ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo তুচ্ছ ঘটনায় মা-বাবা হারা কলেজ ছাত্রের গলায় ফাঁস Logo ইবি উপাচার্যকে ১০ লাখ টাকা ঘুষের প্রস্তাব, থানায় জিডি Logo কুষ্টিয়ায় হাসপাতাল কর্মচারীর বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ Logo সাবেক ছাত্রদল অর্গানাইজেশন পর্তুগালের আয়োজনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও ইফতার অনুষ্ঠিত Logo রমজানে পণ্য মূল্য সহনীয় রাখতে চরভদ্রাসনে বাজার মনিটরিং Logo বোয়ালমারীতে ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেল শান্তা Logo গোমস্তাপুরে মেসার্স নজরুল অটো রাইস মিলের উদ্যোগে ইফতার অনুষ্ঠিত Logo নোয়াখালীতে পুকুরে মিলল ১০ কেজি ইলিশ Logo হাতিয়ায় আর্থিক স্বাক্ষরতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo রাস্তায় ঘুরে ঘুরে নিম্ন আয়ের লোকেদের ইফতার সামগ্রী দিচ্ছেন সুমন রাফি
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

পাবনায় ৮ মাসে ৩০৫ জনের আত্মহত্যা

ছবি- প্রতীকী।

ঈদে নতুন জামা আব্দার করেছিলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী লতা খাতুন (১৪)। দরিদ্র বাবা রওশন আলীর পক্ষে সম্ভব হয়নি তার নতুন জামা কিনে দেবার।

অভিমান করে চলতি বছরের ৬ জুলাই রাতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

গত ২১ মে একই উপজেলার হান্ডিয়ালে প্রেমের সম্পর্কের জেরে বিষপানে আত্মহত্যা করে দুই স্কুলছাত্রী যুথী আক্তার (১৫) ও শাবানা খাতুন (১৫)।

এভাবে তুচ্ছ ও ছোটখাটো ঘটনায় উত্তরের জেলা পাবনায় দিন দিন বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা।

এ বছরের জানুয়ারী থেকে আগস্ট এই আট মাসে জেলার ১১টি থানা এলাকায় মোট আত্মহত্যা করেছেন ৩০৫ জন।

এর মধ্যে শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী, পুরুষ, নারী।

আর এসব আত্মহত্যার ঘটনার মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ১০৮ জন, আতাইকুলা থানা এলাকায় ১২ জন, ঈশ^রদী উপজেলায় ৫৬ জন, আটঘরিয়া উপজেলায় ১০ জন, বেড়া উপজেলায় ৭ জন, সাঁথিয়া উপজেলায় ২৮ জন, চাটমোহর উপজেলায় ৩৭ জন, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ১২ জন, ফরিদপুর উপজেলায় ১৩ জন, সুজানগর উপজেলায় ১৬ জন এবং আমিনপুর থানা এলাকায় ৬ জন। সব আত্মহত্যার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও ৩০ শতাংশ পুরুষ রয়েছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শফিউল আযম বলেন, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশে^ কেউ না কেউ আত্মহত্যা করে মারা যায়।

পাবনা জেলাতেও এর প্রবণতাটা বেশি দেখা যায়।

আত্মহত্যা করার পেছনে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন কারণ থাকে। মানসিক সমস্যার মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া, বাইকুলার মুড ডিজঅর্ডার ও ডিপ্রেশন।

পারিবারিক কিছু বিষয় থাকে যেগুলো সে মেনে নিতে পারে না। বিষন্নতাও অন্যতম কারণ। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে গোল্ডেন এ প্লাস পেতেই হবে এমন কিছু আমাদের প্রত্যাশার চাপ বাড়িয়ে দেই। সেটা না হলে অনেক সময় সে মানসিকভাবে মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করে।

পারস্পরিক আলোচনা ও মানসিক সাহস দিয়ে পাশে থাকার মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আত্মহত্যা বিষয়ে পাবনায় আরও বিস্তর গবেষণার দরকার বলে মনে করেন তিনি।

মানসিক বিষন্নতা ও হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় বলে মনে করেন চাটমোহর মহিলা ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক অনুপ কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, আত্মহত্যা একটা মানসিক রোগ।

একজন মানুষ যখন সে যা চায় সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে না, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তখন সে হতাশা বা বিষন্নতায় ভোগে। বর্তমানে আমাদের মাঝে দিন দিন ধৈর্য্যরে অভাব দেখা দিচ্ছে। বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে বা মানতে পারি না।

