ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মধুখালীতে ঘরের অভাবে ২৫ বছর অন্যের ঘরে বসবাস করছে কৃুষ্ণা দত্ত

“আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুল পুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি”। কবি জসিম উদ্ দীন এর কবিতার মতই মিলে গেছে কুষ্ণা দত্ত’র জীবন।

মানবতার বাতিঘর, সাম্যতার প্রতিক, উন্নয়নের আলো জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় হাজার হাজার ভূমি ও গৃহহীন মানুষ জমি ও ঘর পেলেও ষাটোর্ধ্ব বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কুষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)র ভাগ্যে জোটেনি একটি নতুন ঘর। প্রচন্ড শীত ও বেগবান ঝড়ের মধ্যে মৃত্যুঝুকি মাথায় নিয়ে জরাজীর্ন হেলে যাওয়া পরে ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে সে।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কামারখালী বাজারের দক্ষিন পাশ সংলগ্ন একটি ভাঙ্গা ঘরে তাঁর বসবাস। ঘরের খুঁঠি ভেঙ্গে নুয়ে পড়া বেড়া নেই বললেই চলে, দরজা ভাংগা, জানালা পুরানো কাপড় দিয়ে মুড়ানো ঘরের চালা অধিকাংশ জায়গা ভাঙ্গা নিচ থেকে আকাশ দেখা যায়। বৃষ্টিতে পানি পড়ে গায়ের উপর । আর্বজনা স্তুপের জরাজীর্ন ঘরে কুষ্ণা দত্ত (কালি দিদি) বাস করে।

জানা যায়, বাগাট ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের রবীন্দ্র নাথ দে’ র কন্যা কৃষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)’র সাথে ঝিনাইদহ গ্রামের দিলিপ দত্তের সাথে বিবাহ হয়। একটি কণ্যা সন্তান জন্ম নিলে প্রায় ২৫ বছর আগে কন্যাসহ কৃষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)কে ফেলে স্বামী দিলিপ কুমার চলে যায়।

আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা

কৃষ্ণা দত্ত জানান, স্বামী চলে যাওয়ার পর সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। তখন সমাজের সৎ ও মহৎ হৃদয়ের মানুষ কামারখালী বাজারের মৃত মোতাহারুল ইসলাম খোকন ভেন্ডার তাঁর ঘরে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেয়। মেয়ে বিয়ে হয়েছে, সে জামাই এখানে থাকে। আমার রান্না করার শক্তি নেই। মেয়ের অস্বচ্ছল সংসারে যা জোটে তাই দিয়ে দিন চলে।

কৃষ্ণা দত্ত আরও জানান,রোগ শোক আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকি। দু:চিন্তা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। মালিক যদি ঘর থেকে নামিয়ে দেয় তাহলে রাস্তায় পড়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় হবেনা। শীতে রাতে পুরানো কাপড় দিয়ে ভাঙ্গা জানালা বন্ধ করা হয়। ভাবছি এবার ঝড়ের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারব কিনা জানিনা। বৃষ্টি এলে ঘর জলে ভেসে যায়। সারারাত বসে থাকি। এত কস্ট এ বয়সে আর সহ্য হয়না। তাই ভগবান নিয়ে গেলে বেঁচে যেতাম।

কান্না জড়িত কন্ঠে কৃষ্ণা দত্ত বলেন, আমার খোঁজ কেউ নেই না। পুরানো ঘরে টিনে মরিচা ধরে খসে পড়ছে। বেড়া নেই বললেই চলে। যখন তখন কুকুর বিড়াল ঢুকে পড়ে। মল ত্যাগের কোন ব্যবস্থা নেই। এভাবে বেঁচ থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল।

তাঁর কণ্যা ও জামাই বলেন, মাকে ঘর দিয়ে দিব এমন সামর্থ্য নেই আমাদের । যদি প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেয় তাহলে আমার বাড়ির জমি তাঁকে লিখে দেব।

আরও পড়ুনঃ চব্বিশ কেজির দুই বোয়ালের দাম ত্রিশ হাজার টাকা

আশার সুরে কৃষ্ণা দত্ত বলেন, শুনেছি বঙ্গবন্ধুর কন্যা সবাইকে জায়গা আর ঘর দিচ্ছেন। যদি আমাকে একটি ঘর জায়গা দিত তাহলে জীবনের বাকি দিনগুলো নি:চিন্তায় কাটাতে পারতাম।
কামারখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃদ্ধ হওয়ায় কৃষ্ণা দত্ত আশ্রয়ন প্রকল্পে যেতে রাজি হচ্ছে না। আবার তাঁর নিজের কোন জমি নেই। তাঁর জামাইকে বলা হয়েছে তাঁকে কিছু জমি লিখে দেবার জন্য। দিলে সে যাতে জমি ঘর পাই আমরা সরকারের কাছে তার জন্য আবেদন করব।

প্রতিবেশিরা জানান, কৃষ্ণা দত্ত কালি দিদির জীবন চিত্র জসিমউদ্দিনের আসমানী কবিতাকেও হার মানাবে। প্রতিবেশিরা ভুমি ও গৃহহীন কৃষ্ণা দত্তকে জমি ও ঘর দেবার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

