রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ
আর্থিক লাভের নিশ্চয়তা ও বহুবিধ সুযোগ-সুবিধায় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও নাটোরের লালপুরে তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত বছর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। ১ বছরের ব্যবধানে ১৪ হেক্টর জমি বৃদ্ধি পেয়ে এ বছর তামাক চাষ হয়েছে ৫৯ হেক্টর জমিতে। তবে বাস্তবে তামাক চাষকৃত জমির পরিমাণ আরো বেশি বলে জানিয়েছেন উপজেলার তামাক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত বুধবার (৯ এপ্রিল) তামাক পোড়ানোর সময় আড়বাব ইউনিয়নের বড়বড়িয়া গ্রামের তামাক চাষী মোঃ রানা বলেন, গত বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলাম। এ বছর ৬ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। তামাক চাষে লোকসানের কোন সম্ভাবনা নেই। কোম্পানির লোক এসে সার, বীজ, কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়। আবার উৎপাদন শেষে ভালো দামে কোম্পানি কিনে নেয়।
চংধুপইল ইউনিয়নের কৃষক মাজন খান বলেন, এখন আখ চাষ করে জমিতে মসুর, সরিষা, গম চাষ করা যাচ্ছে না। ধান চাষ করে লোকসান হয়েছে। গত বছর ৩০ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করে লাভ হওয়ায় এ বছর আবাদ বাড়িয়েছি। সালামপুর গ্রামের কৃষক শাহিন আলম জানান, তামাক চাষে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি। গত বছর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে আড়াই বিঘা জমিতে ২২৬ টাকা কেজি দরে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকার তামাক বিক্রি করেছি। ৩ মাসের স্বল্পকালীন এ আবাদে প্রচুর লাভ। এ বছর ৯ বিঘা জমিতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে।
এছাড়া কোম্পানি থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মূল্যের উন্নত মানের ৮ বস্তা সার, কীটনাশক ও তামাক পোড়ানোর ঘর তৈরি বাবদ ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। বিনা সুদে সার কেনার জন্য একর প্রতি ৯ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অন্য আবাদে প্রয়োজনের সময় কৃষি অফিসারদের পাওয়া না গেলেও তামাক অফিসারদের যেকোনো সময় পাওয়া যায়। এ এলাকায় এখন নাসিরুল, সুজন, হাসিবুল হাসান হাইজাম সহ অনেকেই তামাক চাষ করছেন।
তামাক চাষে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাসের বিষয়ে অবহিত করলে কৃষকরা বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না বলে সময়ের প্রত্যাশাকে জানান।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির বনপাড়া সার্কেল কর্মকর্তা ও অন্যান্য মাঠকর্মীরা চাষীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, তামাক চাষে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা ও অধিক লাভের নিশ্চয়তা দেওয়ায় ক্ষতিকর এ আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সভা সমাবেশ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রধান সমন্বয়কারী ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, তামাক চাষে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। টোব্যাকো এটলাসের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত কারণে মারা যায় এবং চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রোগতত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানান, তামাকের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, বক্ষব্যাধি ও ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তাছাড়া তামাকজনিত অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।
প্রিন্ট