যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত সৈনিক রইসউদ্দিনের (২৫) শিবগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া-শ্যামপুর গ্রামের কামরুজ্জামানের ছেলে। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারী) বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রইসউদ্দিনের মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি’র সৈনিক পদে যোগ দেন। এরপর দেশের সীমান্ত রক্ষায় বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্তরক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ধ্যানখোলা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন।
কিন্তু গত সোমবার ভোরে বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ বিএসএফ সদস্যরা নিয়ে যায় তাদের হেফাজতে। দেশ রক্ষার প্রতিজ্ঞায় বিজিবি চাকরিতে যোগ দেন রইসউদ্দিন। চাকরির ৮ বছরের মাথায় বিএসএফের গুলিতে জীবন দিতে হল সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী ২৫ বছর বয়সী এই সৈনিককে। বিজিবি জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার দিবাগত রাতে চোরাকারবারিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু আনার সময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা খবর পায়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা চোরাকারবারিদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা গরু ফেলে ভারতের অভ্যন্তরে পালিয়ে যায়। এ সময় বিজিবির টহল দলের সদস্য সৈনিক রইসউদ্দিন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশায় দলছুট হয়ে পড়েন। এরপর তাকে আর খুুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কাছে খবর আসে বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রইসউদ্দিন।
এদিকে সোমবার ভোরে রইসউদ্দিনের মৃত্যু হলেও তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে সোমবার রাতে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও তার স্বজনরা। যদিও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কও ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন। নিহত রইসউদ্দিনের চাচা আবদুল আলিম বলেন, দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর টগবগে এক যুবক দায়িত্বরত অবস্থায় সীমান্তে আরেকটি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে মারা যাবেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে রাষ্ট্রের কোন জরুরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছিনা। তিনি বলেন, মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। নিহতের স্ত্রী নাসরিন বেগম, দুই সন্তান ও বাবা-মাকে এলাকার মানুষ শান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ কর্মরত বাহিনীটির কোন সদস্য তার বাড়িতে যাননি।
স্থানীয় দোকানদার বাবু আলী বলেন, রইসউদ্দিনের এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে। ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসলেই মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অর্থ দিয়ে সহায়তা করত। গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতো। আমরা এখন তার সহায়তা থেকে বঞ্চিত হলাম। পরিবার হারাল তাদের সন্তানকে। রইসউদ্দিনের মেজো ভাই বিজিবি সদস্য মাসুম রেজা বলেন, আমি সোমবার রাতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ৪৯ ব্যাটালিয়নে অবস্থান করছি। কখন মরদেহ বুঝে পাবো, তারও নিশ্চয়তা নেই। শুনেছি বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত কি হয়েছে সেটিও জানতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা পাঁচ ভাই বোন। এর মধ্যে আমি আর রইসউদ্দিন বিজিবিতে ও বড় ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি বলেন, নিহত রইসউদ্দিনের দুটি সন্তান রয়েছে। চার বছরের বড় মেয়ে রায়সা ও পাঁচ মাসের শিশু হাসান রয়েছে। নিহতের স্ত্রী নাসরিন বেগম বলেন, বিয়ের অল্প সময়ে দুই শিশু সন্তান নিয়ে আমাকে বিধবা হতে হল। সন্তানদের কি বুঝ দিব আমি! আর আমি বা কিভাবে দুই সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করব। বিলাপ করতে করতে তিনি এমন হত্যাকান্ডের কঠোর বিচার দাবি করেছেন। তিনি বলেন, দায়িত্বে যাবার সময় মুঠোফোনে সবশেষ একবার কথা হয়েছে। আর কোনদিন কথা হবে না। দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান নিহতের স্ত্রী।
- আরও পড়ুনঃ জমি নিয়ে বিরোধ, দীর্ঘ দিনেও হয়নি সমাধান
এ সময় তার স্বজনরা তাকে বার বার শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। কোলে ছিলেন পাঁচ মাসের শিশু। এদিকে ওদিক ছোটাছুটি করছিলেন রইসউদ্দিনের বড় মেয়ে রাফিয়া। উল্লেখ, সোমবার ভোরে ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনয়ান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল এই সৈনিকের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক রইসউদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রিন্ট