রুমার আব্বা ঘরে চাল শেষ। সকালে রান্নার পরে চালের ডিব্বা একবারে খালি হইয়া যাইবো। জলিল মিয়া ভারী গলায় বললো, “কয়দিন ধরে শরীরটা খুব খারাপ। তিন দিন আগে মেম্বারের কাছে ভোটার আইডি জমা দিলাম সরকারি ত্রাণের লাইগে তারও কোনো খবর নাই।
এদিকে কামেও যাইতে পারছি না। কাল সকালে রিক্সা লইয়া বাইরামু। ” জলিল মিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বললো, “পোলা, মাইয়া দুইডা ঘুমায় পড়ছে?” হামিদা ভারী গলায় বললো, “হুম,চলেন আমরাও ঘুমাই। সকালে যদি আপনি আবার কাজে যাও। “হুম চলো।” হামিদা বিছানায় শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ জলিল মিয়ার হাতের সাথে হামিদার হাতের স্পর্শ লাগলো। হামিদা সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো। থতমত খেয়ে হামিদা বললো, “জ্বরে দেখি তুমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে।” জলিল মিয়া কাতর গলায় বললো, “হুম, কয়দিন ধরে গলাও বেশ ব্যাথা।
” কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জলিল মিয়া আবার বললো, “রুমার মা,তুমি কাল সকালে একটু মেম্বারে বাড়ি যাইওতো।” “আচ্ছা যামুনি। আপনি ঘুমান ওহন” ভোর হয়ে গেছে।
চারপাশে পাখি ডাকছে। জলিল মিয়া তখনো ঘুমিয়ে আছে। গায়ে জ্বর। জলিল মিয়াকে না ডেকেই হাতের কাজ শেষ করে মেম্বারের বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো হামিদা।
রাস্তায় মানুষ বলা বলি করছে মেম্বারের বাড়ি পুলিশ। হামিদা মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে শুনতে পেলো সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎ করার কারনে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে মেম্বারকে।
তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে আসলো হামিদা। ঘরে ঢুকেই হামিদা দেখলো, জলিল মিয়া রক্ত বমি করতেছে। শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হামিদা কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। স্বামীকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে মানুষ ডাকছে। কেউ তাঁদের কাছে যাচ্ছে না। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
জলিল মিয়া বারবার শুধু বলছে, “আমার শ্বাস নিতি খুব কষ্ট হইতেছে হামিদা। আমারে একটু অক্সিজেন দে।” কয়েকবার বলার পরে হঠাৎ করে জলিল মিয়ার নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো। মুহুর্তে যেন জলিল মিয়ার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো। হামিদা তখন চিৎকার দিয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো। জলিল মিয়ার নিথর দেহ জড়ায় ধরে হাউ মাউ করে কান্না করে বলছে, “আমার এখন কি হবে? আমার তো আর কিছুই রইলো না!”
প্রিন্ট