আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমন ধানের দরপতনে কৃষকেরা হতাশ।সার-বীজ- টনাশকসহ উপকরণ ও শ্রমিকের মুল্য বৃদ্ধিতে এবার উৎপাদন খরচ বেশী।পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলনও কম।তার পরেও বাজারে ধানের দরপতন। সবমিলিয়ে আমন চাষিদের স্বপ্ন উবে গেছে। গত বছর এ সময় প্রতি মণ ধানের বাজার ছিল এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছরের তুলনাই চলতি বছর প্রতি মণে ২০০ টাকা কম পাচ্ছে কৃষক।
এদিকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাসের পর মাস চেষ্টার ফসল আমন কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। নতুন ধান ঘরে উঠলেও এই অঞ্চলের কৃষকের মনে নেই কোনো উৎসাহ। ডিসেম্বর মাস সার-কীটনাশকসহ দোকানে দোকানে চলছে হালখাতা। বর্তমানে আমন ধানের দর বাজারে একেবারে নিম্নমুখী। এতে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে। বাজারে দাম কম হওয়াই হতাশায় ভুগছেন চাষিরা।
জানা গেছে,আমনের কাটা-মাড়াইয়ের শুরুতেই সরকার আমনের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি মণ এক হাজার ৩৬০ টাকা। সরকারিভাবে আমন কেনাও শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দর বাজারে প্রভাব পড়ছে না। বর্তমানের বাজারে প্রতি মণ ধান এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ আমন মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা, আতপ চাল ৪৯ টাকা এবং ধান ৩৪ টাকা দরে কিনবে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি, এবং এই ধান ও চাল সংগ্রহ এ বছরে নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে, যার লক্ষ্যমাত্রা মোট ৭ লাখ টন। তবু সরকারের দেওয়া দরের প্রভাব পড়ছে না বাজারে। এক সপ্তহের ব্যবধানে বাজারে আবারও ধানের দাম নিম্নমুখী। এতে বড় লোকসানের শঙ্কায় তারা।
রাজশাহীর তানোরের পাঁচন্দর ইউপির কৃষক কামরুল জানান, প্রতি বিঘায় গড়ে ধান ফলন হচ্ছে কেজির মাপে ১৪-১৬ মণ করে। গত বছর হয়েছিল ১৮-২০ মণ। বিঘাপ্রতি উৎপাদন কমেছে, আবার বাজারে দামও কমেছে। তানোরের বাধাইড় ইউপির কৃষক আজাহার। তিনি ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চলতি মৌসুমে আমন চাষাবাদ করেছিলেন। মাঠে ধান ভালো থাকায় বুকে অনেক স্বপ্ন বেঁধেছিলেন তিনি।
জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। সে হিসাব করে দেখেন তাঁর বিঘা প্রতি ১৭ মণ করে ফলন হয়েছে। আর জমির মালিককেই দেওয়া লাগবে প্রতি বিঘায় ১০ মণ ধান। যেটুকু থাকে বাজারে ধানের দরের যে অবস্থা তাতে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন না। গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউপির চাঁদলায় গ্রামের কৃষক তসিকুল বলেন, চলতি বছর কীটনাশক প্রয়োগে আমন উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। এমনিতেই ফলন কম হচ্ছে তার পরে বাজারে ধানের দাম পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে কীটনাশক দোকানে হালখাতা। ধান বিক্রি করে পরিশোধ করা লাগবে। তাই ধান বিক্রি করতেই হবে। পবার বাগধানীর চাষি শামিম জানান, হঠাৎ করে ধানের দাম মণে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে আরও ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের ওপরে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, ডিসেম্বর মাসে ধানের দাম একটু কম থাকে। তাই চাষিদের একটু ধৈর্য ধরে ধান বিক্রি করতে অনুরোধ করেন তিনি।
প্রিন্ট

মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু 
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি 




















