ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উদযাপন Logo সালথায় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে কেক কাটা আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo বোয়ালমারীতে ১কেজি গাঁজাসহ ইজিবাইকের চালক আটক Logo ঈদে মিলাদুননবী (স.) ও শেখ হাসিনা জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo জেনেভায় প্রধানমন্ত্রীর জন্মবার্ষিকী উদযাপিত Logo সদরপুরে জাকের পার্টির ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত Logo সদরপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ ও জরিমানা Logo বিএনপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে বলোনিয়া বিএনপি Logo ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সালথায় এড. জামাল হোসেন মিয়ার উদ্যোগে মিলাদ-দোয়া Logo আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশী রিজভী আলমের গনসংযোগ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। -ফাইল ছবি

মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর তাঁর রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

জিয়াউর রহমানসহ এই পাঁচজন এবং তাঁদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। গতকাল মঙ্গলবার জামুকার ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি জামুকার গতকালের সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় জামুকার সদস্য ও সাংসদ শাজাহান খান প্রশ্ন তোলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না। তিনি তাঁর এই বক্তব্যের সপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। পরে জামুকার সভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ অন্য সদস্যরা শাজাহান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’; নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি ছিল।

জামুকার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির কাকরাইলের কার্যালয়ে কথা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের মূলনীতি বাতিল করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন।

হঠাৎ এখন কেন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হলো—এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে, যারা মারা যায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা (ব্যবস্থা) যায় না। সে জন্য জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ রকম আরও যারা রয়েছে, তাদের বিষয়েও জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এদের সকলের পদক, সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে। আপাতত জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক ও মাহবুবুল আলম চাষীর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্বে অনেকেরই নোবেল পুরস্কার, ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হয়। তাদের হয়তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু খেতাব বাদ যাবে, অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে।’

গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া জামুকার দুজন সদস্যের সঙ্গেও কথা বলেছে এ প্রতিনিধি। তাঁরা বলেন, জামুকার সদস্য ও সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন। তবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলমসহ বৈঠকে উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্য তখন বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে গেলে অনেক সময় লাগবে। পরে প্রয়োজন হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবে। আইনি কোনো জটিলতা থাকলে তা সুরাহা করবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘স্মরণীয় যাঁরা, বরণীয় যাঁরা’ (লাল মুক্তিবার্তা) এমন একটি তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করা এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার আসামি বা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজনের নাম এখনো কীভাবে রয়ে গেছে, তা নিয়েও জামুকার গতকালের সভায় আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম বাদ দিতে একটি কমিটি কাজ করবে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে শাজাহান খানকে। এই কমিটি বিতর্কিতদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করবে। এই কমিটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। এই অপরাধীরা কোনো সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদও কি বাতিল হবে জানতে চাইলে শাজাহান খান গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু খেতাবটাই আপাতত বাতিল হচ্ছে। বাকি স্বাধীনতা পদক, মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের বিষয়ে আইনগত দিকগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ ও প্রকৌশলীর আবেদন

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তাঁর প্রস্তাব পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি এখন একটি উপকমিটিতে পাঠিয়েছে জামুকা।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দেখিয়েছে জামুকা। একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে জামুকা। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ছাদিকুর রহমান ওরফে হিরু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। শাজাহান খান গতকালের বৈঠকে ছাদিকুরের পক্ষে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

গত মাসেই এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জামুকা। ৭০তম সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত গতকালের সভায় (৭২তম) পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে এখন বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ঢাকা স্টেডিয়ামে তিনি অস্ত্র জমা দিয়েছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর আবেদনে সুপারিশ করেছেন জামুকার সদস্য ও সাংসদ মোশাররফ হোসেন।

এ ছাড়া বৈঠকে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১০২টি উপজেলা থেকে প্রতিবেদন এসেছে বলে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

জামুকার গতকালের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাকসহ অন্য বিতর্কিতদের খেতাব বাতিলের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নীতিগতভাবে তিনি তা সর্মথন করেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এটা ঠিক, কিন্তু তাঁদের হাতেই মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পুনর্বাসন করেছেন। তাই তাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক খেতাবের যোগ্য নন বলে মনে করেন তিনি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উদযাপন

error: Content is protected !!

জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত

আপডেট টাইম : ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১

মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর তাঁর রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

জিয়াউর রহমানসহ এই পাঁচজন এবং তাঁদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। গতকাল মঙ্গলবার জামুকার ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি জামুকার গতকালের সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় জামুকার সদস্য ও সাংসদ শাজাহান খান প্রশ্ন তোলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না। তিনি তাঁর এই বক্তব্যের সপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। পরে জামুকার সভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ অন্য সদস্যরা শাজাহান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’; নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি ছিল।

জামুকার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির কাকরাইলের কার্যালয়ে কথা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের মূলনীতি বাতিল করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন।

হঠাৎ এখন কেন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হলো—এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে, যারা মারা যায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা (ব্যবস্থা) যায় না। সে জন্য জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ রকম আরও যারা রয়েছে, তাদের বিষয়েও জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এদের সকলের পদক, সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে। আপাতত জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক ও মাহবুবুল আলম চাষীর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্বে অনেকেরই নোবেল পুরস্কার, ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হয়। তাদের হয়তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু খেতাব বাদ যাবে, অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে।’

গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া জামুকার দুজন সদস্যের সঙ্গেও কথা বলেছে এ প্রতিনিধি। তাঁরা বলেন, জামুকার সদস্য ও সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন। তবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলমসহ বৈঠকে উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্য তখন বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে গেলে অনেক সময় লাগবে। পরে প্রয়োজন হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবে। আইনি কোনো জটিলতা থাকলে তা সুরাহা করবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘স্মরণীয় যাঁরা, বরণীয় যাঁরা’ (লাল মুক্তিবার্তা) এমন একটি তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করা এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার আসামি বা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজনের নাম এখনো কীভাবে রয়ে গেছে, তা নিয়েও জামুকার গতকালের সভায় আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম বাদ দিতে একটি কমিটি কাজ করবে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে শাজাহান খানকে। এই কমিটি বিতর্কিতদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করবে। এই কমিটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। এই অপরাধীরা কোনো সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদও কি বাতিল হবে জানতে চাইলে শাজাহান খান গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু খেতাবটাই আপাতত বাতিল হচ্ছে। বাকি স্বাধীনতা পদক, মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের বিষয়ে আইনগত দিকগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ ও প্রকৌশলীর আবেদন

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তাঁর প্রস্তাব পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি এখন একটি উপকমিটিতে পাঠিয়েছে জামুকা।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দেখিয়েছে জামুকা। একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে জামুকা। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ছাদিকুর রহমান ওরফে হিরু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। শাজাহান খান গতকালের বৈঠকে ছাদিকুরের পক্ষে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

গত মাসেই এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জামুকা। ৭০তম সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত গতকালের সভায় (৭২তম) পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে এখন বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ঢাকা স্টেডিয়ামে তিনি অস্ত্র জমা দিয়েছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর আবেদনে সুপারিশ করেছেন জামুকার সদস্য ও সাংসদ মোশাররফ হোসেন।

এ ছাড়া বৈঠকে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১০২টি উপজেলা থেকে প্রতিবেদন এসেছে বলে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

জামুকার গতকালের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাকসহ অন্য বিতর্কিতদের খেতাব বাতিলের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নীতিগতভাবে তিনি তা সর্মথন করেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এটা ঠিক, কিন্তু তাঁদের হাতেই মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পুনর্বাসন করেছেন। তাই তাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক খেতাবের যোগ্য নন বলে মনে করেন তিনি।