আজকের এই দিনে, ২৬ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি ও নাট্যকার বৃন্দাবন দাস। সেদিন না হয়েছিল গায়েহলুদ, না বেজেছিল সানাই। কনের গায়ে ছিল না বিয়ের গয়না বা নতুন শাড়ি। তবে দুজনেরই ছিল বুকভরা ভালোবাসা আর আশা। সেই আশা ও ভালোবাসায় ভর করে অনিশ্চিতের পথে পা বাড়িয়েছিলেন দুজন।
বিয়ের পর স্বজনদের তিরস্কার, অভিযোগ, আক্রোশে থমকে গিয়েছিল নবদম্পতি। বড়দের মতো অত হিসাব কি সেই বয়সে মেলানো যায়? মেলাতে পারেননি খুশি-বৃন্দাবন। কেবল পথই চলেছেন। চারপাশের মানুষের কাছ থেকে চলার সাহস পেয়েছিলেন। আজ যৌথ জীবনের ২৬ বছর পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমরা ভালোবাসতে ভুলে গেলাম। আড্ডাপ্রিয় দুজন মানুষ তখন কেবল বেঁচে থাকার চেষ্টা করতাম। নাটক, থিয়েটার, রাজনীতি, কাল কী খাব, কোথা থেকে বাসা ভাড়া দেব, এসব নিয়েই কেবল কথা হতো। ভালোবাসাকে বাক্সবন্দী করে বাঁচতে হবে, এমন পণ করে ছুটলাম দুজন।’
বন্ধুর সেই পথ পাড়ি দেওয়ার সময় মতের অমিল হতো দুজনের, কিন্তু কখনোই বিরোধ হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেকবার সংশয়ে পড়েছেন তাঁরা। কিন্তু কখনো সংঘাত হয়নি। শাহনাজ খুশি জানান, বিয়ের পর প্রিয় সম্পর্কগুলো একসময় বিশ্বাস হারায়, অচেনা হয়ে যায়, নিষ্ঠুর হয়ে যায়। এগুলোকে ভাগ্যের লিখন মনে করে সামনে এগিয়েছেন দুজন। বহুদিন না খেয়েও কেটেছে তাঁদের। তবু একসঙ্গে মাটি আঁকড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে গেছেন। সেই টানাপোড়েন কাটতে শুরু করে বিয়ের পাঁচ বছর পর। খুশি বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্যই সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে হয়েছে আমাদের। খেয়ে, পরে বেঁচে থাকার জন্য রুটিন করতে হয়েছে। প্রতিদিন নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে হয়েছে।’
বৃন্দাবন এখন ব্যস্ততম নাট্যকার, খুশিও ব্যস্ত অভিনেত্রী। অর্থাৎ দুজনই কর্মব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছেন। সংগ্রামের দিন ফুরিয়েছে তাঁদের। ফিরেছে ভালোবাসা দিন। এখন প্রতিদিন ভোরে হাত ধরে হাঁটতে যান তাঁরা। রং মিলিয়ে পোশাক পরেন। খুশি জানান, এখনো প্রায়ই তাঁদের অতীতের কথা মনে পড়ে। নিজেদের তাঁরা প্রশ্ন করেন, পুরোনো দিনগুলো কষ্টের না হলে আজকের দিন কি এ রকম হতো? মাঝেমধ্যে বলেন না কিছুই, কেবল শিশুর মতো কান্না করেন। খুশি বলেন, ‘আমাদের ২৬ বছর কেটে গেছে। কোনো উপহার, কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকার হয়নি। অনেক অপ্রাপ্তির মধ্যেও ভালোবাসা কখনো কমেনি।’
দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি, দুই ছেলেকে নিয়ে খুশি ও বৃন্দাবনের সুখের সংসার। এই ভালোবাসার পথ যেন আজীবন একই ছন্দে চলে, সে রকমই প্রত্যাশা তাঁদের। তবে জীবনে প্রথম কোনো বিবাহবার্ষিকীতে খুশি-বৃন্দাবন দুজন দুই জায়গায়। খুশি দেশে, বৃন্দাবন ভারতে। ছেলে দিব্য জ্যোতি অভিনয় করছে বঙ্গবন্ধুর জীবনীচিত্রে। সন্তানের সঙ্গে শুটিংয়ে গেছেন বাবা বৃন্দাবন দাস। এই দম্পতির জন্য দিনটি যতটা না দুঃখের, তারও চেয়ে অধিক সুখের।
প্রিন্ট