গোপালগঞ্জে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর সনদ বিহীন হেলেন রানী বিশ্বাস নামের এক ভূয়া শিক্ষক এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নিচ্ছেন ক্লাস, দেখাচ্ছেন দাপট, দীর্ঘ ১৭বছর ধরে পাচ্ছেন সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা সহ বেতন-ভাতা। পাশাপাশি তিনি বিদ্যালটিতে নোংরা রাজনীতিও করছেন।
এমনি এক শিক্ষকের সন্ধান মিলেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ১৯ নং রঘুনাথপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এঘটনা শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা।ইতোমধ্যে মহতি এই পেশা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অভক্তি, অশ্রদ্ধা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী প্রশ্ন কি করে সনদ বিহীন শিক্ষক ১৭ বছর ধরে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাজ কি? বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি কি করছে?
বিদ্যালয়ের একটি গোপন সূত্রে জানা গেছে, হেলেন রানী বিশ্বাস ১৯৯৫ সালে রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লার্ক হিসাবে যোগদান করেন। ১০ বছর ক্লার্ক হিসাবে চাকুরী করেন। এরপর ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে তৎকালীন নিয়োগ কমিটিকে কৌশলে ম্যানেজ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর সনদ না থাকার পরেও সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এসময় তড়িঘড়ি করে এক দিনের ব্যবধানে ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি তারিখে স্কুলে যোগদান করেন। পরে ওই বছরই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, মাধ্যমিক উপজেলা শিক্ষা ও মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা অফিসারের দপ্তর ম্যানেজ করে এমপিওর তালিকাভুক্ত হয়ে বেতন ভাতা প্রাপ্ত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী সাংবাদিকদের জানান, জালিয়াতি করে নিয়োগ নেওয়া হেলেন রানী বিশ্বাস সরকারি বিধিমালা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটের সাথে ১৭ বছর ধরে অবৈধ পন্থায় সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করে আসছেন। এছাড়াও অযোগ্য, অদক্ষ এ শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের মধ্যে নোংরা রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। আমরা এনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অপরদিকে রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিবাবকগন ও রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সচেতন মহল সনদ বিহীন শিক্ষক হেলেন রানী বিশ্বাসকে তদন্তের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এবিষয়ে সনদ বিহীন শিক্ষক হেলেন রানী বলেন, আমি মিথ্যা বলবো না, আমার (এনটিআরসিএ) এর সনদ নেই, তবে সার্কুলারের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছি। সনদ বিহীন কিভাবে নিয়োগ পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তৎকালীন কমিটি ভালো জানে। নিয়োগের সময় ডিজির প্রতিনিধি ও মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধিও ছিলেন তাদের কাছে গিয়ে জানেন।
রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি এই স্কুলে ২০১০ সালে এসেছি, ওই শিক্ষকের পূর্বের কোন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে শুনেছি শিক্ষক হেলেন রানীর এনটিআরসির সনদ নেই। শিক্ষক হেলেন রানীর তৎকালীন সময়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, এটি অনেক পুরানো সার্কুলার এধরনের কোন কাগজ স্কুলের ফাইলে সংরক্ষিত নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম তালুকদার বলেন, এনটিআরসিএ সনদ বিহীন শিক্ষক হেলেন রানী উচ্চতর গ্ৰেডের জন্য আবেদন করেছিলেন, তার তদন্তভার পড়েছে আমার ওপর। তিনি আমার কাছে এসেছিলেন, আমি তার কাছে প্রয়জনীয় কাগজপত্র চাইলে তিনি এনটিআরসিএ সনদ দেখাতে পারেনি। ২০০৫ সালের শেষের দিকের নিয়োগ এনটিআরসিএ সনদ ছাড়া নিয়ম ভেঙে কিভাবে দিলেন তৎকালীন নিয়োগ কমিটি সেটি আমার বোধগম্য নয়।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এনটিআরসিএ সনদ ছাড়া ঐ সময়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি, সত্যতা থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়েগের জন্য ২০০৫ সাল থেকে স্কুল -কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা খর্ব করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)’কে দায়িত্ব দেয় মন্ত্রনালয়। এরপর থেকেই পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে এনটিআরসিএ কতৃপক্ষ। এবং মেধা তালিকার ভিত্তিতে সারা দেশে নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন।
প্রিন্ট