ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ Logo বাইসাইকেল নিয়ে সেতুর উপরে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেলাে শুভ’র Logo রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি’র গোছানো মাঠ নষ্টের চেষ্টা Logo রাজশাহীতে আনসার ও ভিডিপি’র মতবিনিময় সভা Logo ফরিদপুরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শ্যামনগরে নারীদের এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবেদনশীল কর্মশালা Logo বাঘায় আনিসুরকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার রায়হানের Logo কালুখালীতে বিএনপি’র প্রতিবাদ সমাবেশ Logo জুলাই গণঅভুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে বাগাতিপাড়ায় স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত Logo গোয়ালন্দে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তালগাছ থাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামবাসীর ভাগ্য বদলে দিচ্ছে তালগাছ। তালের রস, তালশাঁস বিক্রি করে মাত্র ৪ মাসে আয় প্রায় ২ কোটি টাকা।

সরজমিনে দেখা যায়, দেশে সা¤প্রতিক সময়ে বজ্রপাত এক ধরনের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি আর ঝড় হলেই বজ্রপাতে একাধিক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কালবৈশাখীর এই মৌসুমে এ আতঙ্ক আরও বেড়েছে।কিন্তু কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামের রাস্তার দুধারে সারি সারি তালগাছ। যত দূর দৃষ্টি যায় শুধুই তালগাছ। তালগাছের কারণে এখানে বজ্রপাতে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় আমলা বাজার। কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত এলাকার ঐতিহ্যবাহী এ বাজার। বাজার থেকে বাঁয়ে সড়ক ধরে ৪-৫ কিলোমিটার এগুলোই সড়কের দুধারে চোখে পড়বে সারি সারি তালগাছ। শুধু সড়কের ধারেই নয়, এলাকার পথে পথে, মাঠ-ঘাটে যেদিকে চোখ যায় শুধুই তালগাছ। এ কারণে কাকিলাদহ এখন তালগাছের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটিকে আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের গ্রাম হিসেবেও চেনেন অনেকে।

জানা গেছে, তালগাছ ঘিরে বাড়তি আয় করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। কাঁচা তালের শাঁস, তালের রস, পাকা তাল, তালের পাতা এমনকি গাছ বিক্রি করেও অর্থ আয় করেন এলাকার মানুষ। শুধু তালের রস বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন প্রায় দেড়শ পরিবার। সুস্বাদু তালের রস খেতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে ভিড় জমান।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ইমাম আলী। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তিনি তালের রস সংগ্রহ করেন। সকাল-বিকাল দুই বেলা তিনি গাছ থেকে রস নামান। প্রতিদিন দুটি গাছ থেকে তিনি পান ৩০ লিটার মিষ্টি রস। বিকালে এসব রস নিয়ে আসনে স্থানীয় সড়কে। এ সড়কের দুপাশে তাল গাছের দীর্ঘ সারি। বিকালে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন রস পান করতে। বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকে। এ সময় ইমাম আলীর মতো আরো অনেক গাছি রস নিয়ে আসেন এখানে। এক গøাস তালের রস বিক্রি হয় ১০ টাকায়, আর এক লিটার ৫০ টাকা।

ইমাম আলী বলেন,গরমের ৪ মাস তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ৩০ লিটার রস পাই দুটি গাছ থেকে। ৫০ টাকা লিটার হিসাবে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করি। ৫ জনের সংসার চালানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ জমাতেও পারি।

কাকিলাদহ গ্রামের জজপাড়ার সুন্নত আলী বলেন, আমাদের গ্রামে প্রথম তালগাছ রোপণ করেন হাজি দাউদ আলী। তিনি শিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। প্রায় ৭০ বছর আগে তিনি এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক ও নিজের জমিতে তালগাছ রোপণ করেন। পরে তার দেখাদেখি এলাকার সব মানুষ তালগাছ রোপণ শুরু করেন। এভাবে কাকিলাদহ গ্রামটি এখন তালগাছের গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি তালগাছ আছে।

তালের রস ব্যবসায়ী আক্কাস আলী ও শওকত আলী বলেন, তালগাছ থেকেও যে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায় এর উদাহরণ আমাদের গ্রাম। আমাদের এলাকার অনেক পরিবার গ্রীষ্মকালের এই সময়ে রস, কাঁচা তাল, তালপাতা বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার লিটার রস উৎপাদন হয়। যেসব রস বিক্রি হয় না তা দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। যেসব জমিতে তালগাছ আছে সেইসব জমির মালিকরা কয়েক মাসের জন্য তালগাছ বর্গা দেন। এ সময় গাছপ্রতি তারা এক হাজার টাকা পান।

কুয়েত প্রবাসী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে আছি। এলাকায় এসে দেখলাম প্রতিদিন তালের রস বিক্রি হচ্ছে কাকিলাদহ গ্রামে। আমাদের গ্রামের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ প্রতিদিন আসে রস পান করতে। সুস্বাদু হওয়ায় তালের রসের খ্যাতি চারিদিকে।

বিচারপ্রতি ড. রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রফিকুল ইসলাম বলেন, তালগাছ যে পরিবেশ ও মানুষের বন্ধু তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের এলাকায় প্রতি বছর তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে। তালবীজ রোপণ করলেই গাছ হয়ে যায়, তেমন পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না।

তিনি বলেন, প্রতি বছর তালগাছকে কেন্দ্র করে প্রায় কোটি টাকার বেশি অর্থ আয় হচ্ছে এলাকার মানুষের। অর্থনীতিতে তা বড় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া তালগাছের কারণে স্মরণকালের মধ্যে বজ্রপাতে এ এলাকায় কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি। তাছগাছের ক্ষতি হলেও কোনো মানুষের ক্ষতি হতে আমরা দেখিনি। তালগাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থ রোজগারের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ

error: Content is protected !!

