ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ১৭জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন ১২জন শিক্ষক!

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ষোলদাগ এলাকায় কমলমতি মেয়েদের শিক্ষা লাভের জন্য ১৯৭৭ সালে নির্মিত হয় আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় আগের মতো লেখাপড়ার মান নেই। দিনে দিনে ছাত্রী সংখ্যা একবারেই কমে গেছে। এখন খুবই খারাপ অবস্থা। ছাত্রীর চেয়ে শিক্ষকই বেশী। কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করছে এই বিদ্যালয়ে।

 

সে কালের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিতে অ্যাসেম্বলি ও মা সমাবেশ হয় না। বাস্তবে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ও দেখা যায় না। উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাগজ কলমে ১৩৬ জন শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া আছে। বাস্তবে ৫৬জন শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় নাম লিপিবদ্ধ আছে। ৫টি ক্লাস মিলে প্রতিদিন শিক্ষার্থী উপস্থিত হার মাত্র ১৭/১৮জন। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে মোট ১৫জন। শিক্ষকরা প্রতিমাসে সরকারি বেতন উত্তোলন করেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। শিক্ষার মান যুগোপযোগী বৃদ্ধি করতে রয়েছে শিক্ষকদের চরম অবহেলা। ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের চোঁখে ঠুলি। বিদ্যালয়ের মাঠ বর্তমানে গোচারণ ভুমিতে পরিনীত হয়েছে। দেখার কেউ নেই।

 

স্থানীয়রা জানান,এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন যোগদানের পর হতেই লেখাপড়ার মান সর্ব নিম্নমুখি। তার উদাসীনতা নানা অনিয়ম গাফিলতি ও বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনা সৃষ্টিকরে রাখার প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে।

 

ফলে, একে বারেই কমে গেছে বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা। কমিটি নিয়ে স্থানীয় দলাদলি বিরাজমান। ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে এলাকার লোকজন তাদের মেয়েদেরকে এই বিদ্যালয়ে পড়াতে দিতে চান না। কাজীর গরু কিতাবে আছে,গোয়ালে নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করছে বর্তমান এই বিদ্যালয়ের। কাগজ কলমে ১৩৬জনের স্থলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রতিদিন ১৮জন। এমনটা চলে আসছে গত ৪ বছর যাবত। অনেক শিক্ষক প্রতিদিন না আসলে ও হাজিরা খাতায় শতভাগ উপস্থিতি স্বাক্ষর দেখানো হয়। তেমন ছাত্রী না থাকায় ১টা,২টা ক্লাস নিয়ে শিক্ষকরা অফিসে খোস গল্পে মেতে উঠেন। প্রতিমাসে শিক্ষদের বেতন বাবদ অযথা সরকারের ব্যয় গুনতে হচ্ছে ৩ লাখ ১১হাজার ১৯টাকা।

 

এই বিদ্যালয়ে হয় না অ্যাসেম্বলি, গাওয়া হয় না জাতীয় সংগীত । ছাত্রী উপস্থিতি কম,পাঠদানে শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দ শোনা যায় না। ছুটির ঘণ্টা বাজলে হই হুল্লা করে ছাত্রীদের বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য পূর্বের মতো চোখে পড়ে না। এতো অভিযোগ থাকার পর ও শিক্ষার মান যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করতে কারুর কোন মাথা ব্যাথা নেই। বিদ্যালয়ের কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন নিরব।

 

 

কয়েক বছর ধরে ২৭/২৮জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

 

এই বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষা অনুরাগী এ এম মুসা সাহেব। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম শাহ সূফী হযরত মাওলানা ডাঃ হাফেজ আব্দুর রশীদ।

 

ইতোপূর্বে, রওশন আরা বেগম প্রধান শিক্ষক থাকাকালনি শিক্ষা কার্যক্রম ভালো চলছিল। তিনি অবসরে যান। ম্যানেজিং কমিটিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মোঃ আনোয়ার হোসেন ১/৫/২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরী নেন। যোগদান করার কিচ্ছুদিন পর বিদ্যালয়ে তার আসা যাওয়া অনিয়ম। নানা গাফিলতির কারণে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান নিম্নমুখি। নানা বিষয় নিয়ে কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। একপর্যায় এলাকার লোককে সভাপতি থেকে বাতিল করে ভেড়ামারা উপজেলা নিবার্হী অফিসার কে দায়িত্ব দেওযা হয়। পদাধীকার বলে নিবার্হী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু ঐ বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি। তার পর ও কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে। নামকাঅস্তে ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম চলছে।

