মোঃ নূর ই আলম (কাজী নূর):
হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ/পাখিটি ছাড়িল কে; অথবা পরের জায়গা পরের জমিন/ঘর বানাইয়া আমি রই/আমি তো সেই ঘরের মালিক নই; বা সর্বনাশা পদ্মা নদী/তোর কাছে শুধাই/বল আমারে তোর কি রে আর কূল কিনারা নাই এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের লোকসংগীতের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন মরমি গায়ক আবদুল আলীম। লোকসংগীত ছাড়াও পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদী, ইসলামি গানের শিল্পী হিসেবে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আজ ২৭ জুলাই, লোকসংগীতশিল্পী আবদুল আলীমের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী।
আবদুল আলীম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অভাব অনটনের কারনে গানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তিনি বেশিদূর এগুতে পারেননি। তবে পাঠশালায় পড়ার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে সংগীতের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। পরে স্থানীয় ওস্তাদ সৈয়দ গোলাম আলীর কাছে সংগীতে তালিম গ্রহণ করেন। অল্পদিনে তার দরাজ কণ্ঠের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় যেয়ে আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে ১৯৪৩ সালে মেগাফোন কোম্পানিতে দুটি গান রেকর্ড করেন। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের পর আবদুল আলীম ঢাকা এসে বেতার শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ঢাকার সংগীত মহাবিদ্যালয়ের লোকগীতি বিভাগে তিনি কিছুদিন অধ্যাপনাও করেন। বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি মাধ্যমে গান গেয়ে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
আবদুল আলীম পেশাগত জীবনে ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি কলকাতা, বার্মা, চীন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করে বিদেশিদের কাছে বাংলা লোকসংগীতের পরিচয় তুলে ধরেন। আবদুল আলীম মারফতি, মুর্শিদী গানে অদ্বিতীয়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে গান করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদক এবং ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়া ১৯৭৫ সালের ‘সুজন সখী’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ গায়কের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। স্বাধীনতার তিন বছর পর ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান আবদুল আলীম।
প্রিন্ট