দীর্ঘদিন রোগশোকে আক্রান্ত, কোনো কাজে পরাজয় হওয়া, প্রেম-বিরহ, সম্পদ হারানো, পরীক্ষায় ব্যর্থতা। এসব কারণে মানুষের মাঝে হতাশা তৈরী হয়। এর বহি:প্রকাশ হিসেবে সে তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেবার মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পেতে চায়।

পাবনায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কেন এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক অনুপ কুমার কুন্ডু মনে করেন, যে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো বেশি প্রচার হওয়া, বেশি মানুষের মধ্যে জানাজানি হওয়াটা একটা কারণ। বলা যায় আত্মহত্যার বিষয়ে অনুপ্রেরণা।

অর্থাৎ একটা মানুষের মধ্যে যখন বিষন্নতা বিরাজ করে সে তখন ভাবে অমুক তো আত্মহত্যা করেছিল, আমিও করবো। আগের ঘটনাগুলো জানার কারণে সে সেখান থেকে আত্মহত্যার অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয়। সে যদি আত্মহত্যার বিষয়টা না জানতো তাহলে তার মধ্যে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা আসার কথা নয়। আর এখনকার মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ, এটাও কারণ।

প্রতিকার বিষয়ে তার পরামর্শ, নিজেদের পরিবারকে সময় দিতে হবে। সন্তানদের বুঝতে চেষ্টা করা। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে মিশছে, সেগুলো দেখতে হবে।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার কি সমস্যা সেগুলো জানার চেষ্টা করা এবং বন্ধুর মতো ভালবাসা দিয়ে সমাধােেনর পথ খুঁজে বের করা। সামাজিকভাবেও আমরা কারো পাশে দাঁড়াই না। কারো দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে সেটি মেটানোর চেষ্টা করিনা।

পরিবারের সবার মধ্যে ভালবাসা, বোঝাপড়ার অভাব আত্মহত্যার পেছনে অনেকটা দায়ী উল্লেখ করে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) মাসুদ আলম বলেন, আত্মহত্যায় মৃতদের মধ্যে বিষপান, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বেশি ঘটে।

কিছু চাওয়া, পাওয়া না পাওয়া এবং পারিবারিক বিরোধ ও মানসিক চাপ থেকেই আত্মহত্যা করে। আবার ছোট ঘটনা থেকেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

মাসুদ আলম বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহ, ডিজিটাল যুগে হাতে হাতে মোবাইল। মুঠোবন্দি শৈশব, কৈশোর, যৌবন। পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা উঠে গেছে। এজন্য পারিবারিক সৌহার্দ্যবোধ, ভালবাসা, সচেতনতা দরকার। সচেতনতা বাড়াতে বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে আমরাও বিভিন্ন সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তুচ্ছ ঘটনায় মা-বাবা হারা কলেজ ছাত্রের গলায় ফাঁস

error: Content is protected !!

পাবনায় ৮ মাসে ৩০৫ জনের আত্মহত্যা

আপডেট টাইম : ০৫:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ঈদে নতুন জামা আব্দার করেছিলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী লতা খাতুন (১৪)। দরিদ্র বাবা রওশন আলীর পক্ষে সম্ভব হয়নি তার নতুন জামা কিনে দেবার।

অভিমান করে চলতি বছরের ৬ জুলাই রাতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

গত ২১ মে একই উপজেলার হান্ডিয়ালে প্রেমের সম্পর্কের জেরে বিষপানে আত্মহত্যা করে দুই স্কুলছাত্রী যুথী আক্তার (১৫) ও শাবানা খাতুন (১৫)।

এভাবে তুচ্ছ ও ছোটখাটো ঘটনায় উত্তরের জেলা পাবনায় দিন দিন বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা।

এ বছরের জানুয়ারী থেকে আগস্ট এই আট মাসে জেলার ১১টি থানা এলাকায় মোট আত্মহত্যা করেছেন ৩০৫ জন।

এর মধ্যে শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী, পুরুষ, নারী।

আর এসব আত্মহত্যার ঘটনার মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ১০৮ জন, আতাইকুলা থানা এলাকায় ১২ জন, ঈশ^রদী উপজেলায় ৫৬ জন, আটঘরিয়া উপজেলায় ১০ জন, বেড়া উপজেলায় ৭ জন, সাঁথিয়া উপজেলায় ২৮ জন, চাটমোহর উপজেলায় ৩৭ জন, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ১২ জন, ফরিদপুর উপজেলায় ১৩ জন, সুজানগর উপজেলায় ১৬ জন এবং আমিনপুর থানা এলাকায় ৬ জন। সব আত্মহত্যার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও ৩০ শতাংশ পুরুষ রয়েছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শফিউল আযম বলেন, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশে^ কেউ না কেউ আত্মহত্যা করে মারা যায়।

