ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

জুয়ার আসরে প্রতিদিন কোটি টাকা হাতবদল!

প্রতিদিনই চলছে দৌলতপুরের বিভিন্ন স্পটে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা। সুত্র বলছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর ধরে চলছে এ জুয়ার আসর। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ৬টি স্পটে প্রতিদিন বসছে জমজমাট জুয়ার আসর। এসব জায়গায় জুয়া খেলতে এসে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে সর্বসান্ত হচ্ছে দৌলতপুর ও পাশের উপজেলাগুলো থেকে আসা বিভিন্ন পেসার লোকজন।

এদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জুয়া খেলার বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ার পরেও চোখে পড়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন। এতে চরম হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এই উপজেলার সাধারণ জনগণের মাঝে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সর্বনাশা জুয়া ছেড়ে আশা এক ব্যক্তি বলেন বর্তমানে দৌলতপুরে বড় ছয়টি জুয়ার আসর বসে। সেটি হলো রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিশ্ববাঁধ, হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর মাঠপাড়া, রিফাইতপুর ইউনিয়নের তেলিগাংদিয়া, মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়ার, মথুরাপুর ইউনিয়রে হোসেনাবাদ ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মাঠের মধ্যে বসছে জমজমাট জুয়ার আসর।

এছাড়াও উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বিভিন্ন দোকান বা পাড়া মহল্লায় বাঁশের মাচা করে জুয়ার আসর বসে। এদিকে দির্ঘদীন ধরে ৭/৮ জনের একটি গ্রুপ এই জুয়ার জায়গা-গুলো পরিচালনা করে আসছে। এদের মধ্যে রয়েছে তেলিগাংদিয়ার বাবু, হোসেনাবাদের লিটন, কল্যাণপুরের সজীব, বোয়ালিয়ার মানিক, বিশ্ববাঁধ এলাকার জহিরুল ও জুয়েল।

গত মাসের ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জুয়া খেলার বিষয়টিকে সামনে এনে দৌলতপুরের এক সিনিয়র সাংবাদিক বক্তব্য দেওয়াতে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি রাগান্বিত হয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। ওসির এমন আচরণে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাতে উপস্থিত সদস্যরা সহ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা হতভাগ হয়ে পড়েন।

এবিষয়ে রিফায়েতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাবলু বলেন তেলিগাংদিয়ার বিষয়টি একাধিকবার আইন শৃঙ্খলার মাসিক সভাতে উপস্থাপন করেও কোন শুরাহা হয়নি।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডলের কাছে যানতে চাইলে তিনি বলেন আল্লার ত্রিশ দিন বিশ্ববাধে জুয়ার আসর বসে। যেটা গত কিছুদিন আগে আমরা ১৪ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দৌলতপুর থানার ওসি’র চায়ের দাওয়াতে গিয়ে জুয়া খেলার বিষয়টি বলেছি এবং একাধিক বার আইন শৃঙ্খলার মাসিক সভায় বলেছি তাতে কোন লাভ হয়নি। পুলিশ, প্রশাসন জুয়ার আসর থেকে কোন অবৈধ শুবিধা নেয়কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে প্রশাসন এসে যাদেরকে ধরে টাকার বিনিময়ে আবার তাদেরকে ছেড়েও দেয়।

এসব জায়গায় জুয়া খেলার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সারা জীবনই জোয়া ও মাদকের বিপক্ষে, দৌলতপুরে কোন জায়গায় জুয়া চলে এটা আমি জানতাম না,এটা আপনার কাছে থেকেই আমি প্রথম শুনলাম, গত মাসেও জুয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দিয়েছি। কোন কোন স্পটে জুয়া চলে তার সঠিক তথ্য পেলে সে’সব স্পটে পুলিশ পাঠিয়ে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই জুয়া খেলা বন্ধ ও তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সুশীল সমাজ।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

জুয়ার আসরে প্রতিদিন কোটি টাকা হাতবদল!