 

নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয়টির সবগুলো শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই কম। বেঞ্চগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে গিয়ে দেখি বড় একটি রুমের মধ্যে মাত্র ৩জন ছাত্রীকে নিয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষিকা রোজিনা খাতুন। ৭ম শ্রেণীতে ৬জন ছাত্রীকে নিয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষক তোহিদুল ইসলাম সান্টু। মোট ৫টি শ্রেণী কক্ষে ছাত্রী সংখ্যা ১৭জন উপস্থিত ছিলো গতকাল বৃহস্প্রতিবারের দিন। পরে অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষক মিলে খোসগল্পে মেতেছেন। এই রকম চিত্র প্রতিকার্য দিবসেরই বলে শুনা যায়।

 

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর এমপিওভুক্ত হয়। সেই সময় এই বিদ্যালয়ের দারুণ সুনাম থাকলে ও এখন লেখা পড়া মান মোটেই ভালো না। যার কারণে ছাত্রী সংখ্যা ২৭/২৮ জনে এসে ঠেকেছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো পড়া শুনা হয় না। মাত্র গুটি কয়েক জন ছাত্রী প্রতিদিন স্কুলে আসে। শিক্ষকদের কারণে শিক্ষার্থীরা ও বিদ্যালয় থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে।

 

বিদ্যালয়ের গেটের সামনে কয়েক জন দোকান ব্যবসায়ীরা বলেন, বিদ্যালয়ের হেড স্যার যোগ্য না। কমিটির লোকজন অনেক টাকা নিয়ে তাকে চাকরী দিয়েছেন। এখন আর তারা নেই। প্রধান শিক্ষক যোগ্য না হওয়ায় বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। লেখাপড়ার মান নেই ছাত্রীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে। শিক্ষকদের মধ্যে মিল নেই। হেড স্যারের কথা কেউ শোনে না। কিছু কিছু শিক্ষক নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে লেখা পড়ার ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে কলুষিত করেছেন। সচেতন অভিভাবক এখানে মেয়েদের কে ভর্তি করাতে চান না। কয়েকজন ছাত্রী ভর্তি হলেও তারা ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসে না। মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী দিয়ে বিদ্যালয় চালানো হচ্ছে ক্লাস।

 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তোহিদুর ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী আছে। সেই শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো উপস্থিত হয় না। কেন হয় না,তা বলতে পারবো না।

 

আজিজুল ও আব্দুল ওয়াহাব নামের দুইজন সহকারী শিক্ষক বলেন,আমাদের এখানে ছাত্রী সংখ্যা খুবই কম। অভিভাবকরা পড়ানোর জন্য অনেকেই শহর মুখি মেয়েদের কে নিয়ে গেছে। আবার এলাকার অন্য স্কুলে ভর্তি করেছে। এই খানে যারা ভর্তি আছে। বিদ্যালয়ে ঠিকমতো তারা ও আসে না। যে কয়জন আসে তাদের কে পাঠদান দেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ শুনেছেন, সেগুলো সত্য নয়। বরং সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ঠিকমত আসে না, পড়ায় না। যে সব মেয়েরা স্কুলে আসে না, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কে উদ্বুদ্ধ করা জন্য শিক্ষকদের কে পাঠালে তারা যায় না। আমার কথা শোনে না। এই কারণেই শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে।

 

ভেড়ামারা উপজেলা মাধ্যমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি জানি আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক কম। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

 

 

বিদ্যালয়ের সভাপতি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমি নতুন এসেছি। তেমন কিচ্ছু জানি না। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কিছুদিন ধরেই অভিযোগ আসছে। বিস্তারিত জানা ও দেখার জন্য অচিরেই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবো এবং ত্রুটি গুলো নিয়ে বিধিমোতাবেক দ্রুত আইন গত ব্যবস্থা নেব।

 

 

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ১৭জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন ১২জন শিক্ষক!

