“আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুল পুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি”। কবি জসিম উদ্ দীন এর কবিতার মতই মিলে গেছে কুষ্ণা দত্ত’র জীবন।
মানবতার বাতিঘর, সাম্যতার প্রতিক, উন্নয়নের আলো জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় হাজার হাজার ভূমি ও গৃহহীন মানুষ জমি ও ঘর পেলেও ষাটোর্ধ্ব বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কুষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)র ভাগ্যে জোটেনি একটি নতুন ঘর। প্রচন্ড শীত ও বেগবান ঝড়ের মধ্যে মৃত্যুঝুকি মাথায় নিয়ে জরাজীর্ন হেলে যাওয়া পরে ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে সে।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কামারখালী বাজারের দক্ষিন পাশ সংলগ্ন একটি ভাঙ্গা ঘরে তাঁর বসবাস। ঘরের খুঁঠি ভেঙ্গে নুয়ে পড়া বেড়া নেই বললেই চলে, দরজা ভাংগা, জানালা পুরানো কাপড় দিয়ে মুড়ানো ঘরের চালা অধিকাংশ জায়গা ভাঙ্গা নিচ থেকে আকাশ দেখা যায়। বৃষ্টিতে পানি পড়ে গায়ের উপর । আর্বজনা স্তুপের জরাজীর্ন ঘরে কুষ্ণা দত্ত (কালি দিদি) বাস করে।
জানা যায়, বাগাট ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের রবীন্দ্র নাথ দে’ র কন্যা কৃষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)’র সাথে ঝিনাইদহ গ্রামের দিলিপ দত্তের সাথে বিবাহ হয়। একটি কণ্যা সন্তান জন্ম নিলে প্রায় ২৫ বছর আগে কন্যাসহ কৃষ্ণা দত্ত (কালি দিদি)কে ফেলে স্বামী দিলিপ কুমার চলে যায়।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা
কৃষ্ণা দত্ত জানান, স্বামী চলে যাওয়ার পর সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। তখন সমাজের সৎ ও মহৎ হৃদয়ের মানুষ কামারখালী বাজারের মৃত মোতাহারুল ইসলাম খোকন ভেন্ডার তাঁর ঘরে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেয়। মেয়ে বিয়ে হয়েছে, সে জামাই এখানে থাকে। আমার রান্না করার শক্তি নেই। মেয়ের অস্বচ্ছল সংসারে যা জোটে তাই দিয়ে দিন চলে।
কৃষ্ণা দত্ত আরও জানান,রোগ শোক আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকি। দু:চিন্তা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। মালিক যদি ঘর থেকে নামিয়ে দেয় তাহলে রাস্তায় পড়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় হবেনা। শীতে রাতে পুরানো কাপড় দিয়ে ভাঙ্গা জানালা বন্ধ করা হয়। ভাবছি এবার ঝড়ের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারব কিনা জানিনা। বৃষ্টি এলে ঘর জলে ভেসে যায়। সারারাত বসে থাকি। এত কস্ট এ বয়সে আর সহ্য হয়না। তাই ভগবান নিয়ে গেলে বেঁচে যেতাম।
কান্না জড়িত কন্ঠে কৃষ্ণা দত্ত বলেন, আমার খোঁজ কেউ নেই না। পুরানো ঘরে টিনে মরিচা ধরে খসে পড়ছে। বেড়া নেই বললেই চলে। যখন তখন কুকুর বিড়াল ঢুকে পড়ে। মল ত্যাগের কোন ব্যবস্থা নেই। এভাবে বেঁচ থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল।
তাঁর কণ্যা ও জামাই বলেন, মাকে ঘর দিয়ে দিব এমন সামর্থ্য নেই আমাদের । যদি প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেয় তাহলে আমার বাড়ির জমি তাঁকে লিখে দেব।
আরও পড়ুনঃ চব্বিশ কেজির দুই বোয়ালের দাম ত্রিশ হাজার টাকা
আশার সুরে কৃষ্ণা দত্ত বলেন, শুনেছি বঙ্গবন্ধুর কন্যা সবাইকে জায়গা আর ঘর দিচ্ছেন। যদি আমাকে একটি ঘর জায়গা দিত তাহলে জীবনের বাকি দিনগুলো নি:চিন্তায় কাটাতে পারতাম।
কামারখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃদ্ধ হওয়ায় কৃষ্ণা দত্ত আশ্রয়ন প্রকল্পে যেতে রাজি হচ্ছে না। আবার তাঁর নিজের কোন জমি নেই। তাঁর জামাইকে বলা হয়েছে তাঁকে কিছু জমি লিখে দেবার জন্য। দিলে সে যাতে জমি ঘর পাই আমরা সরকারের কাছে তার জন্য আবেদন করব।
প্রতিবেশিরা জানান, কৃষ্ণা দত্ত কালি দিদির জীবন চিত্র জসিমউদ্দিনের আসমানী কবিতাকেও হার মানাবে। প্রতিবেশিরা ভুমি ও গৃহহীন কৃষ্ণা দত্তকে জমি ও ঘর দেবার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।
প্রিন্ট