সারাদেশের ন্যায় ভূরুঙ্গামারীতে কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছ মাংস আদা রসুনের দাম বেড়েছে ।
চাল ডাল চিনি আটা ময়দা তেলের দামও বাড়তি। এদিকে শীতের মৌসুম শেষের দিকে আগের তুলনায় রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারের শীতকালীন অনেক সবজিরই সরবরাহও কমেছে দামও বাড়তে শুরু করেছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
এ বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চলতি সপ্তাহ থেকে শীতের সবজির উৎপাদন অনেকটা কমেছে। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ ধীরে ধীরে কমে আসছে। আর দুয়েক সপ্তাহ পর বাজারে অনেক শীতের সবজির সংকট দেখা দিতে পারে।
এদিকে দ্রব্যমূল্য বাজারে গিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ছে সীমিত আয়ের মানুষের। পরিবার নিয়ে খেয়েপরে বাঁচতেই চোখে অন্ধকার দেখছেন অনেকে। নিত্যপণ্যের অস্থির বাজারে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে বেশকিছু পণ্যের দাম। বিশেষত, বেড়েছে আদা রসুন ও আগুন লেগেছে কাচামরিচ ও মাছের বাজারে।
ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস, মসলা ও শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো সবজির বাজারে আগুন লেগেছে। আদায় লেগেছে আগুন, জিরার দাম অস্বাভাবিক। আর পেঁয়াজ এর দাম কিছুটা কম হলেও কাচামরিচের ঝাল এখন আকাশছোঁয়া। তেল-চিনি, মাছ-মাংসের দাম বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পদের মসলার অস্বাভাবিক দাম।
ভুরুঙ্গামারী বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত সপ্তাহের চেয়েও অনেক বেড়েছে। সাধ্যের মধ্যে মিলছে না মাছ। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালোমানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়।
অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এ পেঁয়াজ ও আদার দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেক। কোনবানির ঈদ সামনে রেখে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায় এবং আদা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। অন্যদিকে কিছুদিন এর ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
বাজারে কাঁচামরিচের দামও এখন আকাশছোঁয়া। কাঁচামরিচের কেজি এখন ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
এ বছর চড়া দামের সবজির তালিকায় যোগ হয়েছে সচরাচর স্থিতিশীল থাকা আলুও। এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাজারে আলুর দাম আরও বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত দুদিন আগেও ছিল ৩৫ টাকা।
গত বছর এসময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ১৮ থেকে ২৫ টাকা। যা এখন ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির পাশাপাশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজারও। হুট করে সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৬০০ টাকা কেজির কমে কেনা যাচ্ছে না টেংরা, কই, শিং ও চিংড়ি মাছ। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকার বেশি দামে। দুই কেজি বা তারচেয়ে বড় হলে দাম কেজিতে আরও ১০০-২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এমনকি ছোট আকারের পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছের দামও এখন কেজিপ্রতি ২৪০-২৫০ টাকা। যা স্বাভাবিক সময়ে ২০০ টাকা কেজি বা তারও কমে পাওয়া যেতো।
এছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা ডজন। গরুর মাংসের দাম পর পর দুই দফা বেড়ে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়।
ভূরুঙ্গামারী বাজারে আসা রিকশাচালক রফিকুল বলেন, শুক্রবার দিনটিও যে ভালো-মন্দ খাবো সে উপায় নেই। নিরামিষ খেতে খেতে জীবন ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। মাছ কিনতে যদি ১০০ টাকা বেশি লাগে, তাহলে অন্য সদাই না কিনে ঘরে ফিরতে হয়।
বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ।
আমিষের চাহিদা পূরণে গরিব ও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষে ব্রয়লার মুরগি ও পাঙ্গাস-তেলাপিয়া মাছের ওপর বেশি নির্ভরশীল। মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে সীমিত আয়ের মানুষ বাজা গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ভূরুঙ্গামারী বাজারে মাছ বিক্রেতারা বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি, মাছের দামও বাড়ছে। মাছের ফিডের (খাবার) এখন খুব চড়া দাম। খামারিরা এজন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রিন্ট