়শ’ থেকে আড়াইশ’ বিঘা আলু চাষ হয়। একজন অপারেটর প্রতিবিঘা জমি ইজারায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আত্মসাৎ করেন।
স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী কৃষকের দুঃখ-দুরদশা লাঘবের জন্য সকল গভীর নলকুপ সমিতির মাধ্যমে পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএমডিএ’র উর্ধতন কর্তৃপক্ষেরও নির্দেশনা রয়েছে। অপারেটর গভীর নলকুপ পরিচালনা এবং সমিতি আয়-ব্যয় দেখাশোনা করবেন। তারা কোনো অবস্থাতেই কোনো কৃষকের জমি ইজারা দিতে পারবেন না। কিন্ত্ত অজ্ঞাত কারণে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এতে প্রশ্ন উঠেছে এসব অপারেটর ও রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরাচোমরাদের খুঁটির জোর কোথায় ? এরা কি সাংসদ বা বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের থেকেও শক্তিশালী ? যদি না হয়, তাহলে তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন-? এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর বিএমডিএ’র  সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, জমি লীজ কিভাবে হবে এসব তাদের দেখার বিষয় না, তাদের প্রধান কাজ নিরবিচ্ছিন্ন সেচ নিশ্চিত করা। তার পরেও কোনো কৃষক লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

তানোরে জমিদারি শাসনে কৃষকের আর্তনাদ

আপডেট টাইম : ১০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
রাজশাহীর তানোরে জমিদারি শাসনের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে,বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের একশ্রেণীর অপারেটর এলাকায় জমিদারের উমেদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈধ অপারেটরদের বিতাড়িত করে রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরাচোমরারা ভুয়া সমিতি করে কৃষকদের জমি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন।
তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে উপজেলার হাজার হাজার কৃষক। কিন্ত্ত স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিএমডিএ’র কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। অথচ এসব উমেদারদের অপতৎপরতার কারণে কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন চিত্র চাপা পড়ে যাচ্ছে। সরকারি দল ও স্থানীয় সাংসদের বিপক্ষে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে বলে শোনা যাচ্ছে। তাদের জমিদারি শাসনে সাধারণ কৃষকের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হলেও প্রতিকার মিলছে না। এটা যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছে। কাবুলিওয়ালা প্রথা ও জমিদারি শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে বহুকাল আগেই, জমিদারি শাসন ব্যবস্থায় কৃষক শোষণের কথা শোনা গেলেও, সেরকম চিত্রই যেনো শত বছর পর মিলল তানোরের মাঠে মাঠে। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে মামলা-হামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের (ইউপি) নিমঘুটু গ্রামে এসব উমেদারের দৌরাত্ম্যে  বোরোখেতে সেচের পানি না পেয়ে কৃষক অভিনাথ ও রবি বোরো খেতেই বিষপানে আত্মহত্যা করে প্রতিবাদ জানান। এর পরেও ঘুম ভাঙ্গেনি বরেন্দ্রর। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এখানো ডিপ অপারেটদের জুলুম-শোষণ-নির্যাতন চলছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়িত্ব পাওয়া হোমরাচোমরারা (অপারেটর) কৃষকের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর আলু মৌসুমে কৃষকের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের জমি ফড়িয়া আলুচাষিদের ইজারা দিয়ে তারা লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে। কেউ ইজারা দিতে না চাইলে তার জমিতে সেচ বন্ধ করে দেয়। এতে কৃষকেরা বাধ্য হয় অপারেটরের কাছে জমি দিতে। কিন্ত্ত অপারেটরেরা প্রতি বিঘা জমি ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় ইজারা দেন। আর জমির মালিককে ১০-১২ হাজার টাকা দেন। এটা অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে কৃষকের কাছে আর্শিবাদের গভীর নলকুপ  এখন অভিশাপ বা শাঁখের করাঁতে পরিণত হয়েছে।
কারণ একদিকে গভীর নলকুপ স্কীমে জমি চাষ করলে অপারেটরেরা শোষণ করে, অন্যদিকে জমি চাষ না করলে খাবারসহ আর্থিক সংকটে পড়ে।এদিকে এসব অপারেটরদের কারণে কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সচেতন মহল এসব অপারেটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ রয়েছে ৫৩৬টি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন রয়েছে ১৬টি, মোট ৫৫২টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমি। অগভীর বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্র রয়েছে ৪১১টি।
সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়। অন্যদিকে একটি গভীর নলকুপ স্কীমে দেড়শ’ থেকে আড়াইশ” বিঘা জমিতে আলুচাষ হয়। প্রতি মৌসুমে সেই হিসেবে একজন অপারেটর কৃষকের জমি ইজারা দিয়ে প্রায় ৬-৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
উপজেলার কামারগাঁ ইউপির ধানুরা, মাদারীপুর,মালশিরা, হাতিশাইল, ছাঐড়,হরিপুর, তালন্দ ইউপির নারায়নপুর,আড়াদীঘি, মোহর,লালপুর, সরনজাই ইউপির শুকদেবপুর, কাচারিপাড়া, সরনজাই, পাঁচন্দর ইউপির ইলামদহী, দুবইল, কৃষ্ণপুর, চিমনা, কুন্দাইন ও প্রাণপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক বলেন, একটি গভীর নলকূপ স্কীমে দেড়শ’ থেকে আড়াইশ’ বিঘা আলু চাষ হয়। একজন অপারেটর প্রতিবিঘা জমি ইজারায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আত্মসাৎ করেন।
স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী কৃষকের দুঃখ-দুরদশা লাঘবের জন্য সকল গভীর নলকুপ সমিতির মাধ্যমে পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএমডিএ’র উর্ধতন কর্তৃপক্ষেরও নির্দেশনা রয়েছে। অপারেটর গভীর নলকুপ পরিচালনা এবং সমিতি আয়-ব্যয় দেখাশোনা করবেন। তারা কোনো অবস্থাতেই কোনো কৃষকের জমি ইজারা দিতে পারবেন না। কিন্ত্ত অজ্ঞাত কারণে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এতে প্রশ্ন উঠেছে এসব অপারেটর ও রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরাচোমরাদের খুঁটির জোর কোথায় ? এরা কি সাংসদ বা বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের থেকেও শক্তিশালী ? যদি না হয়, তাহলে তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন-? এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর বিএমডিএ’র  সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, জমি লীজ কিভাবে হবে এসব তাদের দেখার বিষয় না, তাদের প্রধান কাজ নিরবিচ্ছিন্ন সেচ নিশ্চিত করা। তার পরেও কোনো কৃষক লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।