আপডেট টাইম : ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০২৩
জিয়াউর রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি :

প্রতিদিনই চলছে দৌলতপুরের বিভিন্ন স্পটে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা। সুত্র বলছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর ধরে চলছে এ জুয়ার আসর। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ৬টি স্পটে প্রতিদিন বসছে জমজমাট জুয়ার আসর। এসব জায়গায় জুয়া খেলতে এসে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে সর্বসান্ত হচ্ছে দৌলতপুর ও পাশের উপজেলাগুলো থেকে আসা বিভিন্ন পেসার লোকজন।

এদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জুয়া খেলার বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ার পরেও চোখে পড়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন। এতে চরম হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এই উপজেলার সাধারণ জনগণের মাঝে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সর্বনাশা জুয়া ছেড়ে আশা এক ব্যক্তি বলেন বর্তমানে দৌলতপুরে বড় ছয়টি জুয়ার আসর বসে। সেটি হলো রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিশ্ববাঁধ, হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর মাঠপাড়া, রিফাইতপুর ইউনিয়নের তেলিগাংদিয়া, মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়ার, মথুরাপুর ইউনিয়রে হোসেনাবাদ ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মাঠের মধ্যে বসছে জমজমাট জুয়ার আসর।

এছাড়াও উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বিভিন্ন দোকান বা পাড়া মহল্লায় বাঁশের মাচা করে জুয়ার আসর বসে। এদিকে দির্ঘদীন ধরে ৭/৮ জনের একটি গ্রুপ এই জুয়ার জায়গা-গুলো পরিচালনা করে আসছে। এদের মধ্যে রয়েছে তেলিগাংদিয়ার বাবু, হোসেনাবাদের লিটন, কল্যাণপুরের সজীব, বোয়ালিয়ার মানিক, বিশ্ববাঁধ এলাকার জহিরুল ও জুয়েল।

গত মাসের ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জুয়া খেলার বিষয়টিকে সামনে এনে দৌলতপুরের এক সিনিয়র সাংবাদিক বক্তব্য দেওয়াতে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি রাগান্বিত হয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। ওসির এমন আচরণে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাতে উপস্থিত সদস্যরা সহ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা হতভাগ হয়ে পড়েন।

এবিষয়ে রিফায়েতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাবলু বলেন তেলিগাংদিয়ার বিষয়টি একাধিকবার আইন শৃঙ্খলার মাসিক সভাতে উপস্থাপন করেও কোন শুরাহা হয়নি।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডলের কাছে যানতে চাইলে তিনি বলেন আল্লার ত্রিশ দিন বিশ্ববাধে জুয়ার আসর বসে। যেটা গত কিছুদিন আগে আমরা ১৪ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দৌলতপুর থানার ওসি’র চায়ের দাওয়াতে গিয়ে জুয়া খেলার বিষয়টি বলেছি এবং একাধিক বার আইন শৃঙ্খলার মাসিক সভায় বলেছি তাতে কোন লাভ হয়নি। পুলিশ, প্রশাসন জুয়ার আসর থেকে কোন অবৈধ শুবিধা নেয়কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে প্রশাসন এসে যাদেরকে ধরে টাকার বিনিময়ে আবার তাদেরকে ছেড়েও দেয়।

এসব জায়গায় জুয়া খেলার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সারা জীবনই জোয়া ও মাদকের বিপক্ষে, দৌলতপুরে কোন জায়গায় জুয়া চলে এটা আমি জানতাম না,এটা আপনার কাছে থেকেই আমি প্রথম শুনলাম, গত মাসেও জুয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দিয়েছি। কোন কোন স্পটে জুয়া চলে তার সঠিক তথ্য পেলে সে’সব স্পটে পুলিশ পাঠিয়ে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই জুয়া খেলা বন্ধ ও তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সুশীল সমাজ।


প্রিন্ট