আপডেট টাইম : ১২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ষোলদাগ এলাকায় কমলমতি মেয়েদের শিক্ষা লাভের জন্য ১৯৭৭ সালে নির্মিত হয় আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় আগের মতো লেখাপড়ার মান নেই। দিনে দিনে ছাত্রী সংখ্যা একবারেই কমে গেছে। এখন খুবই খারাপ অবস্থা। ছাত্রীর চেয়ে শিক্ষকই বেশী। কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করছে এই বিদ্যালয়ে।

 

সে কালের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিতে অ্যাসেম্বলি ও মা সমাবেশ হয় না। বাস্তবে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ও দেখা যায় না। উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাগজ কলমে ১৩৬ জন শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া আছে। বাস্তবে ৫৬জন শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় নাম লিপিবদ্ধ আছে। ৫টি ক্লাস মিলে প্রতিদিন শিক্ষার্থী উপস্থিত হার মাত্র ১৭/১৮জন। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে মোট ১৫জন। শিক্ষকরা প্রতিমাসে সরকারি বেতন উত্তোলন করেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। শিক্ষার মান যুগোপযোগী বৃদ্ধি করতে রয়েছে শিক্ষকদের চরম অবহেলা। ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের চোঁখে ঠুলি। বিদ্যালয়ের মাঠ বর্তমানে গোচারণ ভুমিতে পরিনীত হয়েছে। দেখার কেউ নেই।

 

স্থানীয়রা জানান,এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন যোগদানের পর হতেই লেখাপড়ার মান সর্ব নিম্নমুখি। তার উদাসীনতা নানা অনিয়ম গাফিলতি ও বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনা সৃষ্টিকরে রাখার প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে।

 

ফলে, একে বারেই কমে গেছে বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা। কমিটি নিয়ে স্থানীয় দলাদলি বিরাজমান। ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে এলাকার লোকজন তাদের মেয়েদেরকে এই বিদ্যালয়ে পড়াতে দিতে চান না। কাজীর গরু কিতাবে আছে,গোয়ালে নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করছে বর্তমান এই বিদ্যালয়ের। কাগজ কলমে ১৩৬জনের স্থলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রতিদিন ১৮জন। এমনটা চলে আসছে গত ৪ বছর যাবত। অনেক শিক্ষক প্রতিদিন না আসলে ও হাজিরা খাতায় শতভাগ উপস্থিতি স্বাক্ষর দেখানো হয়। তেমন ছাত্রী না থাকায় ১টা,২টা ক্লাস নিয়ে শিক্ষকরা অফিসে খোস গল্পে মেতে উঠেন। প্রতিমাসে শিক্ষদের বেতন বাবদ অযথা সরকারের ব্যয় গুনতে হচ্ছে ৩ লাখ ১১হাজার ১৯টাকা।

 

এই বিদ্যালয়ে হয় না অ্যাসেম্বলি, গাওয়া হয় না জাতীয় সংগীত । ছাত্রী উপস্থিতি কম,পাঠদানে শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দ শোনা যায় না। ছুটির ঘণ্টা বাজলে হই হুল্লা করে ছাত্রীদের বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য পূর্বের মতো চোখে পড়ে না। এতো অভিযোগ থাকার পর ও শিক্ষার মান যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করতে কারুর কোন মাথা ব্যাথা নেই। বিদ্যালয়ের কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন নিরব।

 

 

কয়েক বছর ধরে ২৭/২৮জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

 

এই বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষা অনুরাগী এ এম মুসা সাহেব। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম শাহ সূফী হযরত মাওলানা ডাঃ হাফেজ আব্দুর রশীদ।

 

ইতোপূর্বে, রওশন আরা বেগম প্রধান শিক্ষক থাকাকালনি শিক্ষা কার্যক্রম ভালো চলছিল। তিনি অবসরে যান। ম্যানেজিং কমিটিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মোঃ আনোয়ার হোসেন ১/৫/২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরী নেন। যোগদান করার কিচ্ছুদিন পর বিদ্যালয়ে তার আসা যাওয়া অনিয়ম। নানা গাফিলতির কারণে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান নিম্নমুখি। নানা বিষয় নিয়ে কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। একপর্যায় এলাকার লোককে সভাপতি থেকে বাতিল করে ভেড়ামারা উপজেলা নিবার্হী অফিসার কে দায়িত্ব দেওযা হয়। পদাধীকার বলে নিবার্হী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু ঐ বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি। তার পর ও কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে। নামকাঅস্তে ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম চলছে।

 

নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয়টির সবগুলো শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই কম। বেঞ্চগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে গিয়ে দেখি বড় একটি রুমের মধ্যে মাত্র ৩জন ছাত্রীকে নিয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষিকা রোজিনা খাতুন। ৭ম শ্রেণীতে ৬জন ছাত্রীকে নিয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষক তোহিদুল ইসলাম সান্টু। মোট ৫টি শ্রেণী কক্ষে ছাত্রী সংখ্যা ১৭জন উপস্থিত ছিলো গতকাল বৃহস্প্রতিবারের দিন। পরে অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষক মিলে খোসগল্পে মেতেছেন। এই রকম চিত্র প্রতিকার্য দিবসেরই বলে শুনা যায়।

 

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর এমপিওভুক্ত হয়। সেই সময় এই বিদ্যালয়ের দারুণ সুনাম থাকলে ও এখন লেখা পড়া মান মোটেই ভালো না। যার কারণে ছাত্রী সংখ্যা ২৭/২৮ জনে এসে ঠেকেছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো পড়া শুনা হয় না। মাত্র গুটি কয়েক জন ছাত্রী প্রতিদিন স্কুলে আসে। শিক্ষকদের কারণে শিক্ষার্থীরা ও বিদ্যালয় থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে।

 

বিদ্যালয়ের গেটের সামনে কয়েক জন দোকান ব্যবসায়ীরা বলেন, বিদ্যালয়ের হেড স্যার যোগ্য না। কমিটির লোকজন অনেক টাকা নিয়ে তাকে চাকরী দিয়েছেন। এখন আর তারা নেই। প্রধান শিক্ষক যোগ্য না হওয়ায় বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। লেখাপড়ার মান নেই ছাত্রীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে। শিক্ষকদের মধ্যে মিল নেই। হেড স্যারের কথা কেউ শোনে না। কিছু কিছু শিক্ষক নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে লেখা পড়ার ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে কলুষিত করেছেন। সচেতন অভিভাবক এখানে মেয়েদের কে ভর্তি করাতে চান না। কয়েকজন ছাত্রী ভর্তি হলেও তারা ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসে না। মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী দিয়ে বিদ্যালয় চালানো হচ্ছে ক্লাস।

 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তোহিদুর ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী আছে। সেই শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো উপস্থিত হয় না। কেন হয় না,তা বলতে পারবো না।

 

আজিজুল ও আব্দুল ওয়াহাব নামের দুইজন সহকারী শিক্ষক বলেন,আমাদের এখানে ছাত্রী সংখ্যা খুবই কম। অভিভাবকরা পড়ানোর জন্য অনেকেই শহর মুখি মেয়েদের কে নিয়ে গেছে। আবার এলাকার অন্য স্কুলে ভর্তি করেছে। এই খানে যারা ভর্তি আছে। বিদ্যালয়ে ঠিকমতো তারা ও আসে না। যে কয়জন আসে তাদের কে পাঠদান দেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ শুনেছেন, সেগুলো সত্য নয়। বরং সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ঠিকমত আসে না, পড়ায় না। যে সব মেয়েরা স্কুলে আসে না, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কে উদ্বুদ্ধ করা জন্য শিক্ষকদের কে পাঠালে তারা যায় না। আমার কথা শোনে না। এই কারণেই শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে।

 

ভেড়ামারা উপজেলা মাধ্যমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি জানি আব্দুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক কম। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

 

 

বিদ্যালয়ের সভাপতি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমি নতুন এসেছি। তেমন কিচ্ছু জানি না। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কিছুদিন ধরেই অভিযোগ আসছে। বিস্তারিত জানা ও দেখার জন্য অচিরেই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবো এবং ত্রুটি গুলো নিয়ে বিধিমোতাবেক দ্রুত আইন গত ব্যবস্থা নেব।

 

 

 


প্রিন্ট