রমজান মাসে অন্যান্য ফলমূলের সাথে চাহিদা বেড়েছে তরমুজের। আকার ভেদে প্রতিকেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা দরে। খুচরা বজারে কেজি দরে বিক্রি হলেও কেটে ২/১ কেজি তরমুজ বিক্রি করতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। এতে মৌসুমি ফল তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন পরিবারের অনেক মানুষ। এসব ক্রেতারা জানান,বাজারে ৪/৫ কেজির নীচে তরমুজ কম পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা মূল্যে ৫ কেজি ওজনের একটা (একপিচ) তরমুজের দাম ২০০ টাকা। গোটা একটা তরমুজ কিনলেই পকেট প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অন্য পণ্য কেনার হিসাব মেলাতে পারছেননা।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে,সড়কের ধারেই তরমুজের স্তুপ করে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। সড়কের ধারে গাড়ি থামিয়ে তরমুজ কিনছেন দূরদূরান্তের মানুষ। তাদের একজন অটো ভ্যান চালক বাদশা সেখ। বিক্রেতা তার কাছে দাম চাইলেন প্রতি কেজি ৩৫ টাকা হিসেবে। নিজের অবস্থা বুঝে কেটে ২ কেজি নিতে চাইলেন বাদশা সেখ। বিক্রেতা তাকে জানালেন কেজি দরে বিক্রি হলেও গোটা একটা তরমুজ নিতে হবে।
গোটা একটা তরমুজ কিনতে না পেরে হতাশ মনে ফিরে গেলেন বাদশা সেখ। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ভ্যান চালিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করি। ৫ কেজি ওজনের একটা তরমুজ কিনতেই যদি আয়ের প্রায় টাকা শেষ হয়ে যায়। তাহলে অন্য পণ্য কিনবো কিভাবে? বাদশা সেখের মতো অনেকেই আয়ের সাথে হিসেব মিলায়ে তরমুজ কিনলে অন্য পণ্য কিনতে হিমিশিম খাচ্ছেন। আবার অন্য পণ্য কিনলে তরমুজ কিনতে পারছেননা।
নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল থামিয়ে ৮ কেজি ওজনের একটা তরমুজ ৩২০ টাকায় কিনেন উপজেলার বাজুবাঘার হালিম মিঞা। তিনি বললেন, ইফতারে তরমুজের চাহিদা বাড়ির সকল সদস্যর কাছে। সবাই মিলে খাওয়ার জন্য তরমুজটা কিনলেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ পিচে (শতকরা) কিনে ওজনে তরমুজ বিক্রি করে মুনাফা লুফে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় মৌসুমি ফল তরমুজ না কিনেই হতাশ মনে ফিরছেন তারা। ওজনে নয়, পিচে তরমুজ বিক্রির দাবি ক্রেতাদের।
প্রায় শ’খানেক ব্যবসায়ীকে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের সড়কের পাশে তরমুজ নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। আর ক্রেতারা রাস্তাতেই ছোট যানবাহন থামিয়ে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার প্রায় বাজারের সড়কটাই যেন তরমুজের বাজার হয়ে গেছে। হাট ছাড়াই সড়কের ধারে তরমুজ বিক্রির এই দৃশ্য দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন বাজারে।
বাঘা বাজারে রাস্তার ধারে তরমুজ নিয়ে বসে ছিলেন রাজিব আলী। আকার ভেদে প্রতিটি তরমুজ বিক্রি করছেন ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, বেশি ওজনের বড় তরমুজের দামও বেশি। ইশ্বরদী এলাকার আড়ৎ থেকে পাইকারি দামে মন হিসেবে এসব তরমুজ কিনেছেন। রমজান মাসে ভালো বিক্রি হচ্ছে।
নাটোর,বনপাড়া,লালপুর থেকে তরমুজ কিনে এনে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন বাঘা বাজারের আড়ৎদার মোয়াজ্জেম হোসেন। ওজনে কিনে ওজনেই বিক্রি করেন। তিনি বলেন, মাঠ থেকে যারা কিনেন,তারা শতকরা হিসেবে কিনেন। আর বাজারে বিক্রি করেন ওজনে।
শাহদৌলা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সনজীদ কুমার সরকার বলেন, তরমুজে এন্টি অক্সিডেন্ট,কেরোটিনয়েটস থাকে। সেটা মস্তিকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যথা এলজাইমার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। উচ্চ রক্তচাপ,কলেষ্টটেরোল,নিয়ন্ত্রন কওে ও রৌদ্রে পোড়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে। কোষ্ঠ কাঠিন্য দুর ও ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। তরমুজের বীজে জিংক,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি উপাদান রয়েছে। তরমুজে ৯২% পানি,৬% চিনি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে ২% । তরমুজ খালি পেটে খাওয়া উচিত নয় বলে জানান এই প্রভাষক। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ইফতারির সময় প্রচুর মানুষ তরমুজ খান। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
তরমুজের দাম ও কেটে বিক্রি না করা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহি অফিসার শারমিন আখতার বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্য রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে পিচ হিসেবে ও কেটে বিক্রির জন্য ব্যবস্থা নিবেন।
প্রিন্ট