পাবনা জেলাতেও এর প্রবণতাটা বেশি দেখা যায়।

আত্মহত্যা করার পেছনে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন কারণ থাকে। মানসিক সমস্যার মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া, বাইকুলার মুড ডিজঅর্ডার ও ডিপ্রেশন।

পারিবারিক কিছু বিষয় থাকে যেগুলো সে মেনে নিতে পারে না। বিষন্নতাও অন্যতম কারণ। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে গোল্ডেন এ প্লাস পেতেই হবে এমন কিছু আমাদের প্রত্যাশার চাপ বাড়িয়ে দেই। সেটা না হলে অনেক সময় সে মানসিকভাবে মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করে।

পারস্পরিক আলোচনা ও মানসিক সাহস দিয়ে পাশে থাকার মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আত্মহত্যা বিষয়ে পাবনায় আরও বিস্তর গবেষণার দরকার বলে মনে করেন তিনি।

মানসিক বিষন্নতা ও হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় বলে মনে করেন চাটমোহর মহিলা ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক অনুপ কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, আত্মহত্যা একটা মানসিক রোগ।

একজন মানুষ যখন সে যা চায় সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে না, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তখন সে হতাশা বা বিষন্নতায় ভোগে। বর্তমানে আমাদের মাঝে দিন দিন ধৈর্য্যরে অভাব দেখা দিচ্ছে। বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে বা মানতে পারি না।

দীর্ঘদিন রোগশোকে আক্রান্ত, কোনো কাজে পরাজয় হওয়া, প্রেম-বিরহ, সম্পদ হারানো, পরীক্ষায় ব্যর্থতা। এসব কারণে মানুষের মাঝে হতাশা তৈরী হয়। এর বহি:প্রকাশ হিসেবে সে তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেবার মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পেতে চায়।

পাবনায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কেন এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক অনুপ কুমার কুন্ডু মনে করেন, যে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো বেশি প্রচার হওয়া, বেশি মানুষের মধ্যে জানাজানি হওয়াটা একটা কারণ। বলা যায় আত্মহত্যার বিষয়ে অনুপ্রেরণা।

অর্থাৎ একটা মানুষের মধ্যে যখন বিষন্নতা বিরাজ করে সে তখন ভাবে অমুক তো আত্মহত্যা করেছিল, আমিও করবো। আগের ঘটনাগুলো জানার কারণে সে সেখান থেকে আত্মহত্যার অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয়। সে যদি আত্মহত্যার বিষয়টা না জানতো তাহলে তার মধ্যে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা আসার কথা নয়। আর এখনকার মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ, এটাও কারণ।

প্রতিকার বিষয়ে তার পরামর্শ, নিজেদের পরিবারকে সময় দিতে হবে। সন্তানদের বুঝতে চেষ্টা করা। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে মিশছে, সেগুলো দেখতে হবে।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার কি সমস্যা সেগুলো জানার চেষ্টা করা এবং বন্ধুর মতো ভালবাসা দিয়ে সমাধােেনর পথ খুঁজে বের করা। সামাজিকভাবেও আমরা কারো পাশে দাঁড়াই না। কারো দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে সেটি মেটানোর চেষ্টা করিনা।

পরিবারের সবার মধ্যে ভালবাসা, বোঝাপড়ার অভাব আত্মহত্যার পেছনে অনেকটা দায়ী উল্লেখ করে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) মাসুদ আলম বলেন, আত্মহত্যায় মৃতদের মধ্যে বিষপান, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বেশি ঘটে।

কিছু চাওয়া, পাওয়া না পাওয়া এবং পারিবারিক বিরোধ ও মানসিক চাপ থেকেই আত্মহত্যা করে। আবার ছোট ঘটনা থেকেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

মাসুদ আলম বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহ, ডিজিটাল যুগে হাতে হাতে মোবাইল। মুঠোবন্দি শৈশব, কৈশোর, যৌবন। পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা উঠে গেছে। এজন্য পারিবারিক সৌহার্দ্যবোধ, ভালবাসা, সচেতনতা দরকার। সচেতনতা বাড়াতে বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে আমরাও বিভিন্ন সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি।