কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে বইছে উৎসবের আমেজ। আজ শুক্রবার (৩০জুন) ঈদের দ্বিতীয় দিনেও কমতি নেই দর্শনার্থীর। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রই এখন জমজমাট অবস্থা বিরাজ করছে।
ঈদুল আজহা টানা ছুটিতে ভেড়ামারা-পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দুপাড়ে যুগল সৌন্দর্য লালন সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন শতশত মানুষ এসে ভীড় জমাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে যেন মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে হার্ডিঞ্জ পয়েন্টের দুইপাড়ে পদ্মার ধারে।
১৯১২ সালে নির্মানকৃত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ও ২০০৪ সালে নির্মিত অনুরূপ লালন শাহ সড়ক সেতু। ভেড়ামারা-পাকশী যুগল সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদেও উপচে পড়া ভীড়।
সবচেয়ে বেশী এবং আর্কষণ স্থান ভেড়ামারা-পাকশী যুগল সৌন্দর্য দেখার জন্য অনেক দুরদুরান্ত থেকে ছুটে আসা প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ভিড় করে অবাক চোখে দেখছেন পদ্মার উপর নির্মিত যুগল সৌন্দর্য।
একদিকে অপরূপ সৌন্দর্য আর অপরদিকে প্রজন্মের সাক্ষী হয়ে একশ’১৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের বৃহত্তম হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও পাশেই লালন শাহ সেতু দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
ঈদের দিন বিকেল থেকে শুরু করে পর দিন আজ শুক্রবার সকাল থেকেই পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালনশাহ সেতু এলাকা মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
ঈদের পরদিন থেকে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে এসব বিনোদন স্থান গুলো। ঈদকে ঘিরে নতুন নতুন বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে স্থানীয় পার্কগুলো।
তাই রূপ-মাধুর্যে ভরা পাকশীর জোড়া সেতু এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই মানুষের দারুণ ভিড় জমাচ্ছে। এছাড়াও নৌকায় চরে এপাড় ভেড়ামারায় পদ্মা পাড়ে মনি পার্ক ও আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ হযরত সোলাইমান শাহ্ চিশতী (র:) মাজার দেখার জন্য সেখানে ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ভীড় করে দেখছে মানুষ।
এছাড়াও পাকশী মানুষের চাহিদার অন্যতম কারণ-ঐতিহ্যবাহী পাকশী পেপার মিল, ফুরফুরা শরীফ, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর, বিশাল অঞ্চল নিয়ে পশ্চিম রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়, বিবিসি বাজার ও রিসোর্টসহ ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থাপনা।
এখানকার প্রকৃতির রূপ দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থী আব্দুর করিম বলেন, পদ্মা নদীর ওপর লালরঙা হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি ১শ’১৪ বছর পার হলে ও এ ব্রিজের সৌন্দর্য এক চিলতেও নষ্ট হয়নি শুনে ঘুরতে এসেছি।
অজপাড়া গাঁ থেকে একবার একদল লোক এসেছিলো পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রীজ দেখতে। এতবড় ব্রীজ তারা জীবনেও কোন দিন দেখেনি। ভাবতেই পারে না কতো বড় কান্ড ঘটে গেছে পদ্মার ওপর দিয়ে। একজন লোক অবাক চোখে হার্ডিঞ্জ ব্রীজটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো দ্যাখতো কত বড় ব্রীজ মনে কর ৫শ টাকার নুয়াই নাগছে। ৫শ টাকার বেশি কল্পনা করারও ক্ষমতা ছিল না লোকগুলোর। তাদের কথা লোহার সঠিক হিসেব না পাওয়া গেলেও ব্রীজটি যে আসলেও মস্ত বড়, সেটা বোঝা যায়।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে আছে লালন শাহ সেতু। এটি দেশের তৃতীয় দীর্ঘতম সড়ক সেতু। এ সেতুর কোল ঘেঁষেই নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নির্মাণাধীন রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুউচ্চ (৩০ তলার সমপরিমাণ উঁচু) চুল্লি ও নতুন নির্মিত রুপপুর রেল ওয়ে ষ্টেশন উঁচু স্থাপনাগুলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু থেকে খুব সহজের অবলোকন করা যায়। পদ্মার পাদ দেশে নির্মাণাধীন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু মিলে এই এলাকা যেন সৌন্দর্যের আধারে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার দর্শনার্থী ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন। ঈদের সরকারি ছুটির কারণে মানুষের সমাগম অনেক বেড়েছে। যে যার মতো করে ছবি, সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ঘুরতে আসা নজরুল ইসলাম নামের এক যুবক জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জিকে সেচ প্রকল্প দেখতে। সব মিলিয়ে জায়গাটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর মানুষের সমাগম হয় এখানে। জায়গাটি পর্যটন শিল্পের আওতায় আনা হলে দর্শনার্থীদের সমাগম আরও বাড়বে।
পিয়াস নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখতে এসে একই সঙ্গে পাকশীর নানন্দিক রেল স্টেশন, লালন শাহ সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
ভেড়ামারা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিরুল ইসলাম মান্নান বলেন, করোনার কারণে ঘরবন্দি থাকায় গত দুই বছর মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি তাই এবারের ঈদে দর্শনার্থীর আগমন বেশি।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, এখানে প্রতিদিন প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। দর্শনার্থীদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে দুটি টয়লেট, ডাস্টবিন, সোলার লাইট ও নলকূপের ব্যবস্থা করা হবে।