মোঃ নূর ই আলম (কাজী নূর)ঃ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকার, ভোটের অধিকার, মানবিক ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার একটি লক্ষ্য নিয়ে সেদিন ছাত্র – জনতার গণঅভ্যুত্থান গড়ে উঠেছিল। বিগত ১৬ বছরে এ দেশের মানুষ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করেছিল। কিন্তু তা হয়নি। দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির লক্ষ্য অবিচল থাকবে।’ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে অনুষ্ঠিত পৃথক দুটি বিজয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক নার্গিস বেগম এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক নার্গিস বেগম আরো বলেন, ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মত্যাগ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বানে দেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনার নির্মম নির্যাতন, হত্যা নিপীড়ন, অত্যাচার, জুলুম ও অসম্মানের শিকার হয়েও যারা বিএনপি’র পাশে সব সময় ছিল তাদের আত্মত্যাগ কখনো বিফলে যাবে না। জীবন বাজি রেখে যারা দেশ গঠন ও দল গঠনে কাজ করেছেন তারা অমর হয়ে থাকবেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। ফলে সমাজ বিরোধী কোনো কার্যকলাপ কেউ করে থাকলে তার জায়গা বিএনপিতে হবে না। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল আমরা তা চাইনা। এদেশের মানুষ একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের জন্য দীর্ঘ এত বছর লড়াই সংগ্রাম করেছে। সেই সংগ্রাম যেন ব্যর্থ না হয়। এক কথায় ফ্যাসিবাদের দোসররা যা করেছে আগামীতে তা কেউ করতে পারবে না।’

অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘যারা সমাজে রামরাজত্ব কায়েম করেছে তাদের জায়গা বিএনপিতে হবে না। এমনকি যারা তাদের আশ্রয় দিবে তাদের জায়গাও বিএনপিতে হবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ জনগণের বন্ধু হয়ে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সেই প্রত্যাশা যাতে কখনো নিরাশায় পরিণত না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনদাবিকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।’
যশোর নগর ও সদর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে স্থানীয় মুনশি মেহেরুল্লাহ ময়দান (টাউন হল) ও পালবাড়ী ভাস্কর্যের মোড়ে অনুষ্ঠিত পৃথক দুটি বিজয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ দুটিতে নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তৃতা করেন যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার পান্না, যুবদল নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবি, তানভীর রায়হান তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোস্তফা তরফদার রয়েল, ছাত্রদল নেতা মাসুদ কাইজার ইফতি, পিকুল হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন যশোর নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাসুম। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন অধ্যাপক আমিনুর রহমান পিন্টু।
যশোর মুনশি মেহেরুল্লাহ ময়দানে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এখানে সকাল ১০টা থেকে সমাবেশ শুরু হয়ে তা শেষ হয় বেলা ১২টায়। পরে মুনশি মেহেরুল্লাহ ময়দান থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদের ছবি সম্বিলিত ফেস্টুন, ব্যানার, জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা, ধানের শীষের তোড়া, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের ছবি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি শোভা পায়।
শোভাযাত্রাটি শহরের দড়াটানা হয়ে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হয়ে পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড়ে অনুষ্ঠিত বিজয় সমাবেশে এসে মিলিত হয়। সমাবেশ শেষে যশোর নগর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদ উভয় সমাবেশের সভাপতি হিসেবে দিনের প্রথম ভাগের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
প্রিন্ট