মধুখালীতে ঘরের অভাবে ২৫ বছর অন্যের ঘরে বসবাস করছে কৃুষ্ণা দত্ত

আপডেট টাইম : ০৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২
সাগর চক্রবর্ত্তী, মধুখালী (ফরিদপুর ) প্রতিনিধিঃ :

“আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুল পুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি”। কবি জসিম উদ্ দীন এর কবিতার মতই মিলে গেছে কুষ্ণা দত্ত’র জীবন।

মানবতার বাতিঘর, সাম্যতার প্রতিক, উন্নয়নের আলো জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় হাজার হাজার ভূমি ও গৃহহীন মানুষ জমি ও ঘর পেলেও ষাটোর্ধ্ব বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কুষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)র ভাগ্যে জোটেনি একটি নতুন ঘর। প্রচন্ড শীত ও বেগবান ঝড়ের মধ্যে মৃত্যুঝুকি মাথায় নিয়ে জরাজীর্ন হেলে যাওয়া পরে ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে সে।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কামারখালী বাজারের দক্ষিন পাশ সংলগ্ন একটি ভাঙ্গা ঘরে তাঁর বসবাস। ঘরের খুঁঠি ভেঙ্গে নুয়ে পড়া বেড়া নেই বললেই চলে, দরজা ভাংগা, জানালা পুরানো কাপড় দিয়ে মুড়ানো ঘরের চালা অধিকাংশ জায়গা ভাঙ্গা নিচ থেকে আকাশ দেখা যায়। বৃষ্টিতে পানি পড়ে গায়ের উপর । আর্বজনা স্তুপের জরাজীর্ন ঘরে কুষ্ণা দত্ত (কালি দিদি) বাস করে।

জানা যায়, বাগাট ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের রবীন্দ্র নাথ দে’ র কন্যা কৃষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)’র সাথে ঝিনাইদহ গ্রামের দিলিপ দত্তের সাথে বিবাহ হয়। একটি কণ্যা সন্তান জন্ম নিলে প্রায় ২৫ বছর আগে কন্যাসহ কৃষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)কে ফেলে স্বামী দিলিপ কুমার চলে যায়।

আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা

কৃষ্ণা দত্ত জানান, স্বামী চলে যাওয়ার পর সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। তখন সমাজের সৎ ও মহৎ হৃদয়ের মানুষ কামারখালী বাজারের মৃত মোতাহারুল ইসলাম খোকন ভেন্ডার তাঁর ঘরে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেয়। মেয়ে বিয়ে হয়েছে, সে জামাই এখানে থাকে। আমার রান্না করার শক্তি নেই। মেয়ের অস্বচ্ছল সংসারে যা জোটে তাই দিয়ে দিন চলে।

কৃষ্ণা দত্ত আরও জানান,রোগ শোক আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকি। দু:চিন্তা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। মালিক যদি ঘর থেকে নামিয়ে দেয় তাহলে রাস্তায় পড়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় হবেনা। শীতে রাতে পুরানো কাপড় দিয়ে ভাঙ্গা জানালা বন্ধ করা হয়। ভাবছি এবার ঝড়ের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারব কিনা জানিনা। বৃষ্টি এলে ঘর জলে ভেসে যায়। সারারাত বসে থাকি। এত কস্ট এ বয়সে আর সহ্য হয়না। তাই ভগবান নিয়ে গেলে বেঁচে যেতাম।

কান্না জড়িত কন্ঠে কৃষ্ণা দত্ত বলেন, আমার খোঁজ কেউ নেই না। পুরানো ঘরে টিনে মরিচা ধরে খসে পড়ছে। বেড়া নেই বললেই চলে। যখন তখন কুকুর বিড়াল ঢুকে পড়ে। মল ত্যাগের কোন ব্যবস্থা নেই। এভাবে বেঁচ থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল।

তাঁর কণ্যা ও জামাই বলেন, মাকে ঘর দিয়ে দিব এমন সামর্থ্য নেই আমাদের । যদি প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেয় তাহলে আমার বাড়ির জমি তাঁকে লিখে দেব।

আরও পড়ুনঃ চব্বিশ কেজির দুই বোয়ালের দাম ত্রিশ হাজার টাকা

আশার সুরে কৃষ্ণা দত্ত বলেন, শুনেছি বঙ্গবন্ধুর কন্যা সবাইকে জায়গা আর ঘর দিচ্ছেন। যদি আমাকে একটি ঘর জায়গা দিত তাহলে জীবনের বাকি দিনগুলো নি:চিন্তায় কাটাতে পারতাম।
কামারখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃদ্ধ হওয়ায় কৃষ্ণা দত্ত আশ্রয়ন প্রকল্পে যেতে রাজি হচ্ছে না। আবার তাঁর নিজের কোন জমি নেই। তাঁর জামাইকে বলা হয়েছে তাঁকে কিছু জমি লিখে দেবার জন্য। দিলে সে যাতে জমি ঘর পাই আমরা সরকারের কাছে তার জন্য আবেদন করব।

প্রতিবেশিরা জানান, কৃষ্ণা দত্ত কালি দিদির জীবন চিত্র জসিমউদ্দিনের আসমানী কবিতাকেও হার মানাবে। প্রতিবেশিরা ভুমি ও গৃহহীন কৃষ্ণা দত্তকে জমি ও ঘর দেবার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।


প্রিন্ট