ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক ছাত্রের আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১১ মে) ভোর ৬টার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সিংদাহ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি ডোবা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেন স্বজনরা।
.
নিহত ছাত্রের নাম শাহরিয়ার অন্নব রিউশা ( ১৭)। সে সিংদাহ গ্রামের সোহেল রানার ছেলে।
.
স্বজনদের দাবি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত রিউশা। ২০২৫- ২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, রাজশাহী বিদ্যালয়সহ অন্তত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। তবে একটিতেও ভর্তির সুযোগ হয়নি তার। এ নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল রিউশা। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করে রিউশা।
.
পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী ছাত্র ছিল রিউশা। সে কুষ্টিয়া এডুকেয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা রামপুরা এলাকায় খালার বাড়িতে চলে যায়। সেখানে ঢাকা কলেজ থেকে ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ -৫ প্রাপ্ত রিউশা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষা দেয়। এরপর ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়। সবশেষ ২৭ এপ্রিল ভর্তি পরীক্ষা দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে একটিতেও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল রিউশা। এরপর একাকীত্ব জীবন কাটাচ্ছিল সে।
.
শুক্রবার ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসে রিউশা। সেখানেও মানসিক অস্বস্তিতে ভুগছিল সে। শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মা মুক্তা খাতুন তার বাবার বাড়িতে রিউশার জামা-কাপড় আনতে গিয়েছিলেন। এরপর রাত সোয়া ৯টা থেকে রিউশাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে রোববার ভোর ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি ডোবায় পোড়া ও বিবস্ত্র অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা।
.
রিউশার আইনজীবী খালা রত্না খাতুন বলেন, ও (রিউশা) খুব মেধাবী, বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও ভর্তি হতে পারেনি। ও মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিল। আমরা ওকে সাহস দিতাম। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে হয়তো শরীরে আগুন লাগিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।
.
আমার বাবা কোনে থাকবিনি রে। ক্যাম্বা থাকবিনি। আমার বাবার থুয়ে ক্যাম্বা শোবনগো’ (আমার বাবা কোথায় থাকবে রে। কীভাবে থাকবে। আমার বাবাকে রেখে কীভাবো ঘুমাবো গো) -বলে বিলাপ করছিলেন রিউশার মা মুক্তা খাতুন।
.
চাচা ইকবাল বিশ্বাস বলেন, বাগানে থাকা পরিত্যক্ত টিনশেড ঘর ও পুকুরপাড়ে আগুনের ছাই ও প্যান্টের পোড়া অংশবিশেষ পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছে রিউশা।
.
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আগুনে পোড়া এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
প্রিন্ট