ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য হারাছে মুঘল সম্রাট শাহ সুজার নির্মিত মসজিদ

প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য ও অবকাঠামো হারাতে বসেছে মুঘল আমলে নির্মিত ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সম্রাট শাহ সুজার মল্লিকপুর জামে মসজিদ। নলছিটি বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন পৌর শহরের (৫-নং) ওয়ার্ড কেন্দ্রীয় গোরস্থানের পাশে প্রাচীন এই জামে মসজিদ অবস্থিত ।
এক গম্বুজ  বিশিষ্ট এই মসজিদটি সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়কালে নির্মাণ করা হয়ছে বলে ধারণা করা হয়। শাহজাহান বিশ্বাসসহ স্থানীয় অধিকাংশ প্রবীণদর মতে, মুঘল সম্রাট শাহ সুজা দক্ষিন বঙ্গের নৌপথে ডাকাতি ঠেকাতে সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী বর্তমান মগড় ইউনিয়ন সংলগ্ন এলাকায় একটি দূর্গ গড়ে তোলেন।স্থানীয় মুসল্লীরা তার আগমনের খবর পেয়ে তার কাছ একটি মসজিদ নির্মাণের আবেদন করেন। পরে তাদের আবেদন মঞ্জুর করে এই মসজিদটি তিনি নির্মাণ করে দেন।
অসাধারণ এই নির্মাণশৈলীর এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি মুঘল আমলের এক বিস্ময়কর সষ্টি। প্রাচীন এই মসজিদটি নিঃসন্দেহে  নলছিটি উপজলার অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। ৩০ ফুট লম্বা এবং ১৭ ফুট চওড়া এই মসজিদটি ১৬৪৮ সালে মুঘল শাসনামলের  স্থাপত্যশলীর এক চমৎকার নিদর্শন বহন করছে। ইতিহাস ঐহিত্য প্রেমীরা প্রায়ই দেশের দূর দূরান্ত থেকে মসজিদটি দেখতে ভীর করেন। তবে সঠিক নজরদারী, সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় স্থাপত্য কলা বিনষ্ট হওয়ার পথে। এর ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে মসজিদটির ইতিহাস ঐতিহ্য।
জানা যায়, শাহ সুজা ১৬১৬ সালের ২৩ জুন ভারতের আজমিরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং তাঁর রানী মমতাজ মহলের দ্বিতীয় পুত্র ও চতুর্থ সন্তান ছিলেন। শাহজাহানর সৎ মা সম্রাজ্ঞী নুর জাহান প্রিন্স শাহ সুজাকে তাঁর জন্মের পর দত্তক দেন। তাঁর উচ্চ পদমর্যাদা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং জাহাঙ্গীরের তার প্রতি স্নেহের কারণে তাকে এই নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুজা তাঁর পিতামহ সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিশেষ প্রিয় হওয়ায় সম্রাজ্ঞীর জন্যও এটি একটি সম্মানের বিষয় ছিল। শাহ সুজা ১৬৩৯ থক ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৬৪৮ সালে সুগন্ধা নদীর তীরে নলছিটির মল্লিকপুর এলাকায় তাঁর নামে নির্মিত হয় এই শাহ সুজা মসজিদ।
মসজিদের মুসুল্লি প্রভাষক মেসবাহ উদ্দিন খান রতন বলন, প্রাচীন নিদর্শন এই মসজিদটি যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা উচিত। কয়েকশত বছর আগের মুঘল নির্মাণশৈলী এখনো মুগ্ধ করার মতো। তবে সংস্কার না করলে হয়তো আর বেশি দিন স্থাপনাটি টিকে থাকতে পারবে না। জুম্মার নামাজসহ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এখানে স্থানীরা আদায় করেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, মুঘল সম্রাট শাহ সুজার আমলে নির্মিত এই মসজিদটি নলছিটি উপজলার অতীত, ঐতিহ্য ও গৌরব বহন করে। বাংলাদশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই মসজিদকে প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা একান্ত প্রয়াজন।
নলছিটি পৌর মেয়র বীর মুক্তিযাদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত। আমাদের মুরব্বিরা এই মসজিদে নামাজ পড়তেন, তখন অত্র এলাকায় মসজিদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। শাহ সুজার আমল নির্মিত মসজিদটি সংরক্ষণর অভাব হারিয়ে যেতে বসেছে, এটি রক্ষা করা প্রয়োজন।
উপজলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত ফরম পূরণ কর আবেদন করলে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করা যাবে। তবে প্রাচীন নিদর্শন গুলো বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য হারাছে মুঘল সম্রাট শাহ সুজার নির্মিত মসজিদ

