দেশীয় পদ্ধতিতে গরু-ছাগল পালনের অন্যতম জেলা কুষ্টিয়ার খামারি ও চাষিরা প্রতি বছরের মতো এবারও গরু-ছাগল পালন করেছেন। তৃণমূল প্রান্তিক চাষি কিংবা খামারিরা ধারদেনা করে বছর শেষে কিছু আর্থিক সঞ্চয়ের লক্ষ্যে এসব গরু-ছাগল পালন করেন।
কিন্তু এ বছর পশুখাদ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজার মূল্যের কারণে গরু-ছাগলের বাজার মূল্যও ঊর্ধ্বমুখী। তবে চাষিরা উচ্চমূল্যে তাদের গরু-ছাগল বিক্রি করতে পারলেও এর সিংহভাগ টাকা চলে যাবে পশুখাদ্য ব্যয়ে।
চাষিদের এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ক্রয় করা খাবারে নির্ভরতা কমিয়ে ঘাসজাতীয় খাবারের পরামর্শ দিচ্ছেন।
জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর কুরবানির বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত আছে এক লাখ ৭৮ হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ। এসব পশুর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়েছে। খামারিরা প্রতিটি গরু বিক্রি করে যে টাকা পাবেন বিক্রিযোগ্য এসব পশুর স্বাভাবিক বাজার মূল্য থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা অর্থনৈতিক প্রবাহের সৃষ্টি হবে এ অঞ্চলে।
ইতোমধ্যে মৌসুমি ব্যাপারিদের পদচারণায় জমে উঠেছে কুষ্টিয়ার গ্রামগঞ্জের পশুর হাটগুলো। প্রতি সপ্তাহে জেলার সাতটি পশুর হাটে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড় পশুর হাট আলামপুরের বালিয়াপাড়া হাটে সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় আট বিঘা জমির ওপর বসা পশুর হাটে তিল পরিমাণ জায়গা খালি নেই। চারদিকে শুধু গরু আর গরু। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মৌসুমি ব্যাপারিদের ভিড়ে জমজমাট পশুর হাট।
মিরপুর উপজেলার সদরপুর গ্রামের কৃষক শহিদুলের স্ত্রী হাফিজা খাতুন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও তিনটি দেশি জাতের ষাঁড় বড় করেছি। খাবারের দোকানে অনেক টাকা বাকি, গরু বেচা টাকা দিয়ে শোধ করব। যে টাকা থাকবে তা দিয়ে আবার গরুর বাছুর কিনলেই শেষ হয়ে যাবে।
ভেড়ামারা উপজেলার সলক মণ্ডল জানান, গত বছর কুরবানির ঈদের পর ছয়টি গরু কিনেছিলাম সাড়ে চার লাখ টাকায়। প্রতিটা গরুর জন্য দিনে খাওয়া খরচ হয় আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকা। বছরে একটা গরু বড় করতেই খরচ হয়ে যায় ৮০-৯০ হাজার টাকা। সমিতির ঋণের টাকা সুদসহ দিতে হবে। এখন গরু বিক্রি করে সব টাকা শোধ করা লাগবে।
- আরও পড়ুনঃ গোমস্তাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধা নিহত
একদিকে খামারিরা ব্যাংক বা এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন অন্যদিকে প্রান্তিক চাষিরা নিজ বাড়িতে দু-তিনটি করে গরু পালন করেছেন নিজের সুখস্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে।
কুষ্টিয়া জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জেলার ছয়টি উপজেলায় এক লাখ ৭৮ হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ আসন্ন কুরবানির বাজারে বিক্রয়ের জন্য মোটাতাজা করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রিন্ট