তালগাছ থাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই

আপডেট টাইম : ০৯:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামবাসীর ভাগ্য বদলে দিচ্ছে তালগাছ। তালের রস, তালশাঁস বিক্রি করে মাত্র ৪ মাসে আয় প্রায় ২ কোটি টাকা।

সরজমিনে দেখা যায়, দেশে সা¤প্রতিক সময়ে বজ্রপাত এক ধরনের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি আর ঝড় হলেই বজ্রপাতে একাধিক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কালবৈশাখীর এই মৌসুমে এ আতঙ্ক আরও বেড়েছে।কিন্তু কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামের রাস্তার দুধারে সারি সারি তালগাছ। যত দূর দৃষ্টি যায় শুধুই তালগাছ। তালগাছের কারণে এখানে বজ্রপাতে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় আমলা বাজার। কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত এলাকার ঐতিহ্যবাহী এ বাজার। বাজার থেকে বাঁয়ে সড়ক ধরে ৪-৫ কিলোমিটার এগুলোই সড়কের দুধারে চোখে পড়বে সারি সারি তালগাছ। শুধু সড়কের ধারেই নয়, এলাকার পথে পথে, মাঠ-ঘাটে যেদিকে চোখ যায় শুধুই তালগাছ। এ কারণে কাকিলাদহ এখন তালগাছের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটিকে আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের গ্রাম হিসেবেও চেনেন অনেকে।

জানা গেছে, তালগাছ ঘিরে বাড়তি আয় করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। কাঁচা তালের শাঁস, তালের রস, পাকা তাল, তালের পাতা এমনকি গাছ বিক্রি করেও অর্থ আয় করেন এলাকার মানুষ। শুধু তালের রস বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন প্রায় দেড়শ পরিবার। সুস্বাদু তালের রস খেতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে ভিড় জমান।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ইমাম আলী। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তিনি তালের রস সংগ্রহ করেন। সকাল-বিকাল দুই বেলা তিনি গাছ থেকে রস নামান। প্রতিদিন দুটি গাছ থেকে তিনি পান ৩০ লিটার মিষ্টি রস। বিকালে এসব রস নিয়ে আসনে স্থানীয় সড়কে। এ সড়কের দুপাশে তাল গাছের দীর্ঘ সারি। বিকালে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন রস পান করতে। বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকে। এ সময় ইমাম আলীর মতো আরো অনেক গাছি রস নিয়ে আসেন এখানে। এক গøাস তালের রস বিক্রি হয় ১০ টাকায়, আর এক লিটার ৫০ টাকা।

ইমাম আলী বলেন,গরমের ৪ মাস তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ৩০ লিটার রস পাই দুটি গাছ থেকে। ৫০ টাকা লিটার হিসাবে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করি। ৫ জনের সংসার চালানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ জমাতেও পারি।

কাকিলাদহ গ্রামের জজপাড়ার সুন্নত আলী বলেন, আমাদের গ্রামে প্রথম তালগাছ রোপণ করেন হাজি দাউদ আলী। তিনি শিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। প্রায় ৭০ বছর আগে তিনি এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক ও নিজের জমিতে তালগাছ রোপণ করেন। পরে তার দেখাদেখি এলাকার সব মানুষ তালগাছ রোপণ শুরু করেন। এভাবে কাকিলাদহ গ্রামটি এখন তালগাছের গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি তালগাছ আছে।

তালের রস ব্যবসায়ী আক্কাস আলী ও শওকত আলী বলেন, তালগাছ থেকেও যে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায় এর উদাহরণ আমাদের গ্রাম। আমাদের এলাকার অনেক পরিবার গ্রীষ্মকালের এই সময়ে রস, কাঁচা তাল, তালপাতা বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার লিটার রস উৎপাদন হয়। যেসব রস বিক্রি হয় না তা দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। যেসব জমিতে তালগাছ আছে সেইসব জমির মালিকরা কয়েক মাসের জন্য তালগাছ বর্গা দেন। এ সময় গাছপ্রতি তারা এক হাজার টাকা পান।

কুয়েত প্রবাসী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে আছি। এলাকায় এসে দেখলাম প্রতিদিন তালের রস বিক্রি হচ্ছে কাকিলাদহ গ্রামে। আমাদের গ্রামের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ প্রতিদিন আসে রস পান করতে। সুস্বাদু হওয়ায় তালের রসের খ্যাতি চারিদিকে।

বিচারপ্রতি ড. রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রফিকুল ইসলাম বলেন, তালগাছ যে পরিবেশ ও মানুষের বন্ধু তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের এলাকায় প্রতি বছর তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে। তালবীজ রোপণ করলেই গাছ হয়ে যায়, তেমন পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না।

তিনি বলেন, প্রতি বছর তালগাছকে কেন্দ্র করে প্রায় কোটি টাকার বেশি অর্থ আয় হচ্ছে এলাকার মানুষের। অর্থনীতিতে তা বড় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া তালগাছের কারণে স্মরণকালের মধ্যে বজ্রপাতে এ এলাকায় কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি। তাছগাছের ক্ষতি হলেও কোনো মানুষের ক্ষতি হতে আমরা দেখিনি। তালগাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থ রোজগারের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।


প্রিন্ট