আপডেট টাইম : ০১:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩
মোঃ আমিন হোসেন, ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি :
প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য ও অবকাঠামো হারাতে বসেছে মুঘল আমলে নির্মিত ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সম্রাট শাহ সুজার মল্লিকপুর জামে মসজিদ। নলছিটি বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন পৌর শহরের (৫-নং) ওয়ার্ড কেন্দ্রীয় গোরস্থানের পাশে প্রাচীন এই জামে মসজিদ অবস্থিত ।
এক গম্বুজ  বিশিষ্ট এই মসজিদটি সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়কালে নির্মাণ করা হয়ছে বলে ধারণা করা হয়। শাহজাহান বিশ্বাসসহ স্থানীয় অধিকাংশ প্রবীণদর মতে, মুঘল সম্রাট শাহ সুজা দক্ষিন বঙ্গের নৌপথে ডাকাতি ঠেকাতে সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী বর্তমান মগড় ইউনিয়ন সংলগ্ন এলাকায় একটি দূর্গ গড়ে তোলেন।স্থানীয় মুসল্লীরা তার আগমনের খবর পেয়ে তার কাছ একটি মসজিদ নির্মাণের আবেদন করেন। পরে তাদের আবেদন মঞ্জুর করে এই মসজিদটি তিনি নির্মাণ করে দেন।
অসাধারণ এই নির্মাণশৈলীর এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি মুঘল আমলের এক বিস্ময়কর সষ্টি। প্রাচীন এই মসজিদটি নিঃসন্দেহে  নলছিটি উপজলার অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। ৩০ ফুট লম্বা এবং ১৭ ফুট চওড়া এই মসজিদটি ১৬৪৮ সালে মুঘল শাসনামলের  স্থাপত্যশলীর এক চমৎকার নিদর্শন বহন করছে। ইতিহাস ঐহিত্য প্রেমীরা প্রায়ই দেশের দূর দূরান্ত থেকে মসজিদটি দেখতে ভীর করেন। তবে সঠিক নজরদারী, সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় স্থাপত্য কলা বিনষ্ট হওয়ার পথে। এর ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে মসজিদটির ইতিহাস ঐতিহ্য।
জানা যায়, শাহ সুজা ১৬১৬ সালের ২৩ জুন ভারতের আজমিরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং তাঁর রানী মমতাজ মহলের দ্বিতীয় পুত্র ও চতুর্থ সন্তান ছিলেন। শাহজাহানর সৎ মা সম্রাজ্ঞী নুর জাহান প্রিন্স শাহ সুজাকে তাঁর জন্মের পর দত্তক দেন। তাঁর উচ্চ পদমর্যাদা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং জাহাঙ্গীরের তার প্রতি স্নেহের কারণে তাকে এই নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুজা তাঁর পিতামহ সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিশেষ প্রিয় হওয়ায় সম্রাজ্ঞীর জন্যও এটি একটি সম্মানের বিষয় ছিল। শাহ সুজা ১৬৩৯ থক ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৬৪৮ সালে সুগন্ধা নদীর তীরে নলছিটির মল্লিকপুর এলাকায় তাঁর নামে নির্মিত হয় এই শাহ সুজা মসজিদ।
মসজিদের মুসুল্লি প্রভাষক মেসবাহ উদ্দিন খান রতন বলন, প্রাচীন নিদর্শন এই মসজিদটি যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা উচিত। কয়েকশত বছর আগের মুঘল নির্মাণশৈলী এখনো মুগ্ধ করার মতো। তবে সংস্কার না করলে হয়তো আর বেশি দিন স্থাপনাটি টিকে থাকতে পারবে না। জুম্মার নামাজসহ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এখানে স্থানীরা আদায় করেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, মুঘল সম্রাট শাহ সুজার আমলে নির্মিত এই মসজিদটি নলছিটি উপজলার অতীত, ঐতিহ্য ও গৌরব বহন করে। বাংলাদশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই মসজিদকে প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা একান্ত প্রয়াজন।
নলছিটি পৌর মেয়র বীর মুক্তিযাদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত। আমাদের মুরব্বিরা এই মসজিদে নামাজ পড়তেন, তখন অত্র এলাকায় মসজিদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। শাহ সুজার আমল নির্মিত মসজিদটি সংরক্ষণর অভাব হারিয়ে যেতে বসেছে, এটি রক্ষা করা প্রয়োজন।
উপজলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত ফরম পূরণ কর আবেদন করলে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করা যাবে। তবে প্রাচীন নিদর্শন গুলো বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

প্রিন্ট