কুষ্টিয়ায় পদ্মার চর থেকে মিলন হোসেন নামে এক যুবকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের ৯টি খণ্ড পৃথক ছয় স্থানে পুঁতে রাখা হয়েছিল।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ সংলগ্ন পদ্মার চর থেকে মরদেহের টুকরোগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ যুবককে নিয়ে মরদেহর খোঁজে রাতভর পদ্মার চরে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের নেতৃত্ব দেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ।
নিহত মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহির মাদি এলাকার মাওলা বক্সের ছেলে। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি আউট সোর্সিংয়ের কাজ করত। গত ১০ মাস আগে তিনি বিয়ে করেছেন। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় ঈদগাহের পাশে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। সেই সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার করে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তিনি অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জন করতেন বলে দাবি পুলিশের।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কী কারণে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে; সে বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে মিলনের স্ত্রী মিমো খাতুন জানান, স্বামী মিলনের সঙ্গে হাউজিংয়ের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি। বুধবার সকালে হাউজিং এলাকার সজল মিলনকে মোবাইলে কল করে ডাকেন। তার সঙ্গে দেখা করে বাসায় এসে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার বের হয়ে যান মিলন। এরপর আর ফিরে আসেননি। ওই দিনই কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। পরের দিন দুপুর পর্যন্ত তার স্বামীর মোবাইল খোলা ছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে মিলনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন মিমো।
পুলিশ জানায়, মিলন আউট সোর্সিংয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ করে টাকা উপার্জন করতেন। বিষয়টি জানার পর মিলনের বন্ধু কিশোর গ্যাংয়ের নেতা এসকে সজিব ও তার কয়েকজন সহযোগী গত বুধবার সকালে তাকে হাউজিংয়ের একটি ছয় তলা বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মিলনের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে মিলনকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ গুম করার জন্য হ্যান্ড স ব্লেড দিয়ে মিলনের মহদেহের ৯ টুকরা করে নদীর চরে পুঁতে রাখে। তাদের দাবি, চাঁদার দাবিতে এস কে সজিবের নেতৃত্ব এই হত্যা কাণ্ড। এ ঘটনায় সজিবসহ তার সহকর্মী ফয়সাল, লিংকন, জনি এবং ইফতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ জানান, গত ৩১ জানুয়ারি সকালে মিলন বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। ওইদিন সন্ধ্যায় তার স্ত্রী মিমো খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করেন। জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। মোবাইলের একটি কল লিস্টের সূত্রধরে প্রথমে মিলনের এক বন্ধুকে আটক করা হয়।
তার স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, আরেক বন্ধু সজিবের নেতৃত্বে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে সজিবসহ আরো চারজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিলনকে হত্যার পর মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে হ্যান্ড স ব্লেড এবং সুপারি কাটা জাতি দিয়ে ৯ টুকরা করে নদীর চরে পুঁতে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে। এরপর শুক্রবার রাত ১২টার দিকে তাদেরকে নিয়ে হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ পদ্মা নদীর চরে অভিযান যায় পুলিশ। রাতভর অভিযান চালিয়ে নদীর চরের ছয়টি স্থান থেকে মিলনের খণ্ডিত মরহেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বাঁধ বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, টাকার দাবিতে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতরা সবাই একে অপরের পরিচিত। মিলন বাড়ি থেকে অনলাইনে কাজ করতো। নিখোঁজের দিন তাকে মোবাইলে ডেকে হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ওইদিন রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। এরপর গুম করার সুবিধার্থে হ্যান্ড স ব্লেড দিয়ে মরদেহ টুকরো টুকরো করে নদীর চরে পুঁতে রাখা হয়েছিল। আর এই পুরো হত্যা কাণ্ডটির নেতৃত্ব দিয়েছে তারই বন্ধু সজিব। এর সাঙ্গে অন্য কোন ঘটনা আছে কিনা তা নিয়ে আরো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাউজিং এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে, সজিবের নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালিত হয়। মিলন নামে যাকে হত্যা করা হয়েছে সেও তাদের মতোই ছিল। তাদের কাজ ছিল ছেলে-মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা দাবি করা।
প্রিন্ট